বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার
১৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৫ পিএম | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনে মিষ্টি পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত পুকুরগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ভ‚গর্ভস্থ পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধিতে সাতক্ষীরা উপকূলজুড়ে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। শুষ্ক মৌসুমের তুলনায় বর্ষা মৌসুমে এই সংকট কিছুটা কমলেও প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের অভাবে বর্ষা মৌসুমেও খাওয়ার পানির সংকটে ভুগছে উপক‚লের মানুষ। লবণাক্ততার প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলের জনস্বাস্থ্যে। বিশুদ্ধ পানির জন্য গ্রামের বাসিন্দাদের ছুটতে হচ্ছে দূরদূরান্তে।
লবণাক্ততায় পুড়ছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপক‚লের মাটি। এতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কৃষি ও জীববৈচিত্র। ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। স্থানীয়রা জানান, প্রতিবারই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নতুন নতুন এলাকা নদীর লোনা পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে মিষ্টি পানির পুকুরগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মাটির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। লবণের সঙ্গে যুদ্ধ করে মানুষকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। গাছপালা মরে মরুভ‚মিতে পরিণত হচ্ছে উপক‚ল।
বিশ্বব্যাংকের ‘রিভার স্যালাইনিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাভিডেন্স ফ্রম কোস্টাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের ১৯ জেলার ১৪৮টি থানার মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততায় আক্রান্ত হবে ১০টি নদীর পানি। এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার নদীগুলো উল্লেখযোগ্য। এসব এলাকায় এখনই ১০ পিপিটি মাত্রার লবণাক্ততা বিরাজ করছে। যা ২০৫০ সালের মধ্যে স্থানভেদে ১৫-২৫ মাত্রায় উন্নীত হতে পারে।
লবণাক্ততার কারণে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মানুষ বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কটে রয়েছে। সুপেয় পানির জন্য তাদের ছুটতে হচ্ছে দূরদূরান্তে। পরিবারের সাতজন সদস্যের জন্য প্রতিদিন ৩-৪ কলস খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয় শ্যামনগর উপজেলার মৌখালী গ্রামের গৃহবধূ জামিলা বেগমকে। এজন্য বাড়ি থেকে পায়ে হেটে দুই কিলোমিটার দূরের পূর্ব কালিনগর সরদার বাড়ি যেতে হয় তাকে। সেখানকার পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) থেকে সংগৃহীত পানিই পান করেন তারা। পানি সংগ্রহের জন্য তাকে দৈনিক দুই থেকে চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। শুধু তাই নয়, এখন রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হওয়ায় পানি সংগ্রহে দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ।
একইভাবে মুন্সীগঞ্জ গ্রামের হান্নান মালিকেও পরিবারের ১৫জন সদস্যের জন্য অনেক দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। যখন তিনি পানি আনতে পারেন না, তখন ১০ টাকা কলস দরে পানি কিনে খেতে হয় তাদের।
এভাবেই সুপেয় পানি সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে সাতক্ষীরা উপক‚লের মানুষকে। সেই সাথে ব্যয় করতে হচ্ছে অতিরিক্ত সময়, শ্রম ও অর্থ। তারপরও যেন দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না তাদের।
দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা শ্যামনগরে জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলার বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার অধিকাংশই রয়েছে সুপেয় খাবার পানির সংকটে। মৌখালি গ্রামের গৃহবধূ জামিলা বেগম বলেন, পানি আনতে অনেক সময় লেগে যাওয়ায় সংসারের অন্যান্য কাজগুলো করা হয় না। এছাড়া অনেক সময় শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। বর্ষাকালে পানি আনতে কষ্ট বেশি হয়। কারণ কাদামাটি মাড়িয়ে যেতে হয়, আসতে হয়। বর্ষাকালে পুকুরের পানি (পিএসএফ) খাওয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা ‘পানি থেকে গন্ধ বের হয়’। পাড় ধোয়ানি এসে পানি গন্ধ হয়ে যায়। তারপরও তা খেয়ে হয়।
অপরদিকে, হান্নান মালি বলেন, খাবার পানি আনতে অনেক দূর যেতে হয়, কিন্তু বর্ষাকালে তা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময়টা পানি কিনে খেতে হয়। প্রতিদিন ৫-৬ কলস পানি লাগে। পাশে একটা রিভার্স অসমোসিস (আরও) প্লান্ট আছে। সেখান থেকে ১০ টাকা কলস দরে পানি কিনে খেতে হয়। অনেকে বর্ষার পানি ধরে খায়। কিন্তু সবার বাড়িতে সেই ব্যবস্থা না থাকায় পানি কিনে খেতে হয়। আবার বৃষ্টি কম হওয়ায় বর্ষার পানির উপরও নির্ভর করা যাচ্ছে না। প্রতিমাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার পানি কিনে খেতে হচ্ছে।
শ্যামনগরের গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম বলেন, আমাদের গাবুরাতে সব সময় সুপেয় পানির সংকট লেগেই থাকে। স্থায়ীভাবে পানির সমস্যা সমাধান করতে হলে যে সব এলাকায় পানির লেয়ার ভালো সেখানে গভীর নলক‚প বসাতে হবে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্যে সু-ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া সুপেয় পানির উৎসগুলো নিয়মিত শোধন করতে হবে।
শ্যামনগর উপক‚লে সুপেয় পানির সংকট নিয়ে উপসহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুপেয় পানির সংকট দূরীকরণে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুপেয় পানির জন্য এক হাজার উৎসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে পিএসএফ, পুকুর খনন ও পানি সংরক্ষণের জন্যে ট্যাংক বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার মানুষের সংকট দূর হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও সুপেয় পানির সংকট দূরীকরণে কাজ করছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক
বঙ্গতে আসছে 'ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ'
সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন
পানামা খাল দখলের হুমকি ট্রাম্পের, ভর্ৎসনা পানামার প্রেসিডেন্টের
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা
পাবনা-৩ এলাকায় অ্যাডভোকেট রবিউলের গণসংযোগ ও কম্বল বিতরণ
পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়
জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া
স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭
রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ
ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা
উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন
ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা
উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল