বিএনপির আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে কৌশলী হবে আওয়ামী লীগ
২৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:২১ পিএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:২১ পিএম
নির্বাচনী আমেজ তৈরি করতে চায়
১ ও ২ সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের জনসভা
আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব রাখা ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সৃষ্টির চেষ্টা করা। এ ছাড়া যে কোনো মূল্যে বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে না দেওয়া। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি পালনের বদলে সেপ্টেম্বর থেকে জনঘনিষ্ঠ কর্মসূচিতে বড় জমায়েতের দিকে মনোযোগী হবে আওয়ামী লীগ। সারা দেশের বিভাগীয় ছাড়াও জেলা পর্যায়েও সমাবেশ করবে দলটি। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী আমেজ তৈরি করতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি যখন সেপ্টেম্বরে রাজপথে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করবে তখন পূর্ণ শক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগও মাঠে নামবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মস‚চির পর থেকে আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে। বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে জনমতের সঙ্গে বিভিন্ন মহল থেকে আলোচনা- সমালোচনা ওঠায় আপাতত এ কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে দলটি। তবে বিএনপি বড় কর্মসূচি দিলে আপাতত মহানগর আওয়ামী লীগকে দিয়ে তাৎক্ষনিক কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হতে পারে। আগামী ১ মাস বিএনপির বড় কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করলেও দলটির মূল দৃষ্টি থাকবে জনঘনিষ্ট কর্মসূচি দিয়ে নির্বাচনের মাঠ প্রসারিত করা।
গত ৩০ জুলাই বিএনপির ঢাকার প্রবেশ পথের ওই কর্মসূচির পরে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি পালন থেকে বিরত রয়েছে। তবে গতকাল বিএনপি কালো মিছিলের দিন আওয়ামী লীগের মহানগ দক্ষিণ থেকে শাস্তিÍ সমাবেশ করা হয়। তবে বিএনপির কর্মসূচিতে এ নিয়ে কোনো বাধা দেওয়া হয় নি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি সেপ্টেম্বরও আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করবে। যখন মনে হবে বিএনপি সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে, তখনই আবার রাজপথে আওয়ামী লীগ পূর্ণ শক্তি নিয়ে নামবে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আগের চেয়ে বেশি তৎপর থাকবে। প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করতে দ্বিধা করবে না।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপিকে দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব রেখে দলের আন্দোলনের গতি কমানোর কৌশল নেয়া হবে। একই সঙ্গে ঢাকায় উন্নয়ন ও জনঘনিষ্ঠ কর্মসূচি দিয়ে যাবে। আগামী সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ বেশ কয়েকটি জনসভা করবে। মূলত নির্বাচনী আমেজ আনার লক্ষ্য থেকে আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ঢাকাসহ সারা দেশে বেশ কিছু বড় জমায়েত করবে দলটি। এসব সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ (উড়ালসড়ক) বড় কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এসব প্রকল্পের উদ্বোধনকে ঘিরে সুধী সমাবেশ বা সমাবেশে বড় জমায়েত করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এ মধ্য দিয়ে নির্বাচনী আমেজ সারা দেশে তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে রাজনৈতিক সমাবেশ বা জনসভা করা হবে। সে হিসেবে আগামী ১ ও ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর দুটি স্থানে বড় দুটি সমাবেশ করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের তারুণ্যনির্ভর সমাবেশ, ২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে হবে সুধী সমাবেশ। দুটি সমাবেশেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১লা সেপ্টেম্বরে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মী ও তরুণদের জমায়েত করে ‘স্মরণকালের সর্ববৃহৎ’ ছাত্রসমাবেশ করতে চায় ছাত্রলীগ। আগামী ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। ছাত্রসমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য দায়িত্বভাগ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সারা দেশে ছাত্রলীগের সব ইউনিটের নেতা-কর্মী, ছাত্র, তরুণ ও যুবকদের ওই ছাত্র সমাবেশে আসার আহŸান জানাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রসমাবেশ সফল করতে সবাই নিজ ইউনিটে ও তার অধীন ইউনিটগুলোতে নির্বাহী সভা, বর্ধিত সভা, কর্মী সভার আয়োজন করবে। সমাবেশে জনদুর্ভোগ পরিহার করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন মিলনায়তনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, নেতাদের সঙ্গে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলার মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে দলটি। আগামী ২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে রাজধানীর আগারওগাঁওয়ে অনুষ্ঠেয় জনসভার প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে ওই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ২ সেপ্টেম্বর রাজধানী মহাসমুদ্র দেখবে, জনতার মহাসমুদ্র। সেই মহাসমুদ্র দেখার অপেক্ষায় আছি।
আগামী ২ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন ঢাকার উড়ালসড়কের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ চালু করে আগারগাঁওয়ে সমাবেশে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এই সুধী সমাবেশেই কয়েক লাখ লোকের জমায়েত নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুধু রাজধানী নয়, ঢাকা জেলা এবং আশপাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মীদের আনা হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ২রা সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা হচ্ছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার আশপাশের ১১ জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে। প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা রঙের ক্যাপ বা টি-শার্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগরের সব ওয়ার্ড ও থানা থেকে কয়েক লাখ নেতা-কর্মী জনসভায় উপস্থিতির প্রস্তÍুতি চলছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, গত ২ আগস্ট রংপুরে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশে বিপুল মানুষের উপস্থিতি ছিল। যা নিয়ে দলের মধ্যে পরবর্তী বিভিন্ন ফোরামে আলোচনায়ও হয়েছে। এ সমাবেশ সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতা, একাধিক মন্ত্রী ও স্থানীয় নেতারা দুই সপ্তাহ ধরে প্রস্তÍুতি নেন। এভাবে প্রতিটি সমাবেশেই বিপুলসংখ্যক জমায়েত নিশ্চিত করার বিষয়ে দলীয় নির্দেশনা আছে।
সারা দেশে জনসভা করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আগামীতে বিভাগীয়ভাবে কয়েকটি সমাবেশের পর জেলা পর্যায়েও সমাবেশ করবো। তবে নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের নেতা-কর্মীরা রাজপথে সতর্ক অবস্থায় থাকবে।
বিএনপির আন্দোলকে কিভাবে দেখছে আওয়ামী লীগ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করলে তো আমাদের কিছু বলার নেই। তবে তারা যদি রাজপথে নৈরাজ্য তৈরীর চেষ্টা করে তখন অবশ্যই জনঘনিষ্ট কারণে তাদের বাধা দেবে। এর বাইরে আমাদের কর্মীরা রাজপথে সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির ওপর চাপ প্রয়োগ করার বিভিন্ন কৌশল নেবে আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব রাখার চেষ্টা করবে দলটি। এ দিকে আজ শনিবার বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আওয়ামী লীগ-এর বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আদালতের দন্ডিত আসামী তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি’-তে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ-এর সভাপতিমÐলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। প্রধান আলোচক থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য শাজাহান খান।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা
বিশ্ববাজারে নতুন প্রযুক্তির গাড়ি উদ্ভাবনে ভক্সওয়াগন ও রিভিয়ানের চুক্তি
মণিপুরের জ্বলছে, নারী ও শিশুসহ নিখোঁজ ৬
গাজীপুরে আবারও ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ
ড.মুহাম্মদ ইউনুস জলবায়ু সম্মেলনে আজ দুপুরে ভাষণ দেবেন
আগামী ১৪ ই ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে 'ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড'
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রোজি কবিরের ইন্তেকাল
ঢাকা মহানগরীর ৫ থানায় নতুন ওসি
টেকনাফের হ্নীলা থেকে বিজিবির অভিযানে ১ লাখ পিস ইয়াবা, ১টি এলজি ও ১ রাউন্ড গুলিসহ এক রোহিঙ্গা যুবক আটক
‘উই আর নাহিদ’ হ্যাশট্যাগে ভক্তদের সমর্থন
জলবায়ু সম্মেলনে সাশ্রয়ী উপায়ে বিমানের ধোঁয়া কমানোর প্রস্তাব বিজ্ঞানীদের
এনআইবির মহাপরিচালক নিয়োগে সুপারিশ নিয়ে যা বললেন নাহিদ
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ঢাকায় আসছে
এবার হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় ইসরাইলি দুই ব্যক্তি নিহত
তৃতীয়বার কমলো স্বর্ণের দাম
আবারও পুলিশের ঊর্ধ্বতন ২৮ কর্মকর্তাকে বদলি
আবারও ইসরাইলি হামলায় গাজা-লেবাননে নিহত ৯১
প্রথম এয়ার ট্যাক্সি স্টেশন নির্মিত হচ্ছে দুবাইয়ে
শম্ভুর ধরা পড়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা
রাজবাড়ীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা