সরকারি পাটকল বন্ধের সুযোগে দরপতনে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক
১৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৬ পিএম | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
চলতি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও আকষ্মিক দরপতনে কৃষকের মাথায় হাত। কর্তন শুরু হবার পরে এ অঞ্চলের মোকামগুলোতে প্রতিমন পাট ৩ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হলেও গত সপ্তাহ থেকে দরপতন শুরু হয়।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলোতে প্রতিমন পাট আড়াই হাজার থেকে ২৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। অথচ এখনো অন্তত ৩০ ভাগ জমির পাট কর্তন বাকী রয়েছে। সামনে দাম আরো কমার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আড়তদারগণ। ফলে আগামীতে পাট আবাদে কৃষকগণ নিরুৎসাহিত হতে পারেন বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগণ।
২০২০ সালে পশ্চিম জোনের সবগুলো সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেয়ার পরে পাটের বাজার আর স্থিতিশীল হয়নি। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব-পিপিপি পদ্ধতিতে বন্ধ পাটকল চালুর অনেক আশার বাণী শোনা গেলেও একটিও চালু হয়নি গত ৩ বছরেরও বেশি সময়ে। বরিশাল অঞ্চলে যে ২০টির মতো ছোট ও মাঝারি পাটকল রয়েছে তারও প্রায় অর্ধেক বন্ধ। বেসকারি পাটকলগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ পুরনো মেশিনারীসহ পুঁজির অভাবে।
অথচ চলতি মৌসুমেও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র মতে দেশে প্রায় ৮ লাখ হেক্টরের কিছু বেশি জমিতে পাট আবাদ হলেও তার প্রায় ৩০%-ই হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। তবে এবারো প্রতি মন পাট উৎপাদন ব্যয় প্রায় আড়াই হাজার টাকার কাছে হলেও সাড়ে ৪ মাসের সাধনার এ কৃষিপণ্য আবাদ ও উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত মুনাফা তুলে আনা দুরুহ হয়ে পড়েছে। এবারো পাট আবাদ ও উৎপাদনের বড় অন্তরায় হচ্ছে কর্তনকালীন সময়ে বৃষ্টির অভাব। মূলত চলতি বছর গত জুলাই পর্যন্ত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বৃষ্টির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে যথেষ্ঠ অনিশ্চয়তা পড়তে হয়েছে।
গত মাসেও স্বাভাবিকের ৫৮% কম বৃষ্টি হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে স্বাভাবিকের অনেক বেশি বৃষ্টির ফলে উঠতি আউশ ও আমন বীজতলা ডুবিয়ে দিলেও পাট জাগ দেয়ার অনিশ্চয়তা কেটে গেলেও তার আগেই তিন-চতুর্থাংশ পাট কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। বেশিরভাগ চাষিকেই মাঠ থেকে অনেক দুরে খাল ও নদীতে নিয়ে পাট জাগ দিতে গিয়ে কৃষি শ্রমিকের জন্য অতিরিক্ত মজুরি গুনতে গিয়ে লোকসানের বোঝা ভারী হয়েছে এবার।
এদিকে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ উপযোগী নোনা পানি সহিষ্ণু পাটের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে আমদানিকৃত বীজের চেয়ে উন্নমানের ও উচ্চ ফলনশীল নাবী জাতের পাটবীজ উদ্ভাবন করেছে। আগামীতে এ পাট বীজই দেশের মোট আবাদকৃত এলাকার চাহিদা মেটাবে বলেও পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর দায়িত্বশীল মহল আশাবাদী।
আমন ও বোরো ধানের পরে পাট দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি অর্থনীতির বড় যোগানদার হয়ে উঠেলেও এ অঞ্চলে কোনো সরকারি পাটকল না থাকার মধ্যেই বেসরকারি খাতের ছোট-বড় ২৪টি পাটকলেরও দু-তৃতীয়াংশই বন্ধ। চলতি মূলধন আর আধুনিক মেশিনারির অভাবের সাথে ব্যাংকের দেনায় বন্ধ বেশিরভাগ পাটকল অদুর ভবিষ্যতে চালুর কোনো সম্ভাবনার বিষয়টিও জানা নেই কারো। অথচ বেসরকারি খাতে দেশের অন্যতম বৃহৎ করিম জুট মিল ও পারটেক্স গ্রæপের পাটকলও দক্ষিণাঞ্চলেই। দেশের বিভিন্ন এলাকার বেসরকারি পাটকলগুলো এ অঞ্চলের মোকামগুলো থেকে সীমিত কিছু পাট কিনলেও তাদের ফড়িয়াদের বেঁধে দেয়া দরের ওপরও সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে পাট চাষিদের।
অপরদিকে পরিবেশবীদদের মতে, পাট আবাদের ওপরই অনেক এলাকার জ্বালানি চাহিদার বড় অংশ মিটে থাকে। পাট আবাদ এলাকার বড় জনগোষ্ঠী জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠি ব্যাবহার করে আসছে। ফলে জ্বালানি হিসেবে গাছপালা কাটার প্রবতা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকছে।
এছাড়া পাটখড়ি থেকে ‘পারটেক্স বোড’ সহ গত কয়েক বছর ধরে রফতানি পণ্য ‘চারকল’ উৎপাদিত হচ্ছে। যা রফতানি খাতকেও কিছুটা সমৃদ্ধ করছে। জ্বালানি সঙ্কট মোকবেলাসহ দেশি পাটকল সচল রাখার সাথে রফতানি খাতকে সজীব রাখতে পাট আবাদের ধারা অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে কৃষক পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন কৃষিবীদ ও পরিবেশবীদগণ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেশে পাট চাষির সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ হলেও এখাতের ওপর নির্ভিরশীল প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। আর জিডিপিতে পাটের অবদান ০.২৬% হলেও কৃষি সেক্টরে একক অবদান ১.১৪%। দেশে উৎপাদিত পাটের ৫১% এখনো স্থানীয় পাটকলে ব্যবহৃত হলেও ৪৪% কাঁচা পাট বিদেশে রফতানি হচ্ছে।
পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে দেশ প্রতিবছর আয় করছে প্রায় ৯০ থেকে ১শ’ কোটি ডলার। এ আয়ের সিংহভাগই এসেছে পাট সুতা বা জুট ইয়ার্ন থেকে। কাঁচাপাট রফতানিতে আয় ১ কোটি ডলার। পাটের বস্তা ও চট রফতানি করেও আয় হচ্ছে ১০ কোটি ডলারের মতো। এছাড়া বিভিন্ন পাটজাত পণ্য রফতানিতেও আয় প্রায় ২০ কোটি ডলারের মতো। তবে গত তিনটি অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে তেমন কোনো প্রবৃদ্ধি ছিল না। দীর্ঘদিন পরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য রফতানি চামড়াজাত পণ্যকে ছাড়িয়ে গেলেও ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে রফতানি প্রবৃদ্ধি কিছুটা নেতিবাচক ধারায় রয়েছে।
অপদিকে পাটখড়ির ছাই ‘চারকল’ চীনসহ বিশে^র কয়েকটি দেশে ভাল বাজার তৈরি করেছে। তবে গতবছর চট্টগ্রামের বিএম ডিপোতে অগ্নিকাÐের পরে শিপিং কোম্পানীগুলো এ রফতানি পণ্য জাহাজীকরণে কিছুটা অনিহা প্রকাশ করে আসছে। প্রতি বছর প্রায় ৩০ কোটি ডলারের চারকল রফতানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়
জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া
স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭
রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ
ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা
উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন
ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা
উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের
দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা
ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ
হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি
রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক