বানভাসি বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসুন
১১ আগস্ট ২০২৩, ১১:২৪ পিএম | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
চট্টগ্রামাঞ্চলে বৃষ্টির পানিতে বিপদগ্রস্ত মানুষের উপকারে এগিয়ে আসা প্রতিটি মুসলমানের ইমানী দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তাদের (ধনবানদের) সম্পদের মধ্যে অসহায় ও অভাবীদের অধিকার রয়েছে’। (সুরা যারিয়াত : ১৯)। আল্লাহর ক্ষমতাকে স্বীকার করে তাঁর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করতে হবে। সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পৃথিবী গড়তে হলে আল্লাহর রহমতের বিকল্প নেই। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতিব এসব কথা বলেন।
গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব প্রিন্সিপাল মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, নিজেদের সুরক্ষিত রাখা, বিশ্ব বৈচিত্র্যের ভারসম্য রক্ষার জন্য উচ্চমানসম্পন্ন প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নানাবিধ টেকনোলজির জালে নিজেদের আবদ্ধ করে রেখেছি। ভূগর্ভ থেকে স্থল ও জলে এমনকি মহাকাশেও স্থাপন করেছি আগাম বার্তা প্রদানে সক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন যন্ত্রদানব। কিন্তু একটিবারও কি চিন্তা করেছি! কোনো কিছুই আমাদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম নয়, যদি না মহান ¯্রষ্টার ইচ্ছা হয়। আমাদের সকল শক্তি, বুদ্ধি, চিন্তা, পরিকল্পনা যেখানে শেষ রাব্বুল আলামীনের ক্ষমতা সেখান থেকে শুরু। নিজেদের তৈরি সুরক্ষা যন্ত্রের ওপর ভরসা করতে গিয়ে আমরা প্রকৃত ভরসাস্থল সম্বন্ধে অজ্ঞতার আধারে ডুবতে বসেছি। অথচ যিনি এসকল কিছু সৃষ্টি করলেন তার থেকে বেশি সুরক্ষা প্রদান আর কে করতে পারে? তার থেকে বেশি আগাম বার্তা দিয়ে সতর্ককেই বা করতে পারবে? আমরা ধীরে ধীরে তাঁর (আল্লাহর) ক্ষমতাকে ভুলতে বসেছি। নিজেদের বুদ্ধিমত্তাকে প্রধান্য দিচ্ছি তাঁর পরিকল্পনার ঊর্ধ্বে। বস্তুত তিনিই স্বমহিমায় মহিমান্বিত, মহাপরাক্রমশালী, সকল ক্ষমতার মালিক। জ্ঞানীদের উচিত মহান রবের শ্রেষ্টত্বের ঘোষণা দিয়ে, তার বিধানসমূহ আঁকড়ে ধরে পরিবার থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামের নীতি-নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা। তাহলেই কেবল মুক্তি মিলবে, অন্যথায় ক্রমাগত বিপর্যয়ে আমরা নিষ্পেষিত হবো। খতিব বলেন, কেবল পরিবার কিংবা সমাজ নিয়ে ভাবলে চলবে না। সমগ্র বিশ্ব আমাদের কৃতকর্মের দরুন প্রভাবিত। যখন মুহূর্তের মধ্যে বিশ্ব সংবাদ পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ রয়েছে তখন কেবল নিজ গন্ডির ভালো-মন্দের চিন্তায় মগ্ন থাকা নিতান্তই বোকামি। ইতিহাস পড়লে দেখবেন আল্লাহর অসন্তষ্টির কারণে যখন কোন জাতীর ওপর গজব নাজিল হতো তখন কেবল পাপিষ্ঠরাই নয় বরং তাদের সাথে মিশে থাকা ইমানদারগণও গজবে নিপতিত হতো। সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য কেবল নিজে নয় সকলকে পরিশুদ্ধ হতে হবে। আল্লাহর আজাব ও গজব থেকে রক্ষার জন্য সমগ্র বিশ্ব নিয়ে গবেষণা করতে হবে। বহির্বিশ্বের দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন আল্লাহর গজব কিভাবে ক্রমশ আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। চীনের ভয়াবহ বন্যায় দিশেহারা মানুষ, ভারতে ভূমিধস, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে মেরুঅঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে, প্রচ- তাপদাহে দিশেহারা পশ্চিমা দেশগুলা, আমাজন জঙ্গল ক্রমশই তার বৈশিষ্ট হারিয়ে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের মাউই দ্বীপে ভয়াবহ দাবানল থেকে সৃষ্ট অগ্নিকা-ে শতশত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। একই সাথে প্রবল ঘূর্নিঝড় হওয়ায় দ্রুততরা সাথে ছড়িয়ে পরছে লোকালয়ের পর লোকালয়। সেখানকার জলবায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বৃদ্ধ ও শিশুরা শ্বাসকষ্টে ভুগে মৃত্যুরবণ করছে, বাঁচার জন্য পানিতে ঝাপ দিয়েও শেষ রেহাই হচ্ছে না। বিভিষিকাময় এক পরিস্থিতির কবলে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। অথচ সেখানকার বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরপাত্তার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি ছিল, সুরক্ষার জন্য পূর্বাভাস প্রযুক্তির অভাব ছিল না। আল্লাহর আজাবের কাছে আজ তারা নিতান্তই অসহায়। এসবই মানুষের নিজেদের কৃতকর্মের ফল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেনÑ কল্যাণ যা তোমার হয় তা আল্লাহর নিকট হতে এবং অকল্যাণ যা তোমাদের হয় তা তোমার নিজের কারণে (সূরা আন নিসা: ৭৯)। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন যেÑ আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে ৯৫০ বছর অবস্থান করেছিল। অতঃপর প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করে। কারণ তারা ছিল চরম সীমালঙ্গনকারী (সূরা আনকাবুত : ১৪)। খতিব বলেন, আমাদের দেশে কতটা নিরাপদ একটু ভাবুন। শতশত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে ক্ষুদ্র মশার কারণে। একটু ভাবুনতো কোনো আগ্নেয়াস্ত্র, ক্ষেপনাস্ত্র কিংবা ধাতব অস্ত্র নয়, সামান্য মশার উসিলায় শতশত মানুষের প্রাণ নিয়ে নিচ্ছেন ¯্রষ্টা। যেখানে আপনি আমি নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য কত শত পরিকল্পনা করছি, নানাবিধ ডিভাইস, প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। মশা নিধনের জন্য ও মশার হাত থেকে রক্ষার জন্য ঘরে-বাইরে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছি। সকল কিছুকে উপেক্ষা করে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে কার ইশারায়? এডিসের কবলে প্রাণহানির ঘটনা যেন অভ্যাসে রূপ নিয়েছে। কেন এই আজাব আমাদের ঘিরে রেখেছে। একটার পর একটা বালা-মুছিবত আমাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। হে দুনিয়ার মানুষ! চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাও, যে আল্লাহ ক্ষুদ্র মশা দিয়ে তোমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে সক্ষম, সে আল্লাহ যদি তাঁর রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন তা থেকে রেহাই পাওয়ার মতো কি কোনো সুরক্ষা কবজ তোমাদের নিকট রয়েছে? ক্ষমতার মসনদে বসে যদি ভাবো আমি নিরাপদে রয়েছি তাহলে বোকামি বৈ কিছুই না। নিশ্চই নমরুদের ভয়াবহ ও লজ্জাস্কর পতন ও মৃত্যুর কথা সকলেরই জানা আছে। একটি মশা কীভাবে তাকে ক্ষমতার শীর্ষ থেকে ভূপাতিত করেছিল। নমরুদের কোনো ক্ষমতাই তাকে সেদিন রক্ষা করতে পারেনি। দুনিয়াবি ক্ষমতা ব্যবহার করে কেহই চিরস্থায়ী হতে পারেনি। সুতরাং সময় থাকতে আল্লাহর ক্ষমতাকে স্বীকার করে তাঁর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করতে হবে। সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পৃথিবী গড়তে হলে আল্লাহর রহমতের বিকল্প নেই। শান্তি ও সুরক্ষা পেতে হলে আল্লাহর সন্তুষ্টির চাদরে আবৃত থকতে হবে। আর রহমত ও সন্তুষ্টি প্রাপ্তির জন্য কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করত সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত ও বকুল করুন। আমীন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, আজ আমরা আল্লাহর অসীম রহমাতে শান্তিতে মসজিদে নামাজ আদায়ের সুযোগ পাচ্ছি। ঘর-বাড়ি সন্তান-সন্ততি নিয়ে আনন্দে বসবাস করছি। আলহামদুল্লিাহ। কিন্ত চট্টগ্রাম, বান্দরবন ও কক্সবাজারে আমাদেরই অনেক ভাইয়েরা বৃষ্টিতে বন্যার পানি আর পাহাড়ি ঢলে ঘর-বাড়ি, গবাদিপশু ও সহায় সম্বল সব হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বন্যার পানি যদিও কমতে শুরু করেছে কিন্ত অধিকাংশ ঘর-বাড়ি রাস্তাঘাট এখনও কাদা পানির নিচে। অসহায় গরিবদের অনেকেই খাদ্য পাচ্ছে না। সেনাবাহিনীর রান্না করা খাদ্য (ত্রাণ) দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। তারা এখন অনেকে চরম বিপদগ্রস্ত। ত্রাণ ব্যবস্থাও খুবই অপ্রতুল।
খতিব বলেন, এসব বিপদগ্রস্ত মানুষের উপকারে এগিয়ে আসা প্রতিটি মুসলমানের ইমানী দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তাদের (ধনবানদের) সম্পদের মধ্যে অসহায় ও অভাবীদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা যারিয়াত : ১৯)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার কোনো একটি বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তায়ালা আখেরাতে তার একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দেবেন। ( মেশকাত শরীফ)। রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘যতক্ষণ তুমি কোনো ভাইয়ের উপকারে লেগে থাকবে, ততক্ষণ আল্লাহ তোমার উপকারে লেগে থাকবেন। (মুসলিম : ২৩১৪)। যে লোক দুনিয়া থেকে কোনো ইমানদারের কোনো বিপদ তথা বালা-মুসিবত দূর করে দেবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করে দিবেন। বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে, আল্লাহ তায়ালাও তার সাহায্যে থাকেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)।
খতিব বানভাসি বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে সকলকে এগিয়ে আসার এবং বর্তমান সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অবমাননাকারী তথাকথিত আল্লাহর দুশমন আসাদ নূর নাস্তিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। আল্লাহ সকলকে বেশি বেশি নেক আমলে সম্পৃক্ত থাকার তাওফিক দান করেন। আমিন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার