বিধ্বস্ত জনপদে হাহাকার
১২ আগস্ট ২০২৩, ১১:১২ পিএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের বন্যা কবলিত এলাকায় হাহাকার চলছে। দুর্গত অঞ্চলে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট এখন চরমে। স্মরণকালের রের্কড টানা অতিভারি বর্ষণ সেই সাথে পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় বিধ্বস্ত জনপদে এখন ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ পানিবাহিত নানা রোগ-বালাই। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর ভিড়। বন্যা, পাহাড়ী ঢলে বিরান হয়ে যাওয়া এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করলেও ঘরবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন স্থাপনায় এখনো রয়ে গেছে কাদামাটির স্তুপ, জঞ্জাল। বানের পানিতে ভেসে আসা কাদামাটি ও জঞ্জাল সরিয়ে বসতবাড়ি বাসযোগ্য করার কাজ চলছে।
প্রাণ বাঁচাতে যারা আত্মীয় স্বজনের উঁচু দালান-কোঠা কিংবা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলেন তারাও ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু বিধ্বস্ত বসতবাড়িতে এসে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছেন বন্যা দুর্গতরা। সরকারি তরফে ত্রাণ তৎপরতা এখনো অপ্রতুল। গতকাল শনিবার পর্যন্ত ত্রাণ সাহায্য পৌঁছেনি অনেক দুর্গত এলাকায়। জনগণের এ চরম দুঃখ-দুর্দশার মধ্যেও নির্বিকার জনপ্রতিনিধিদের অনেকে। বন্যা আর পাহাড়ী ঢলে সহায়-সম্বল হারানো মানুষগুলো এখন অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। বান্দরবানসহ বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
ঢল, বন্যা ও পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ভেসে গেছে বসতঘর, ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ। এখনো বসতবাড়ির আঙ্গিনা, দোকানপাটের নিচতলা, ফল-ফসলের ক্ষেত কাদাপানির নিচে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, পটিয়া ছাড়াও বান্দরবানের সাতটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে এখনো স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেনি। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে সড়ক অবকাঠামো। প্রশাসনের তরফে, এখনো বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ চলছে। চট্টগ্রাম জেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ৩০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ৩-১০ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে আউশ ধান, আমনের বীজতলা, আমনের আবাদ ও শরৎকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রাথমিক হিসাবে আউশ ধানের ছয় হাজার ১৩ হেক্টর জমির ধান, তিন হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা, ১৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমির রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে শরৎকালীন পাঁচ হাজার ৩৮৭ হেক্টর সবজি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রামে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শহীদুল ইসলাম বাবর জানান, সাতকানিয়া লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। রাস্তাঘাট থেকে পানি সরে যাওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। ঘরে ফিরেই পড়েছেন নতুন ভোগান্তিতে। অধিকাংশ ঘরে বন্যার পানির সাথে কাদামাটি ও ময়লায় পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় তা পরিষ্কার করতে কাজ করছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। অধিকাংশ হাটবাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় মালামাল বিনষ্ট হয়েছে। তাতে ব্যবসায়ীদের সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বন্যায় ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্রামের হাটবাজারগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চরম সঙ্কট চলছে। বন্যা কবলিত এলাকায় গভীর ও অগভীর নলকূপসমূহ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গ্রামীণ সড়কে পানি কমে যাওয়ায় লোকজন কাদামাটি ডিঙিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছুটছেন। সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, দোহাজারী ও পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিন দেখা যায় রোগীর ভিড়। তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ চৌধুরী অভি। পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত এন্টিভেনাম ইনজেকশন সরবরাহ করা হয়েছে।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ঢেমশা ইউনিয়নের বড়–য়াপাড়া, বিল্লাপাড়া, নলুয়া ইউনিয়নের মরিচ্যা পাড়া, মরফলা, কেওচিয়া তেমুহনী, কাজির পাড়া, কান্তার পাড়া, মাইজ পাড়ার কিছু অংশে এখনো বন্যার পানি রয়ে গেছে। এসব এলাকায় সরকারি-বেসরকারীভাবে ত্রাণ তৎপরতা চলমান রয়েছে। তেমুহনী এলাকার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য জাকের হোসেন জানান, টানা ছয়দিন পানিতে ডুবে থাকা বসতঘর থেকে পানি নেমে যাওযায় পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। বন্যার পানির সাথে কাদামাটিতে সয়লাব হয়ে গেছে ঘরবাড়ি। এখন সেই কাদা পরিষ্কার করে বসবাসের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন তিনি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস বলেন, নিরাপদ আশ্রয় থেকে ঘরে ফেরা লোকজনকে আমরা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছি। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ত্রাণ তৎপরতা আরো বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ