ডিজিটালে স্মার্ট অপরাধ
২৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:২১ পিএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:২১ পিএম
সাইবার থ্রেট আগামীর জন্য খুবই বিপজ্জনক হচ্ছে : নাজমুল করিম ভুইয়া
প্রতারণা ঠেকাতে বিটিআরসি-মন্ত্রণালয়ের কোনো মনিটরিং নেই : ইমদাদুল হক
প্রযুক্তির ব্যবহারে শিক্ষার সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত : অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন
প্রতিদিন গড়ে শতাধিক প্রতারণার অভিযোগ আসে : শেখ রাজিবুল হাসান
আর্থিক খাতে অপরাধ বাড়লেও আইনের শরণাপন্ন হওয়ার প্রবণতা কমছে : কাজী মুস্তাফিজ
ইন্টারনেট পৃথিবীকে এনেছে হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ ডিজিটালাইজেশনের যুগে প্রবেশ করেছে কয়েক বছর আগে। এখন সবকিছুই ডিজিটালেই হচ্ছে। ইন্টারনেট ছাড়া যেন কাজকর্ম-জীবন অচল। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ডিজিটালের আওতায় এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের এই উন্নয়ন সুবিধার পাশাপাশি নিত্য নতুন বিড়ম্বনা ও যন্ত্রণার কারণও হচ্ছে। ডিজিটালের নতুন যন্ত্রণার নাম সাইবার অপরাধ। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রযুক্তির সাহায্যে অপরাধী চক্র স্মাটভাবে নিত্যনতুন ফাঁদ পেতে অপরাধ সঙ্ঘটিত করছে। আর এ সাইবার অপরাধে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রতারণা। সামাজিকমাধ্যম, অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, এমএলএম বাণিজ্য, অনলাইন কেনাকাটা, প্রশ্নপত্র ফাঁস, হুমকি, পর্নোগ্রাফি, বুলিংসহ অন্তত ১৫ ধরনের অপরাধ সঙ্ঘটিত হচ্ছে, যা সমাজের জন্য দিন দিন বিষফোঁড়া হয়ে উঠছে। সাইবার সন্ত্রাস এখন শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, এর নেতিবাচক প্রভাব পরিবেশ, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রে পর্যন্ত পড়ছে।
জানতে চাইলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন-আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভ‚ঁইয়া বলেন, সাইবার থ্রেটটা আগামীর জন্য খুবই বিপজ্জনক। প্রযুক্তিতে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। নীতিতেও আছে সীমাবদ্ধতা। এ সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতেই আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। ব্যান্ডউইথ প্রবেশের সময়েই রাষ্ট্রের পক্ষেই এটি সুরক্ষিত কি না তা নিশ্চিত করা দরকার।
আইএসপিএবির প্রেসিডেন্ট ইমদাদুল হক ইনকিলাবকে বলেন, সাইবার প্রতারণার বিষয়ে বিটিআরসি কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কোনো মনিটরিং সেল নেই। তাহলে অনলাইন জুয়া, এমএলএম ব্যবসার নামে প্রতারণাসহ বড় ধরনের অপরাধ ঘটানোর সুযোগ থাকতো না। যারা ধরা পড়ে তাদের বিরুদ্ধেও উল্লেখ করার মতো শাস্তি দেখছি না।
বিজ্ঞানের বদৌলতে প্রযুক্তি যতই উন্নত হচ্ছে ততই তার অপব্যবহার বাড়ছে। সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছেন ঠিকই; কিন্তু অপরাধী চক্র অপরাধে নতুন নতুন পথ খুঁজছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সাইবার জগতে ওৎ পেতে আছেন অপরাধীরা। তারা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক, ব্যাংক, ই-মেইলসহ বিভিন্ন সামাজিক একাউন্টগুলোতে সার্বক্ষণিক লোকেট করতে থাকে। খোঁজ রাখে তার সামাজিক অবস্থানের ওপর। সুযোগ পেলেই হামলা চালায়। বিশ্বের ৮শ’ কোটি মানুষের যে কেউ হয়ে উঠতে পারেন সাইবার অপরাধী আবার যে কেউ হতে পারেন সাইবার হামলার ভুক্তভোগী।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সমাজ বিজ্ঞানী ড. মো. আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের একটি ঐহিত্যগত সমাজ থেকে আমরা যখন বিশ্বায়ন প্রভাবিত সমাজ ব্যবস্থার দিকে এগুতে যাচ্ছি, তখন এই পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সচেতনতা এবং শিক্ষাগত অবস্থান দরকার সেটা আহরণ করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের জরীপ মতে, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতি ১শ’ জনের মধ্যে ৮১ জনই কোনো না কোনোভাবে শিকার হচ্ছেন সাইবার অপরাধের। অথচ দিনের পর দিন কমছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগের হার। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১, ২০২৩-এ এসে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ইউনিটের এডিশনাল এসপি শেখ রাজিবুল হাসান ইনকিলাবকে বলেন, গড়ে প্রতিদিন শতাধিক অভিযোগ আসে তাদের কাছে। যদিও এর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত প্রতারণার শিকার।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বর্তমানে উঠতি বয়সীরা বিশেষ করে মেয়েরা প্রতিনিয়ত সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। এর ফলে অনেক তরুণ-তরুণী মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে আত্মহননের মতো জঘন্য পথও বেছে নিচ্ছে। কার্যত সাইবার অপরাধের লাগাম টানতে দেশে প্রচলিত আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি।
ঢাকার সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. নজরুল ইসলাম শামীম ইনকিলাবকে বলেন, কয়েকটি নির্দিষ্ট সাইবার অপরাধে গড়ে দৈনিক ৩৫ থেকে ৪০টি বিচারাধীন মামলার শুনানী হয়। নতুন মামলা অন্তর্ভুক্ত হয় এক ডজনের মতো।
বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন, ডিজিটালের সুবিধাগুলো নিতে হলে আমাদেরকে আরও স্মার্ট হতে হবে। জানতে হবে এর প্রোটেকশন ও সিকিউরিটি কন্ট্রোলগুলোর ব্যবহার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত, গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা, জাতীয় বাজেটে সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ দেয়াসহ সর্বোপরি সাইবার সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আমাদের দেশে সর্বসাধারণের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার চালু হয় ১৯৯৬ সালে। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির মতো। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সাথে বাড়ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধের প্রবণতাও। অনলাইনে পর্নোগ্রাফি, পর্নো ভিডিও, ছবি বিকৃতি, মানসিক হয়রানি ইত্যাদির শিকার হচ্ছে নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও। একইসঙ্গে মানুষের অনলাইনে বাড়ছে কেনাকাটাও। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের পর অনলাইনে লাইকি, টিকটক ও বিভো অ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্মে অশ্লীলতা এবং বøাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছেন তারা। সিআইডির সূত্রমতে, বিগো অ্যাপের লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়িয়ে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে ১০৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এর আগে চীনা নাগরিক ইয়াও জিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় বিগো বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াও জির বিরুদ্ধে ৭৯ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাইবার অপরাধের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অপরাধীরা সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিষাক্ত মাদক, ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার ভাইরাস। এমনকি ই-কমার্সের নামে ভুয়া পেজ খুলে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি হচ্ছে অহরহ। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ওয়েব সাইট হ্যাক, ক্রেডিট কার্ডের নম্বর চুরি, জাল সার্টিফিকেট তৈরি, জাল টাকা বা ভেজাল পাসপোর্ট, বিভিন্ন প্রকার দলিল-দস্তাবেজ কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরির ঘটনাও উদ্ঘাটিত হচ্ছে।
বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়, দেশের লাখো মানুষকে সর্বস্বান্ত করে অন্ততঃ ১০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এমএলএম কোম্পানি মেটাভার্স ফরেন এ´চেঞ্জের (এমটিএফই) লাপাত্তা হওয়া। অবিশ্বাস্য সহজ পথে অর্থ আয়ের আমন্ত্রণ জানায় এমটিএফই অ্যাপ। কিন্তু লাভের আশায় গিয়ে ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিয়েছে। এমটিএফই মাধ্যমে এ পর্যন্ত কত টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে অথবা এর গ্রাহকের সঠিক পরিসংখ্যান বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সাইবার পুলিশ এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে এমটিএফই’র হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে মোট আট লাখ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তাদের অ্যাপে।
ভুক্তভোগীদের একজন চট্টগ্রামের মো. পলিন আহমেদ বলেন, আসলে লোভ মানুষকে কোথায় নিতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো এমটিএফই। অথচ আর্শ্চয্যের বিষয় হলো মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে এই অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি যাদের মনিটরিং করার কথা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তারাও যেমন কিছু জানেন না। তেমনি জানেন না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনির সংশ্লিষ্ট ইউনিট।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, এমটিএফই নামের একটি কোম্পানি মানুষের টাকা নিয়ে স্ক্যাম করেছে বিষয়টি আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি।
কেস স্টাডি (এক) : ফেসবুকে ফ্রান্স প্রবাসী যুবক স্বপন চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় হয় ঢাকার তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা সুন্দরী তরুণী লাবনীর। দু’জনের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভিডিও চ্যাটিংয়ে রাতের পর রাত কাটিয়েছেন এ সুন্দরী। ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন ধরনের ছবিও পাঠিয়ে স্বপনকে দুর্বল করেন লাবনী। এক পর্যায়ে ব্যবসার কথা বলে স্বপনের কাছে ৫ লাখ টাকা ধার চান। ফ্রান্স থেকে মোট ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা পাঠান স্বপন। ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর থেকেই লাপাত্তা লাবনী। একইসাথে বন্ধ যোগাযোগ মাধ্যমের সব ধরনের আইডি।
কেস স্টাডি (দুই) : ত্রিশ বছরের যুবক মাসুম। বাড়ি চট্টগ্রামের হালিশহর। প্রতারণা উদ্দেশ্যে অন্ততঃ অর্ধশতাধিক নারীর নাম ও ছবি ব্যবহার করে ফেক ফেসবুক আইডি খুলেন তিনি। ওই সব আইডিতে আপত্তিকর ছবি পোষ্ট করতেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে গড়ে তুলতেন সখ্যতা। চট্টগ্রাম কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দিন অভিযোগের ভিত্তিতে জানান, ওইসব আইডি দিয়ে বিভিন্নজনের আইডি থেকে ফ্রেন্ডলিস্টের অন্যান্য সদস্যদের মেসেঞ্জারে অশালীন মেসেজ দিতেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণাসহ মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রমান মেলে।
কেস স্টাডি (তিন) : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া। সহপাঠীর সঙ্গে কলাবাগান এলাকায় থাকার জন্য বাসা খুঁজছিলেন। ফেসবুকের একটি গ্রæপের মাধ্যমে বাসা খোঁজা শুরু করেন। ওই গ্রæপে একটি বাসার ছবি দেখেন। পছন্দ হলে সেখানে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন। বাসাভাড়ার জন্য অগ্রিম টাকা পরিশোধ করতে বলা হয় তাকে। এরপর তিনি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েও দেন। এরপর ওই নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রতারণরার শিকার হন সুমাইয়া। পুলিশ বলছে, সুমাইয়ার মতো রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মানুষ এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
কেস স্টাডি (চার) : অনলাইনে দিনে ২০ মিনিট কাজ করে মাসে ১৮ হাজার টাকা আয় করুন’, ‘কোনো জামানত ছাড়াই ঋণ দিচ্ছি আমরা’ এমন চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে বহু মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। সাইবার অপরাধের এ ধরনের বেশ কয়েকটি মামলা তদন্ত করে বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার আশরাফ উল্লাহ বলেন, পাঁচ থেকে ছয় মাসের জন্য নতুন অ্যাপ খুলে ও ওয়েবসাইট চালু করে প্রতারণা করছেন চীনা নাগরিকেরা।
প্রতারণার আর একটি মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল অ্যাপভিত্তিকক্ষুদ্র ঋণ। বিনা জামানতে ঋণ দেওয়ার কথা বলে মানুষকে ফাঁদে ফেলেন। ওই অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য, ই-মেইল, মোবাইল নম্বরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে নেন। এরপর কাউকে ৫ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা দাবি করেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এ ধরনের প্রতারণার উদাহরন শুধু দু’একটি নয়। হাজার হাজার অভিযোগ রয়েছে। বিকাশ প্রতারকের খপ্পড়ে প্রতিদিনই অর্থ খোয়াচ্ছেন কেউ না কেউ।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ ইনকিলাবকে বলেন, দেশে বেড়েছে নতুন ধরনের সাইবার অপরাধের মাত্রা। তাদের জরিপ মতে, অ্যাপের মাধ্যমে কেনা কাটা এবং ঋণের নামে ফাঁদের মতো অভিনব পদ্ধতিতে নানা ধরনের আর্থিক অপরাধের প্রবণতা বাড়লেও কমেছে আইনের শরণাপন্ন হওয়ার প্রবণতা। ২৪ শতাংশ ভুক্তভোগীই জানেন না আইনি প্রতিকার কীভাবে নিতে হয়।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ টিকটকের মাধ্যমে করা অপরাধের ধরনগুলো বিশ্লেষণ করে বলেছে, ‘টিকটকে তারকা’ হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মূলত তরুণীদের লক্ষ্য করা হতো। ভুক্তভোগীরা একবার সেই ফাঁদে পা দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় ভয়ংকর নির্যাতন ও পরিশেষে মানসিক ট্রমা। এই ধরনের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও একাধিক তরুণীকে ভারতে পাচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য এবং ফাষ্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আইটি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান ইনিকলাবকে বলেন, সাইবার দুনিয়ারার পুরোটাই ধোঁয়াশায় প‚র্ণ। আমরা অজানা জায়গা থেকে আসা প্রযুক্তি ব্যবহার করি। ডিভাইসগুলো একদিকে যেমন বিনোদনের মাধ্যম; অন্যদিকে ভয়ঙ্কর বিপদজনক। বিটিআরসি’র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক ব্রিগে. জে. মো. নাসিম পারভেজ বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে টাকা পাওয়া যাবে মানুষ লোভের বশবর্তী হয়ে প্রতারিত হচ্ছে। তিনি ব্যাংকিং সীম ব্যতিত অনলাইনে অর্থনৈতিক কোনো লেনদেন না করার জন্য সকলকে সচেতন হতে বলেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা
বিশ্ববাজারে নতুন প্রযুক্তির গাড়ি উদ্ভাবনে ভক্সওয়াগন ও রিভিয়ানের চুক্তি
মণিপুরের জ্বলছে, নারী ও শিশুসহ নিখোঁজ ৬
গাজীপুরে আবারও ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ
ড.মুহাম্মদ ইউনুস জলবায়ু সম্মেলনে আজ দুপুরে ভাষণ দেবেন
আগামী ১৪ ই ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে 'ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড'
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রোজি কবিরের ইন্তেকাল
ঢাকা মহানগরীর ৫ থানায় নতুন ওসি
টেকনাফের হ্নীলা থেকে বিজিবির অভিযানে ১ লাখ পিস ইয়াবা, ১টি এলজি ও ১ রাউন্ড গুলিসহ এক রোহিঙ্গা যুবক আটক
‘উই আর নাহিদ’ হ্যাশট্যাগে ভক্তদের সমর্থন
জলবায়ু সম্মেলনে সাশ্রয়ী উপায়ে বিমানের ধোঁয়া কমানোর প্রস্তাব বিজ্ঞানীদের
এনআইবির মহাপরিচালক নিয়োগে সুপারিশ নিয়ে যা বললেন নাহিদ
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ঢাকায় আসছে
এবার হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় ইসরাইলি দুই ব্যক্তি নিহত
তৃতীয়বার কমলো স্বর্ণের দাম
আবারও পুলিশের ঊর্ধ্বতন ২৮ কর্মকর্তাকে বদলি
আবারও ইসরাইলি হামলায় গাজা-লেবাননে নিহত ৯১
প্রথম এয়ার ট্যাক্সি স্টেশন নির্মিত হচ্ছে দুবাইয়ে
শম্ভুর ধরা পড়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা
রাজবাড়ীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা