কক্সবাজারে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ দাম সাধারণের নাগালের বাইরে
২৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:১২ পিএম | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
বঙ্গোপসাগরে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাওয়ার পর কক্সবাজার সাগর উপকূলে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। প্রায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা কিন্তু দাম এখনো সাধারণের নাগালের বাইরে। দেশের সর্বাধিক ইলিশ আহরণ জেলা কক্সবাজার থেকে দিন দিন বেড়েই চলেছে ইলিশের সরবরাহ। জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে গত ১০ দিনে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয় ক্রেতারা বলছেন, কক্সবাজারে শত শত টন ইলিশ আসলেও রফতানীর চাপে আগের চেয়ে বেশ চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।
কক্সবাজারের শহর ও গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম চড়া। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছের সরবরাহ বেশি। কিন্তু দাম কমছে না। অথচ বছরের এই সময় ইলিশের দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকে। মূলত ঢাকা ও পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় মাছ ব্যবসায়ীদের চাহিদার কারণে স্থানীয় বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহ কম বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঢাকাসহ ভারতে বিপুল পরিমাণ ইলিশ রফতানি হচ্ছে। তাই বাজারে চাহিদা অনুযায়ী জোগান মিলছে না। যে কারণে বেশি দাম গুণতে হচ্ছে ইলিশ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত কক্সবাজার জেলার মানুষকে। স্থানীয় ক্রেতারা মনে করছেন, জেলার বড় বড় আড়তদাররা স্থানীয়দের চাহিদার চেয়ে ঢাকার ব্যবসায়ীদের রফতানীকেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইলিশের বাজারে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
জেলার প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারি বাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারি ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ কিনতে ঘাটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু সাধারণ ক্রেতারা ইলিশের দাম দেখে খালি হাতে চলে যায়। ফিশারি ঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘গত বছর এ সময় ইলিশের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ছিল। এবার এসব ইলিশের দাম প্রায় দিগুণ ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ সময় ইলিশের দামের এত ফারাকের কারণ হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ মাছ ঢাকা এবং ভারতে চলে যাচ্ছে।
ঘাটে মাছ কিনতে আসা কয়েকজন জানান, ‘নিষেধাজ্ঞা ও বৈরী আবাহওয়ার পর বেশ ভালোই মাছ পাওয়া যাচ্ছে বলে কিনতে এসেছেন তারা। কিন্তু এখানে এসে ইলিশে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম চায় এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৭০০ হাজার টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা। ছোট ইলিশের দাম চায় কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
শহরের ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে এক ট্রলারে জেলেদের জালে এক টানেই ৫২ লাখ টাকার ইলিশ ধরা পড়েছে। কক্সবাজারের পেশকারপাড়া এলাকার আবদুস সাত্তারের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে মাছগুলো ধরা পড়ে। ট্রলারের জেলে আবদুল গণী বলেন, ছয়দিন আগে একটি ট্রলার নিয়ে তারা ২১ জন জেলে সাগরে নামেন। উপকূল থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে জাল ফেললে একসঙ্গে ৭ হাজার ৩০০টি ইলিশ ধরা পড়ে। মাছগুলো ফিশারিঘাটে এনে বিক্রি করে ৫২ লাখ টাকা পেয়েছেন। শহরের নুনিয়াছটার আবদুল শুক্কুরের মালিকানাধীন আরেকটি ট্রলার ৭ হাজার ইলিশ বিক্রি করেন ৪৮ লাখ টাকায়। গতকাল দুপুরে ফিশারিঘাটে দেড় হাজার ইলিশ বিক্রি করে সাড়ে ১২ লাখ টাকা পেয়েছে শহরের ৬ নম্বর ঘাট এলাকার নাসির উদ্দিনের মালিকানাধীন একটি ট্রলার। নাসির উদ্দিন বলেন, কম-বেশি সব ট্রলারে ৫০০ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়ছে। মাছ ধরা পড়ায় খুশি জেলে শ্রমিক ও ট্রলারের মালিকেরা।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য বলছে, গত ১০ দিনে কক্সবাজার জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ সরবরাহ করা হয়েছে। ফিশারিঘাটের পাইকারি বাজার ছাড়াও টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ জেলার বিভিন্ন মৎস্যকেন্দ্র থেকে দৈনিক কমপক্ষে ৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। এর আগে গত বছর কক্সবাজারে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৩৯ হাজার ৩১৪ মেট্রিক টন। এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
গতকাল ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বেচাবিক্রির জন্য তোলা অধিকাংশ ইলিশের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি। বেচাবিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। বাজারে ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ৫৫০-৬০০ টাকায়।
ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা ও ইলিশ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, ফিশারিঘাট থেকে সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ২০ মেট্রিক টনের মতো ইলিশ ঢাকা-চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়েছে। ইলিশের দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের ইলিশের চাহিদা থাকার পরেও মানুষ ইলিশ পাচ্ছেনা। ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলছেন, কক্সবাজার থেকে ট্রাকে প্রতি কেজি ইলিশ ঢাকায় পাঠাতে পরিবহন ও প্যাকেজিং খরচ যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ কারণে ঢাকায় প্রতি কেজি ইলিশের বিপরীতে ১০ থেকে ২০ টাকার বেশি লাভ করা যাচ্ছে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ফিশারিঘাটে পাইকারি ইলিশ বিক্রির বাজারসহ টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপকূলে দৈনিক ৫০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ আহরণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ। আহরিত ইলিশের মধ্যে ৬০ ভাগের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি। ৩০ শতাংশের ওজন ১ থেকে দেড় কেজি। বাকিগুলো দেড় থেকে দুই কেজির। কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ইলিশ ধরতে সাগরে অবস্থান করছে জেলার ছয় হাজার ট্রলার। ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরলে ইলিশে সয়লাব হয়ে যাবে হাটবাজার।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে - উপদেষ্টা ব্রি:জে:(অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ
দুমকীতে বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় ছাত্রলীগ নেতা আটক
তারেক রহমানের ৩১ দফা ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রসংস্কারে-আরিফুল ইসলাম বিলাত
বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বপ্ন পূরণে নতুন পুলিশ সদস্যরা কাজ করবে- অ্যাডিশনাল আইজি
ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ, আবারও এগিয়ে মিলানোভিচ
ঢাবিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার
পোপ ফ্রান্সিসকে বাইডেনের প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল প্রদান
লিটনকে বাদ দেওয়ার যে ব্যাখ্যা দিলেন প্রধান নির্বাচক
টেকনাফ জিবির অভিযানে ২লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার
মোংলায় স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিক্ষার্থী নিহত
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এমডি ও পিডিকে অপসারণ সহ ৯ দফা দাবিতে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের মানববন্ধন
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা সহজ করল বাংলাদেশ
ওজন কমাও মাসুদ, না হলে মানুষ মাংস কেটে নেবে!
৭৫-এর বীরদের নিয়ে যে বার্তা দিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন
সম্মেলন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি সভাপতি নিহত
কিশোরগঞ্জে অটোরিকশা চালকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার
জামায়াতের ৫-১৫% বেশি ভোট নিয়ে আমার সন্দেহ আছে, যা বললেন ফাহাম
বিকাশের দোকানে হামলা করে ১০ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ
ঝালকাঠিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের মানববন্ধন