কষ্ট পাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না
২৩ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম
শিক্ষার্থী নির্যাতন, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকার হরণের পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরবতায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সময়ের ছাত্র ইউনিয়নের এই সভাপতি বলেন, আমি খুব কষ্ট পাই যখন দেখি যে, জঘন্যতম একটা ঘটনা ঘটছে, একজন নারী বা একজন ছাত্রী নির্যাতিত হয়েছে কিন্তু সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরুনরা-ছাত্ররা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে না। অথবা সমাজে রাষ্ট্রে মানুষের আজকে সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে নেয়া হচ্ছে, মানবাধিকার হরণ করে নেয়া হচ্ছে, কোথায় আমরা তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেইভাবে কোনো প্রতিবাদ দেখতে পারছি না, রাস্তায় নামছে না।
গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের (নূর) উদ্যোগে আয়োজিত ‘নাগরিকদের সাংবিধনিক মৌলিক ও মানবাধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল নিজের ছাত্র জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা পাকিস্তান আমলে যখন ছাত্র ছিলাম তখন সমাজের জন্য, পরিবর্তনের জন্য, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ছাত্ররা-তরুণরাই সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি নব্বইযের যে ছাত্র গনঅভ্যূত্থান সেখানেও কিন্তু নেতৃত্ব ও আন্দোলনের মূল ভূমিকায় ছিলো ছাত্ররা। দুর্ভাগ্য আমাদের এখন পর্যন্ত সেই ধরনের তরুনদের, সেই যুবকদের, সেই ছাত্রদের সেইভাবে সামনে দেখতে পারছিনা।
তিনি বলেন, আমি অনেক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করেছি, আজকাল ছাত্ররা আসে না কেনো? আমি দশম শ্রেনীতে পড়ে একজন ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করেছিলো তোমাদের ক্লাসের বন্ধুরা কি হতে চায়? সে বলছে পলিটিক্স করতে চায়। আমি অবাক হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি। কারণ সে যে স্কুলে পড়ে সেখানে সমস্ত বড়লোকদের ছেলেরা পড়ে। কেনো পলিটিক্স করতে চায় জানতে চাইলাম। সে বললো যে, পলিটিশিয়ানদের অনেক টাকা। এই কথা শুনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে অনুষ্ঠানে হাসতে থাকেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা হাসির কথা নয়। আপনাকে হিসাব করতে হবে। আজকে যে সমাজ তৈরি হয়েছে, আজকে যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যে তার চোখের সামনে সে দেখলো পলিটিশিয়ানদের অনেক টাকা। অর্থ্যাৎ যারা সরকারি দল করছে তারা এতো বেশি বিত্তশালী হয়ে উঠেছে যেটা দেখে মনে হয় যে ওটাই দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম- আমরা আকৃষ্ট হয়েছি যে, সমাজ পরিবর্তনের কথা কে বলছে? আমাদের খুব বেশি আকৃষ্ট করতো সুকান্তের সেই কবিতা, অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি, জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশ ভূমি। তখন শিশু ছিলাম, এখন তো বৃদ্ধ। এখনও একই কথা বলতে হচ্ছে, অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশ ভূমি। তাহলে এই যে ৭৫ বছর বয়স, ৭০ বছর বয়স, ৬০ বছর বয়স, এই সময়গুলো আজকে আমাদের ব্যর্থ হয়ে গেলো, বৃথা হয়ে গেছে। এটার পরিবর্তন দরকার। এসবের পরিবর্তন আসতে হবে তরুনদের কাছ থেকে। সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য তরুন-যুবকদের জাগিয়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিএনপি মহাসচিব।
আওয়ামী লীগ অনর্গল মিথ্যাচার করে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মঙ্গলবার তাদের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) সাহেব অত্যন্ত ভদ্রলোক মানুষ। তিনি বলছেন যে, গুজবের কান দেবেন না। বিএনপি অনেকগুলো ফ্রন্ট তৈরি করেছে যে ফ্রন্টগুলোতে তারা এখন পয়সা দিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে। অথচ তাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) তো পুরোটাই মিথ্যার ওপরে। এই যে প্রবৃদ্ধি বা গ্রোথের কথা বলে এর যত ডাটা বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এটা আমার কথা নয়, এটা গবেষকদের কথা আপনি যদি জিয়া হাছানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ বইটা পড়েন সেই বইতে খুব পরিস্কারভাবে বিবিএসের পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করছে যে, পুরোটাই হচ্ছে মিথ্যা। আজকে এতো প্রবৃদ্ধি দেখেন, মাথাপিছু আয় দেখেন সব কিছু তাদের নিজেদের তৈরি করা।
আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা তো একটা রুচিশীলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। তারা যেভাষায় কথা বলে আমরা তো সেই ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত নই। বিষয়টা হচ্ছে যে, উনারা নাম ধরে গালিগালাজ করেন। আমরা মনে করি এটা কোনো রাজনৈতিক শিষ্টাচার না। অবশ্যই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শিষ্টাচার থাকার কথাও না। কারণ তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ হচ্ছে সন্ত্রাসী ল্যাংগুয়েজ। আমি এই কারণে বলি, আওয়ামী লীগ মানেই হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী কালচার। আপনি গ্রামে চায়ের দোকানে যাবেন কেমন করে বুঝবেন কে আওয়ামী লীগ করে কে করে না। দেখবেন যে টেবিলে ওপর যে সবচেয়ে বেশি টেবিল থাপড়াচ্ছে, জোরে কথা বলছে তাকে গালি দিচ্ছে আপনি নিশ্চিত থাকবেন সে আওয়ামী লীগ।
সরকার হাটতে বড় রকমের ঝাঁকুনি দরকার মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের নিজেদেরকে এদেশের মালিক মনে করে। নূরুল হক নূর বলছিলেন সংবিধানে দেখিয়ে যে, এদেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। না। তারা মনে করে এদেশের মালিক হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আরো সঠিক করে বলতে গেলে একজন ব্যক্তি অথবা তার পরিবার। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বড় রকমের ঝাকুনি দেয়া দরকার, বড় রকমের একটা যুদ্ধ দরকার-সংগ্রাম দরকার। এই সংগ্রাম এই যুদ্ধে আমরা আছি। যুদ্ধ-সংগ্রাম করে সবসময় পরিবর্তন এসেছে। আমরা যেকথাটা বার বার বলতে চাই যে, অভ্যুত্থান, সুনামির মতো অভ্যুত্থান ছাড়া এই ভয়াবহ যে দানব আমাদের বুকে চেপে বসে আছে একে সরাতে হবে না, সম্ভব হয় না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সবাই একসাথে কাজ করছি, লড়াই করছি-সংগ্রাম করছি। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো আমরা একত্রিত হয়েছি। শুধু রাজনৈতিক দল এক সাথে আসলে হবে না, মানুষকে এক সাথে হতে হবে এবং মানুষকে নিয়ে সংগ্রামে মধ্য দিয়ে এদেরকে সরাতে হবে। আমাদের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের একটাই মাত্র লক্ষ্য যে, এদেরকে সরিয়ে জনগণের একটা সরকার, জনগণের একটা পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে। আজকের সংগ্রাম-যুদ্ধ সবটাই করতে হবে তরুনদের। আসুন আমরা আমাদের তরুন সমাজকে সংগঠিত করি। তাদেরকে আরও সামনে আসার জন্য আমরা আহ্বান জানাই। সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন করব ইনশাল্লাহ।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নরুল হক নুরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, এবি পার্টির এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার রাশেদ প্রধান, এনডিপির আবু তাহের, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টির কেএম আবু হানিফ, জাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রুহুল আমীন, গণঅধিকার পরিষদের এসএম নূরে এরশাদ সিদ্দিকী, রাখাল রাহা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে নিখোঁজ দুই কিশোরের মরদেহ উদ্বার
পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ড্রোন হামলা, নারীসহ ৮ ফিলিস্তিনির মৃত্যু
সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে জড়িতদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় নয়: আসিফ মাহমুদ
ভারতে শঙ্করাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে হস্তক্ষেপ চাইলেন একদল বাংলাদেশি হিন্দু
অবশেষে সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
হাসিনাকে ভারত কি ফেরত পাঠাবে, আলজাজিরার প্রতিবেদন কি বলছে
সচিবালয়ে সেনাবাহিনী-বিজিবি মোতায়েন
কানু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি
বাংলাদেশ থেকে নথি না আসাতেই জামিন পিকে হালদারের?
সময় টিভির সাংবাদিক বরখাস্ত: এএফপির প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন হাসনাত
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলো স্থানীয়রা
গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার
সচিবালয়ের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে: নীলফামারীতে উপদেষ্টা আসিফ
সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিট
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই