ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে প্রধানমন্ত্রী

আমরা ক্ষমতায় এলে ভালো হবে, অন্যথায় এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে না

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৫ এএম

স্টাফ রিপোর্টার
সার্বজনীন পেনশন স্কীম চালু করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা পেনশন স্কিম চালু করেছি যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ একটি উন্নত জীবনযাপন করতে পারে। তবে তিনি আশাঙ্কা করে বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় থাকার সময় পেনশন স্কিম চালু করতে চেয়েছিলাম। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আমরা ক্ষমতায় আসলে ভালো হবে, অন্যথায় এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করে তিনি এমন কথা বলেন।

সার্বজনীন পেনশন স্কীমের প্রগতি স্কিমটি বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য, স্ব-কর্মে নিযুক্ত লোকদের জন্য সুরক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাসী এবং দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সমতা। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মূল লক্ষ্য দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকলকে এর আওত্বায় আনা এবং তারা তাদের ৬০ বছর বয়স হওয়ার পরে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।পেনশন ব্যবস্থার বয়সসীমা প্রাথমিকভাবে ৫০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু পরে তা সংশোধন করা হয়। ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও টানা ১০ বছর ধরে কিস্তিÍ পরিশোধের পরে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সকলের আরো ভালো ও একটি উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হলো। এই ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের এর আত্তত্বায় নিয়ে আসা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন পান। যারা চাকরি করে না তারা তো পান না। কাজেই এটা সরকারি চাকরিজীবীর জন্য নয়। যারা সরকারি চাকরি করেন, বেতন পান, তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য হবে না। সরকারি চাকরির বাইরে যে জনগোষ্ঠী, শুধুমাত্র তাদের জন্য এই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি। এটা করে তারা সম্মানজনকভাবে বাঁচতে পারে। যার ফলে মানুষের মধ্যে যে বৈষম্য আছে সেটাও দ‚র হবে।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন আমরা সরকারে এলাম, তখন সর্বজনীন মানুষের জন্য কী করতে পারি সেই বিষয়ে চিন্তা করতে থাকলাম। ২০০৮-এ নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সিদ্ধান্ত নিই। এটা করার জন্য যথেষ্ট সময় লাগে। তখন মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থাও খারাপ ছিল। তখন মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল নি¤œস্তরে। অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে ছয়টির মধ্যে চারটি স্কিম প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা এবং প্রবাসী উদ্বোধন করা হয়েছে এবং অন্য দু’টি পরে চালু করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর এবং আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা, বিশ^াস ও ভালোবাসাই দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার চালিকাশক্তি। আগামী দিনেও আমার প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অব্যাহত রাখার জন্য আমি বাংলাদেশের জনগণকে অনুরোধ করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একমাত্র লক্ষ্য ছিল দেশবাসীকে একটি উন্নত জীবন উপহার দেওয়া, যার জন্য তিনি তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা শোকের মাসে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছি। জনগণকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দেওয়ার আমাদের প্রচেষ্টা দেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতার আত্মা শান্তি পাবে।

তিনি প্রত্যেক দেশবাসীর জীবনকে অর্থবহ করার লক্ষ্যে তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্যে জনগণের কাছে দোয়া চেয়ে বলে, দেশের প্রতিটি মানুষকে আরো ভালো ও উন্নত জীবন দিতে ব্যর্থ হলে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া দেশের স্বাধীনতা বৃথা যাবে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমরা দেশের স্বাধীনতাকে ব্যর্থ হতে দেব না, এটি ব্যর্থ হবে না এবং এটি ব্যর্থ হয়নি। তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) আদর্শ অনুসরণ করে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।

শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প চালু করতে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে, বিশেষ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, তিনি কেবলমাত্র তাঁর দলের শাসনামলে পেনশন স্কিমটি খুলতে চেয়েছিলেন। কারণ, তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে অন্য কোনও সরকার এই জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করবে না। কারণ, অতীতে তাদের একচেটিয়েভাবে নিজেদের ভাগ্য গড়তে দেখা গেছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা ক্ষমতায় থাকার সময় পেনশন স্কিম চালু করতে চেয়েছিলাম। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আমরা ক্ষমতায় আসলে ভালো হবে, অন্যথায় এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া, এরশাদ ও খালেদার শাসনামলে অমানুষিকভাবে নির্যাতন, হত্যা ও গুম করায় আওয়ামী লীগ তার দলের নেতাকর্মীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য আওয়ামী ফাউন্ডেশন গঠন করে পেনশন স্কিম খুলেছিল। তিনি আরো বলেন, তারা এই স্কিমটি চালিয়ে যেতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের প্রতিটি ব্যক্তিকে একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আনার সিদ্ধান্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি সবচেয়ে বড় বিষয় যে, আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে পেরেছি। এটি আমাদের আত্মতৃপ্তি দেয়।

এ সময় শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে দেশবাসীকেও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কারণ, দেশবাসী বারবার আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস দেখিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকে তাদের সেবা করতে পেরেছে।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর বাবা, মা ও ভাইদের হত্যার মাধ্যমে সবকিছু হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর বাবা, মা, ভাই কাউকে পাইনি। কিন্তু দেশবাসীকে পাশে পেয়েছি। তাই দেশের সবাইকে একটি সুন্দর জীবন দিতে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানন্ত্রী এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুবিধাভোগি তিনটি জেলা-গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুরে মত বিনিময় করেন এবং সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেলও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইভেন্টে যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর আবদুর রউফ তালুকদার। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা