দুদক কর্মকর্তা নিজেই এখন তদন্তের মুখোমুখি
১২ আগস্ট ২০২৩, ১১:১১ পিএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আলোচিত উপ-সহকারি পরিচালক মো: শরীফউদ্দিনের চাকরিচ্যুত করার অন্যতম নেপথ্য কারিগর উপ-পরিচালক মুহ: মাহবুবুল আলমের অবৈধ সম্পদ সন্ধানে মাঠে নেমেছে স্বয়ং সংস্থাটির একটি টিম। একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই টিম গঠন করে দুদক। পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম ভুইয়ার নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের এই টিমের অপর দুই কর্মকর্তা হলেন,উপ-পরিচালক মো: হাফিজুল ইসলাম ও সহকারি পরিচালক মেয়ামুল গাজী।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুদকের উপ-পরিচালক মুহা: মাহবুবুল আলম বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে ইন্সপেক্টর পদে যোগ দেন। ২৮ বছরের চাকরি জীবনে পদোন্নতি পেয়ে এখন তিনি উপ-পরিচালক। বর্তমানে তিনি কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২ এ কর্মরত। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি প্রদানের সুপারিশের বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা ঘুূষ ও অন্যান্য সুবিধাদি গ্রহণ করেন। নোটিশ বাণিজ্য, দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, অনৈতিকভাবে অর্জিত অর্থে নিজ নামে, স্ত্রী, কন্যা ছাড়াও নিকটাত্মীয়র নামে রাজধানীর শান্তিনগর ও রামপুরায় বহুতল ভবন, ফ্ল্যাট, দোকান, গাড়ি, বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ, বরগুনার আমতলী উপজেলার নিজ গ্রামে কয়েকশ বিঘা জমিসহ অঢেল সম্পত্তি কিনেছেন। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে বহুমাত্রিক দুর্নীতির তথ্য সম্বলিত একটি অভিযোগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা পড়ে। ওই বছর ৩০ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অভিযোগের একটি কপি দুদকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। আরেকটি কপি দেয়া হয় একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। দুদকে আসা অভিযোগের তদন্ত করেন পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে একই ধরণের আরেকটি অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। ৩ বছর অনুসন্ধান শষে গত ২৪ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন তিনি।
অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠায়। তাতে উল্লেখ করা হয়, মাহবুবুল আলমের নামে দান ও কেনাসূত্রে ১৮টি দলিলে ৪৫৫ শতক জমি এবং ২০ লাখ ১ হাজার ৩০০ টাকা বিনিয়োগসহ ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৯১ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। পটুয়াখালীর গলাচিপা আড়তপট্টিতে অর্ধ ডজন দোকান কেনেন তিনি। গ্রামে ১ কোটি ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা মূল্যের কৃষি জমি রয়েছে তার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহবুবুল আলমের স্ত্রীর নামে ১৪টি দলিলে ৩৫৪ শতক জমি কেনার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া একটি কোম্পানিতে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। তার মেয়ের নামেও ৭টি দলিলে ১৪৫ দশমিক ৮৮ শতক জমি, ২৬ লাখ টাকার গাড়ি কেনা ছাড়াও ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগসহ অন্যান্য সম্পত্তি রয়েছে।
পটুয়াখালির গলাচিপা উপজেলায় তার জমি ও ৩ তলা ভবন রয়েছে। এছাড়া বরগুনার আমতলীর সোনাখালী গ্রামে তার বসতবাড়িতে দুইতলা ভবন, পটুয়াখালীর পায়রাবন্দরের পাশে কলাপাড়ায় কয়েকশ বিঘা জমি, আমতলী উপজেলায় কয়েকশ’ বিঘা ধানী জমি ও তিনটি দীঘি, ঢাকার শান্তিনগরে তার টাকায় ভাগ্নি জামাই হাবিবুর রহমানের নামে ৭ তলা এবং রামপুরায় ৬ তলা ভবন রয়েছে।
অন্যদিকে নয়াপল্টন এলাকায় চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী নামে ২০ তলা মার্কেটে ভাগ্নি জামাই হাবিবুর রহমানের নামে শেয়ার, আমতলী উপজেলায় বাড়ি, হাবিবুর ও তার ছেলের নামে নতুন-পুরাতন গাড়ির শো-রুম, মিরপুরে দীপ্তি আবাসন প্রকল্পের নিকট আত্মীয়ের নামে শেয়ার, সেখানে মালিক দেখানো হয়েছে ফারুক মৃধা, নজরুল ও মশিউরসহ আরও কয়েকজনকে। এছাড়া বোন, বোন-জামাই, ভাগ্নে-ভাগ্নিদের নামে, শ্যালক ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের নামেও ঢাকা ও পাবনায় শত শত বিঘা জমি কিনেছেন। বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শত কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে তার। অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মকা-ে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। আরও বলা হয়, তার নিজ উপজেলা আমতলীর একটি স্কুল ও কলেজে এডহক কমিটির সভাপতি পদ নিয়েও তিনি বেআইনি প্রভাব খাটাচ্ছেন। তার শক্তিতে স্থানীয়ভাবে দাপটশাল হয়ে উঠেছেন ছোট ভাই গোলখালি ইউনিয়নের মেম্বার নাসির মোল্লা। জবর-দখল, সালিশের নামে নিরীহ দরিদ্র মানুষের অর্থআত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় মাহবুব অবগত থাকলেও প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি।
ভুক্তভোগী গলাচিপা থানাধীন চর কাইজ্জা গ্রামের বারেক তালুকদারের পুত্র মো: শহীদুল ইসলাম জানান, জমির দলিল বন্ধক রেখে মাহবুব মোল্লার ছোট ভাই গোলখালি ইউনিয়নের মেম্বার নাছির মোল্লাকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দেন। শহীদুলের কাছ থেকে এই টাকা নেয়া হয় জমি সংক্রান্ত একটি বিরোধ সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে দেয়ার কথা বলে। কিন্তু নাসির নিষ্পত্তি না করে তালবাহানা করেন নাছির। তার পেছনে ঘুরে শহীদুল ইসলামের অন্তত সাড়ে ৩ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়েন এই পরিবহণ শ্রমিক। আজও টাকাটা ফেরত পাননি। সালিশতো সুদূর পরাহত।
বিষয়টি দুদক উপ-পরিচালক মাহবুব মোল্লাকে অবহিত করা হলেও প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি। মাহবুবের পূর্বতন কর্মস্থল দুদকের চট্টগ্রাম-২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়েও ৪ বছর দায়িত্বপালনকালে রয়েছে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। তখন চট্টগ্রামের দুর্নীতির অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ছাড়াও প্রভাবশালীদের সঙ্গে তিনি সখ্য গড়ে তোলেন। তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের নামে দায়মুক্তি দিয়ে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ