সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে শোক সভায় বিচারপতির প্রশ্ন

সাঈদীর লাশ পাহারায় এত পুলিশ কেন?

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

আপিল বিভাগের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বলেছেন, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু মানুষের মুখে ফেনা উঠছে। কেন? সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেল বাংলাদেশে? বঙ্গবন্ধুর সময় সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেল। অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা, দোয়া ও স্বেচ্ছায় রক্তদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, যদি আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, বহুদলে বিশ্বাস করি, তাহলে সহনশীল হতেই হবে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে একে অন্যের প্রতি সহনশীল হতেই হবে। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করবো আর সহনশীল হবো না, এটা গণতন্ত্রের চর্চা বলা যাবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার বলেন, আমৃত্যু কারাদÐপ্রাপ্ত একজন মানুষ মারা গেছে। তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য হাজার হাজার পুলিশ সারা রাত জাগছে। ভোরবেলা পিরোজপুরে নিয়ে গেছে। সাঈদীর মৃত্যুর পর ‘দাঙ্গা-হাঙ্গামা’র শঙ্কায় ‘রাতেই ঢাকার বাইরে থেকে পুলিশ এনে মোতায়েন করা হয়। কেন? এই শঙ্কা কেন আসবে এই দেশে?’

প্রধান বিচারপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গুণাবলির মধ্যে অন্যতম একটি ছিল সততা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তার বাড়ি তল্লাশি করে পাওয়া গেছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। তিনি কত সাধারণ জীবনযাপন করতেন সেই বাড়ি গেলেই দেখা যায়। তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয় আমরা যদি একাত্তর মেনে নিই, সংবিধান মেনে নিই, গণতন্ত্র মেনে নিই, তারপর যদি রাজনীতি শুরু করা যায়, সমাজনীতি শুরু করা যায়, অর্থনীতি শুরু করা যায়, বিচার শুরু করা যায়, এবং গণতন্ত্রকে যদি আমরা ধারণ করি তাহলে আমাদের ভেতর যে দূরত্ব আছে সেটা কমে আসবে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ লোক রক্ত দিয়েছিলেন, যে কারণে বঙ্গবন্ধু শহীদ হয়েছেন, আমার মনে হয় সে লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আমার মতে এ জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ঠিক সেই হিসেব-নিকাশ করেই ৩ নভেম্বর যে হত্যাকাÐ করা হয়, যাতে জাতি দিন দিন ধ্বংসের দিকে যায়। সেই ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তারপর আমাদের এগুতে হবে। অন্যথায় বার বার আমরা এ বিপদের সম্মুখ হতেই থাকবো। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গুণাবলির মধ্যে একটি ছিল সততা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার বাড়ি তল্লাশি করে মাত্র ২৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তিনি কত সাধারণ জীবনযাপন করতেন সেই বাড়ি গেলেই দেখা যায়। দ্বিতীয়ত আত্মসচেতনা থাকতে হবে। আরেকটি হলো সাহস থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সাহসিকতা ছিল।

বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধুতে হত্যার পর প্রতিবাদ করতে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজো সেটি দেখতে পাই। আমার মনে হয় একটি সমস্যা হতে পারে। কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা আটক (গ্রেফতার) হয়ে গেল। প্রতিবাদ করতে কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না। তার (শেখ হাসিনা) পাশে দাঁড়ানোর লোক নেই। এখন তো লোকের অভাব নেই। বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষ সবই জয় বাংলার লোক। এত বেশি ভালো, ভালো না। সাবধান হয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। আমরা ন্যায় বিচার করবো। সবাই সৎভাবে জীবন-যাপন করবো। সবাই আমরা ভালো হয়ে যাই।

বিচারপতি আবু আহমেদ বলেন, গত রাতে আমার দুই ছেলে (পুলিশ কর্মকর্তা) বললো সাঈদী মারা গেছে। এজন্য দাঙ্গা-হাঙ্গামা হতে পারে। পরে রাতেই ঢাকার বাইরে থেকে পুলিশ এনে মোতায়েন করা হয়। কেন? এই শঙ্কা কেন আসবে এই দেশে। বিচারপতি বলেন, দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেখানে কেন ৫২ বছর পর শঙ্কা আসবে। তারা কি তাহলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চাইতেও বেশি ক্ষমতাধর? আমার তো মনে হয়, তাই। আমৃত্যু কারাদÐপ্রাপ্ত একজন মানুষ মারা গেছে, যার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, আমি জানি না। আল্লামা নামধারী। সে কি এতই জ্ঞানী ছিল বাংলাদেশে? তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য হাজার হাজার পুলিশ সারা রাত জাগছে। ভোরবেলা পিরোজপুরে নিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, ম্যাসেজ আছে, আমার মোবাইলে আছে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে সাহস করতে হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী ও অপরাধী সংগঠন বলা হয়েছে। আজকের শোক দিবসে প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি পেশ করে বলতে চাই তাদের বিচারের জন্য আইনের সংশোধনী দরকার। কী সাজা হবে, সেটা কেন হচ্ছে না, সংশ্লিষ্ট মহলে আপনি জানুন। আমরা বিচার করতে চাই। কী হবে বিচার করলে। হত্যা করবে? হত্যার বিষয়টি জেনেই যুদ্ধে গিয়েছিলাম।

জামায়াতের বিচার দাবি করে আবু আহমেদ জমাদার বলেন, তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা আছে। সাক্ষী সাবুদ এখনো আছে, বিচার কেন করা হবে না? রাজাকারের জন্য দেশ নয়, এটা মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাসের জন্য। আমার আছে আর কয়েক মাস। আমাকে যদি বলা হয়, এই বিচার করলে গুলি করা হবে তবুও আমি বলব বিচার করব।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান, বিচারপতি জে বি এম হাসান, বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী, বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার, বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ প্রমুখ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রাহাত ফতেহ আলী খানের সম্মানে পাকিস্তান হাইকমিশনারের নৈশভোজ আয়োজন
এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি
সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
বিডিআর বিদ্রোহ : ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন গঠন
বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
আরও

আরও পড়ুন

আটঘরিয়ায় ঘন কুয়াশায় বিনা চাষে রসুনের জমি পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কৃষক

আটঘরিয়ায় ঘন কুয়াশায় বিনা চাষে রসুনের জমি পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কৃষক

সীমান্তে বিজিবির গুলি ১৬ বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল  ফেলে পালালো চোরাকারবারীরা

সীমান্তে বিজিবির গুলি ১৬ বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল  ফেলে পালালো চোরাকারবারীরা

সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু

সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু

রামগড়ে ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৪লক্ষ টাকা জরিমানা

রামগড়ে ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৪লক্ষ টাকা জরিমানা

আমতলীর ইউএনও’র বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন

আমতলীর ইউএনও’র বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন

নবীনগর ও কসবায় বিভিন্ন রকমের  মাদকসহ তিন যুবক গ্রেপ্তার

নবীনগর ও কসবায় বিভিন্ন রকমের  মাদকসহ তিন যুবক গ্রেপ্তার

মণিপুর গৃহযুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে মিয়ানমার, চাঞ্চল্যকর দাবি রিপোর্টে

মণিপুর গৃহযুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে মিয়ানমার, চাঞ্চল্যকর দাবি রিপোর্টে

চাঁদপুর মেঘনায় জাহাজে মিলল ৫ জনের মরদেহ

চাঁদপুর মেঘনায় জাহাজে মিলল ৫ জনের মরদেহ

বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ৭৮তম মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু

বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ৭৮তম মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু

বিনা খরচে কৃষকের দেড়’শ ধানের চারা রোপন  করে দিল কালীগঞ্জ কৃষি আফিস

বিনা খরচে কৃষকের দেড়’শ ধানের চারা রোপন করে দিল কালীগঞ্জ কৃষি আফিস

সিরিয়ার নেতার সঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান

সিরিয়ার নেতার সঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান

আরাফাত রহমান কোকো ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে উদ্দীপন যুব সংঘ চ্যাম্পিয়ন

আরাফাত রহমান কোকো ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে উদ্দীপন যুব সংঘ চ্যাম্পিয়ন

সাতক্ষীরার নলতায় চার দফা দাবিতে ছাত্র -ছাত্রীদের আন্দোলন, ক্যাম্পাসের নাম বদল

সাতক্ষীরার নলতায় চার দফা দাবিতে ছাত্র -ছাত্রীদের আন্দোলন, ক্যাম্পাসের নাম বদল

অর্থনৈতিক সংকটে আফগান রুটি, ঐতিহ্য ও জীবনের অংশ

অর্থনৈতিক সংকটে আফগান রুটি, ঐতিহ্য ও জীবনের অংশ

আশুগঞ্জে গ্যারেজ মালিককে হত্যা করে  অটোরিকশা নিয়ে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা

আশুগঞ্জে গ্যারেজ মালিককে হত্যা করে  অটোরিকশা নিয়ে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা

উত্তরপ্রদেশে ৩ খলিস্তানি বিদ্রোহীকে গুলি করে হত্যা পুলিশের

উত্তরপ্রদেশে ৩ খলিস্তানি বিদ্রোহীকে গুলি করে হত্যা পুলিশের

শিবালয়ের যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে বৈদ্যুতিক টাওয়ার

শিবালয়ের যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে বৈদ্যুতিক টাওয়ার

হিলিতে কমেছে আলু পেঁয়াজের দাম

হিলিতে কমেছে আলু পেঁয়াজের দাম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ১,১০০ হতাহতের শিকার : সিউল

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ১,১০০ হতাহতের শিকার : সিউল

ঢাকা - মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ কুয়াশায় আবারো দূর্ঘটনা , নিহত ১ আহত ৪

ঢাকা - মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ কুয়াশায় আবারো দূর্ঘটনা , নিহত ১ আহত ৪