ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
আমাদের বাড়িতে যারা ওঠা-বসা করত তারা বেঈমানি করেছে

ভারত মহাসাগর ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশ আক্রমণ করা কারো কারো উদ্দেশ্য

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৮ পিএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

গণতন্ত্র উদ্ধারের নাম করে ভারত মহাসাগর ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশকে আক্রমণ করাই কারো কারো উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেন, সেই উদ্দেশ্যে তারা কাজ করছে। ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত ও প্রশান্ত মহাসারগরের এ অঞ্চলের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমাদের বঙ্গোপসাগরটাও এরই অংশ। ভারত মহাসাগরে যতগুলো দেশ আছে এখানে কারো সাথে কারো দ্বন্দ্ব নাই। স্বাধীনভাবে পণ্য চলাচল করে এখানে। গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের কিছু লোক আছে তারা এদের সঙ্গে সুর মিলায়। তাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশকেও সচেতন থাকতে হবে। আমি মনে করি তারা সচেতন। এ এলাকা নিয়ে নানা ধরণের চক্রান্ত চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি তাদের বলতে চাই- আপনাদের গণতন্ত্র কি আটলান্টিকে আটকে যায়? আটলান্টিক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ? যে বিএনপি আমার বাবাসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে হত্যাকা- চালিয়েছে আজ তাদের নিয়ে ক্ষমতায় বসাতে হবে? এদের উদ্দেশ্য নির্বাচন না, গণতন্ত্র না। এরা একটা জিনিসই করতে চায় তা হচ্ছে আমরা যে গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করেছি, আর্থসামাজিক উন্নতি করেছি, দারিদ্রতার হার কমিয়ে নিয়ে এনেছি, মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছি সেই উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। এটাই বাস্তবতা।

শেখ হাসিনা বলেন, হঠাৎ কেন জানি তাদের আগ্রহ বেড়ে গেলো। কারণটা কী? একের পর এক তারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। বিএনপি তাদের এখন চোখের মনি। যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, ক্ষমতায় এসে হত্যা, নির্যাতন শুরু করেছে, তাদের সঙ্গে না কি বসতে হবে। কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য আর বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক কিছু সহ্য করেছি। আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। অথচ খালেদা জিয়া আজিজ মার্কা নির্বাচন যখন করেছে তখন তাদের উদ্বেগ দেখিনি। আসলে বাংলাদেশের উন্নয়ন তাদের পছন্দ না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশ খুনীদের আশ্রয় দিয়েছে তারা যখন আমাদের মানবতার কথা বলে, স্বচ্ছতার কথা বলে, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর যখন বাংলাদেশে হত্যা, খুন, গুম, নির্যাতন, নিপীড়ন শুরু হয় তখন তারা কোথায় ছিল? ২০০১ সালের নির্বাচনেতো আমাদের হারার কথা ছিল না। এরশাদ যখন নির্বাচনের ফল আটকিয়ে রেখেছিল তখনতো এদের উদ্বেগ দেখিনি। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় আমি ক্ষমতায় আসার পর শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানেও এখন পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। তাদের পদলেহনকারীদের নিয়ে খেলবে। দেশবাসীকে বলবো দেশপ্রেমিক সব নাগরিকদের সচেতন থাকতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখি না। ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রি করে ক্ষমতায় আসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আমার বাবাও দেশের স্বার্থ নষ্ট করে ক্ষমতায় থাকতে চাননি, আমিও দেশের স্বার্থ নষ্ট করে ক্ষমতায় থাকতে চাই না। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ। তিনি (শাহাবুদ্দিন) আমাকে তখন জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। আমাকে তিনি এটাও বললেন যে, আপনাকে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি সমর্থন দেবে। আপনিই হবেন দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। আমি ওনাকে বিনয়ের সঙ্গে বলেছি, আমি এভাবে সরকার গঠন করতে চাই না। তিনি বলেন, এদেশে জিয়াউর রহমানই প্রথম মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেন। বিচার চাওয়ার অধিকারও কারও ছিল না। আজকে যখন আমার কাছে কেউ কারও হত্যার বিচার চায়, তখন আমি ভাবি- আমার তো একুশ বছর বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। আজকে দেশের উন্নয়ন যখন করে যাচ্ছি তখন সবার মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো খেলা খেলে বাংলাদেশের ভাগ্য নষ্ট করা যাবে না। দোয়া করবেন যেন জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারি।

যারা ধানম-ির ৩২ নম্বর বাড়িতে উঠাবসা করেছে তারাই বেইমানি করেছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, যারা আমাদের বাড়িতে সব সময় ওঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া করেছে, তারা বেইমানি করেছে। তারাই বেইমানি করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান না মেনে খুনি মোস্তাক নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে। প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেই জিয়াউর রহমানকে বানালো সেনাপ্রধান। ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জিয়াউর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

শেখ হাসিনা বলেন, মীর জাফর যখন বেইমানি করে তিন মাসও ক্ষমতা থাকতে পারেনি। দুই মাসের মাথায় তাকে চলে যেতে হয়েছিল। একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। মোস্তাককে বিদায় আর জিয়াউর রহমান নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় বসে। আরেক দিকে সেনাপ্রধান আবার প্রেসিডেন্ট। সংবিধান লংঘন করে, সেনা আইন লংঘন করে। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। বাংলাদেশের ইতিহাস সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল এই ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একই সঙ্গে আমার মা, আমার তিন ভাই, কামাল-জামালের বউদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ইতিহাসের এ জঘন্য ঘটনা বাংলার মাটিতে ঘটে যায়। সেই কারবালার ঘটনাকেও যেন হার মানায়। কারবালার ঘটনা শিশু-নারীদের হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ১৫ আগস্ট শিশু-নারীদেরও তারা ছাড়েনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা মাত্র ১৫ দিন আগে ৩০ জুলাই জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ৩১ জুলাই আমরা সেখানে পৌঁছাই। আমরা ভাবতেও পারিনি আমাদের জীবনে এমন একটা আঘাত অপেক্ষা করছে। ১৩ তারিখে আব্বার সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে, সবার সঙ্গে কথা হয়। ১৫ তারিখে এ ঘটনা ঘটার পর যখন আমরা জানতে পারি, তখন সব তথ্য আমরা জানতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, আমার আপনজন হারিয়েছি, স্বজন হারিয়েছি, বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমারও তো হারিয়েছি, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বাংলাদেশে কী হারিয়েছিল? বাংলাদেশের মানুষ কী হারিয়েছিল?

শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এদেশে মানুষের জন্য। মানুষের কথাই বেশি ভাবতেন। তিনিতো ভালোবেসেছিলেন মানুষকে। এদেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন। তাদের সুখী জীবন দেবেন। অন্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাদের উন্নত জীবন দেবে। সেটাইতো তার জীবনের একমাত্র সাধন, সংগ্রাম। কাজে তিনি নিজের জীবনকে সেভাবে উৎসর্গ করে গেছেন। বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার আপনজন হারিয়েছি, স্বজন হারিয়েছি, বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমারও তো হারিয়েছি, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বাংলাদেশের মানুষ কী হারিয়েছিল? তিনি আরো বলেন, আমার বাবা সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এদেশে মানুষের জন্য। মানুষের কথাই বেশি ভাবতেন। তিনিতো ভালোবেসে ছিলেন মানুষকে। এদেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন। তাদের সুখী জীবন দেবেন। অন্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাদের উন্নত জীবন দেবে। সেটাইতো তার জীবনের একমাত্র সাধন, সংগ্রাম। কাজে তিনি নিজের জীবনকে সেভাবে উৎসর্গ করে গেছেন। বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছেন।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমূখ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা