বন্যায় কৃষকের কান্না
১৩ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
চট্টগ্রাম বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারে অতি ভারী বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিনষ্ট হয়েছে ক্ষেতের ফল-ফসল। আবাদি জমির উপর জমেছে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু, মাটি ও জঞ্জালের স্তুপ। ঢল-বন্যার পানি সরে গেলেও ক্ষেত-খামারে কাদাপানির প্লাবন রয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। তাতে সর্বসান্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা। ঘরবাড়ির পাশাপাশি প্রান্তিক চাষীদের ক্ষেতের ফসলটুকুও চলে যাওয়ায় চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন তারা। বন্যা উপদ্রুত এলাকার বাতাস এখন কৃষকের কান্নায় ভারী।
এদিকে বন্যায় নিখোঁজ আরও একজনের লাশ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে ঢল-বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল রোববার সকালে সাঙ্গু নদীতে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত এক মহিলার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। চরতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন সাঙ্গু নদীর দ্বীপ চরতী এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। ঢল ও বন্যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামে ১৪ জন এবং বান্দরবানে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সাহায্য না পৌঁছায় কঠিন সঙ্কটে পড়েছেন দুর্গতরা। সরকারি তরফে অপ্রতুল ত্রাণ নিয়ে দুর্গতদের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু ত্রাণ তৎপরতা চললেও জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই দুর্গতদের পাশে নেই। হতদরিদ্র মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছে। অনেকে নিজেদের উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে বেশি বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের প্রান্তিক চাষীরা। ক্ষেত-খামার বিনষ্ট, পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। নতুন করে চাষাবাদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে। তবে এক্ষেত্রেও সরকারি কোন সহায়তা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
কৃষি বিভাগের হিসেবে, চট্টগ্রাম জেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ৩০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে প্রায় সপ্তাহব্যাপী বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে আউশ ধান, আমনের বীজতলা, আমনের আবাদ ও শরৎকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রাথমিক হিসাবে আউশ ধানের ছয় হাজার ১৩ হেক্টর জমির ধান, তিন হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা, ১৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমির রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে শরৎকালীন পাঁচ হাজার ৩৮৭ হেক্টর সবজি। মৎস্য বিভাগের হিসেবে, মৎস্যখাতে ক্ষতির পরিমাণ ৬৯ কোটি টাকা বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শহীদুল ইসলাম বাবর জানান, ঢল-বন্যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামে কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দোহাজারীর ঐতিহ্যবাহী লালটিয়ার চরের চাষী জয়নাল আবেদীনের প্রায় সাড়ে তিন একর সবজি ক্ষেত ছিল। প্রবল বন্যায় শঙ্খ নদীর তীরবর্তী তার সেই সবজি ক্ষেত বিরান হয়ে গেছে। জমিতে কোমর সমান জমেছে বানের সাথে ভেসে আসা বালুমাটি। অন্তত একমাসেও ওই জমিতে আর চাষাবাদ করা যাবেনা বলে জানান তিনি। তার মতো কৃষক মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ হারুন, মীর আহমদ, মোহাম্মদ সোহেলের সবজি ক্ষেতেরও একই অবস্থা। সবার ক্ষেতই নষ্ট হয়ে গেছে। গতকাল সকালে দোহাজারী লালটিয়ার চরের সবজি ক্ষেত পরিদর্শনে গিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় জয়নাল আবেদীনের।
লোহাগাড়ার পুটিবিলা ইউনিয়নের হাসনা ভিলা এলাকায় সানমুন এগ্রোর বিশাল সবজি ক্ষেত তদারকিতে আছেন বাজালিয়ার বড়দোয়ারা এলাকার নুর মোহাম্মদ। নুর মোহাম্মদ জানান, তাদের এগ্রো প্রজেক্টে ১০ একর জায়গায় বেগুন ক্ষেত, এক একরে করলা ও এক একরে লাউ রয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় নয় একর জমির সবজি। এছাড়াও একই প্রজেক্টের অধিনে থাকা সাতকানিয়ার ছদাহা এলাকায় প্রায় দুই একর জমির করলা ও বেগুন, পুরানগড় ইউনিয়নের বৈতরনী এলাকায় প্রায় তিন একর বিভিন্ন প্রজাতির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এখাতে সানমুন এগ্রোর ক্ষতি আনুমানিক ২৫ লাখ টাকা। এছাড়াও এ তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ জমির সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়।
লালটিয়ার চরের চাষি মোহাম্মদ সোহেল বলেন, আমরা অনেকেই এনজিও থেকে লোন নিয়ে চাষাবাদ করি। এখন আমাদের চাষকৃত সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমরা কিস্তি কিভাবে পরিশোধ করবো ভেবে কুল পাচ্ছিনা। লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, লোহাগাড়ার পদুয়াসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কৃষিখাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আয়ুব জানান, ছদাহা ইউনিয়নে ব্যাপক সবজি চাষ হতো। বন্যার পানির কারণে অধিকাংশ সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে চাষীদের আবার ঘুরে দাড়ানো অনেক কঠিন।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকা থেকে পানি সরে গেলেও লোকজন ঘরে ফিরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়া বসতঘর মেরামত করতে প্রাণপন লড়াই করে যাচ্ছে লোকজন। তাদের একজন তেমুহনীর সিরাজ মিয়া (৭৫)। বাধ্য হয়ে নির্মিতব্য রেললাইনের উপরে তাবু টেনে পরিবারের লোকজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সিরাজ মিয়া জানান, বন্যায় বসতঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। সেখানে বসবাসের অবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে তিনি রেললাইনে তাঁবু টাঙিয়ে বসবাস করছেন।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস বলেন, এখন আমরা ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন দপ্তর ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তৈরী করছে। পূর্ণাঙ্গ রির্পোট পাওয়া গেলে কোন খাতে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারব। তবে সাতকানিয়ায় ২ হাজার ১৬২.৫ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ৩২ কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজন ধারালো অস্ত্রাঘাতে হত্যা;আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ,দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে