আইন লঙ্ঘনকারীদের ওপর জরিমানা আরোপ করতে হবে। তাহলেই তারা (আইন লঙ্ঘনকারীরা) সোজা হয়ে যাবে। এই মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। রাজধানীর ফ্লাইওভারের সৌন্দর্য রক্ষা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিকালে এ মন্তব্য করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের ডিভিশন বেঞ্চ।
ঢাকা নগরীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর জরিমানা করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, যারাই অনিয়ম করবে, আইন লঙ্ঘন করবে তাদের ওপর জরিমানা আরোপ করতে হবে। তাহলে আইন লঙ্ঘনকারীরা সোজা হয়ে যাবে। যেমনটা বিদেশে হয়। সেখানে কেউ আইন ভঙ্গ করলে জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়। যে কারণে সবাই আইন মেনে চলেন।

গত বুধবার ঢাকার ফ্লাইওভারের সৌন্দর্য রক্ষা সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে এ মন্তব্য করেন। হাইকোর্ট বলেন, আমাদের ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের সড়কে চলাচলের সময় সবাই আইন মেনে চলে। যখনই বাইরে আসে তখনই কেউ নিয়ম মেনে চলে না। নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেই সড়কে গাড়িগুলো চলছে। এটার একটা বিহিত করা দরকার। আমাদের ঢাকার অনেক রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি অচল। আবার যেগুলোতে সচল আছে সেখানে লাল বাতি জ্বেলে ওঠার পরেও গাড়ি নিয়ে সামনে এগিয়ে যায় চালকরা। কিন্তু বিদেশে দেখুন কীভাবে চালকরা ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলে। কারণ তারা জানেন সিগন্যাল অমান্য করলে জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। জরিমানা না দিলে সড়কে গাড়ি বের করা যাবে না।

‘বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য’ মামলার শুনানিতে আদালত এসব মন্তব্য করেন। এ মামলায় আগে ফ্লাইওভারের পিলারে পোস্টার লাগানো বন্ধসহ সৌন্দর্য রক্ষায় নির্দেশনা দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু এই নির্দেশনার পরও পোস্টার লাগানো বন্ধ করা যায়নি।
মামলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে শুনানির জন্য ওকালতনামা অ্যাডভোকেট মেজবাহুর রহমান। এইচআরপিবির পক্ষে শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ।
শুনানির শুরুতে সিনিয়র বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, আমাদের নির্দেশ ছিল ফ্লাইওভারে পোস্টার সাঁটানোকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের। পাশাপাশি ওইসব পোস্টার সরানোরও নির্দেশনা দেয়া ছিল। কিন্তু আদেশের কার্যকারিতা কোথায়?

এ পর্যায়ে মেজবাহুর রহমান বলেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় মগবাজার ফ্লাইওভার পড়েছে। এটা আমরা দেখভাল করি। এরইমধ্যে ফ্লাইওভারের লাইটিং ব্যবস্থা সচলের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, শুধু পদক্ষেপ নিলে হবে, দেখভাল করতেও হবে। আর মেয়রের পক্ষে তো মাঠে গিয়ে সবকিছু মনিটর করা সম্ভব নয়। সিনিয়র বিচারপতি বলেন, আমি তো মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করি। যাতায়াতের সময় দেখতে পাই বিভিন্নস্থানে ময়লা জমা করে রাখা হয়েছে। এগুলো যাদের পরিষ্কার করার দায়িত্ব তারা করছেন না। এদেরকে যারা মনিটর করবে তারাও নজরদারি করছেন না। যদি মাঠকর্মীদের ওপর নজরদারি থাকত তাহলে এই শহরে ময়লা পড়ে থাকত না।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, পোস্টার লাগানোর অপরাধে জরিমানা করা উচিৎ। প্রতি পোস্টারের জন্য ১০ টাকা করে জরিমানা করলে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো বন্ধ হয়ে যেত।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, এগুলো বন্ধে আইন অনুসরণ করতে হবে। আর কিছুর দরকার নাই। যারাই আইন লঙ্ঘন করবে তাদের জরিমানার আওতায় আনুন, দেখবেন সবকিছু নিয়মের মধ্যে চলে আসবে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে সরকারি সংস্থাগুলোকে আইনানুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি সবার সহযোগিতা লাগবে। যারা অবৈধ দখলদার তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। যদি দেখভালের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সরকারি সম্পদ বিনষ্ট হবে। এ সময় তিনি বলেন, অনেক সময় দেখি হেঁটে হেঁটে ফ্লাইওভার পার হচ্ছেন অনেকে। যে গতিতে গাড়ি ছোটে সেখানে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই হেঁটে ফ্লাইওভার পারাপার বন্ধ করতে হবে। মেজবাহুর রহমান বলেন, সব কিছু নিয়মের মধ্যে আনতে সময় লাগবে।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অসহনীয় যানজট। কীভাবে এই শহরে বাঁচব ! সময় লাগবে বলে যদি বসে থাকেন তাহলে কোনোদিনই এসব সমস্যার সমাধান হবে না। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের আইনজীবী কোথায়। তাদের কি এসব বিষয়ে মাথাব্যথা নেই। অ্যাডভোকেট মেজবাহুর রহমান বলেন, মাথাব্যথা থাকার দরকার। বিচারপতি বলেন, আইনজীবী যদি না থাকে তাহলে তো আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করার দরকার। পরে হাইকোর্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য ১৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।