দেশের গরিব শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা, দীর্ঘদিন ধরে অপরিশোধিত বিশাল অংকের টাকা দ্রুত পরিশোধ করে দেওয়ার জন্য ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানান সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনুযায়ী তিনি রাষ্ট্রকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছেন এবং তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদেরকে তাদের পরিশ্রমের ন্যায্য পাওনা শত শত কোটি টাকা পরিশোধ করেননি। এ দুটি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের দায়ের করা মামলা চলমান রয়েছে। তাই মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দেশ ও বিদেশ থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিবাদ বিবৃতি প্রদান করা অনুচিত কাজ হয়েছে। এটা উচিত কাজ নয়। কি কি কারণে ও কারা এই মামলাগুলো দায়ের করেছেন এই তথ্যগুলো একটু খোঁজ নিয়ে জানলে এই সম্মানিত ব্যক্তিদের একটি জনসংযোগ সংস্থার ব্যবস্থাপনায় এরকম সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতেন বলে আমরা মনে করি না।
নোবেল পুরস্কার পেয়ে যারা সম্মানিত হন তাদের উচিত বিখ্যাত পুরস্কারের সম্মানটুকু বজায় রাখার জন্য নিজের নৈতিকতা ও সম্মানবোধকে সবসময় সমুন্নত রেখে ব্যক্তিগত লোভের পথে পা বাড়ানো থেকে বিরত থাকা। কিন্তু তা না করে তারা যদি অন্য অপরাধীদের মতো অপকর্ম করতে শুরু করেন তখন রাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ ও আদালতকে বিচার করতেই হয়, কারণ এ দেশে আইনের চোখে ধনী-গরিব বা বিখ্যাত সাধারণ সবাই সমান। নোবেল পুরস্কার যারা পান তাদের মধ্যে আমরা সচরাচর যে ‘নবিলিটি’ লক্ষ্য করি, এক্ষেত্রে সেটি দেখা যাচ্ছে না।
বাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি যে, সকল সাক্ষ্য-প্রমাণাদি চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই এসব মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে। বিচার চলাকালে এই সম্মানিত ব্যক্তিরা চাইলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার প্রমাণাদি ও আইনি প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা পরীক্ষার জন্য কোনো বিশ্বখ্যাত আইন-পর্যবেক্ষকও নিয়োগ করতে পারেন কিংবা বিচার যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তারও দাবি করতে পারেন। কিন্তু তারা এই বিচার কাজ বন্ধ করার কোনো দাবি করতে পারেন না। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক ও তাদের সহায়তাকারীদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস অবর্ণনীয় কষ্টে লড়াই করে ৩০ লাখ শহীদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশে ধনী-গরিব সবাই আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকার ভোগ করবে। দেশ-বিদেশের এই সব বুদ্ধিজীবীরা তাদের করা উদ্ভট দাবির মাধ্যমে এক প্রকার আমাদের বিচারালয় ও বিচার ব্যবস্থাকে অসম্মান করছেন, যা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বাংলাদেশের মানুষ শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার পাওনা পরিশোধের নীতিতে বিশ্বাস করে। আমরা বাংলাদেশের গরিব শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দ্রুত পরিশোধ করে দেওয়ার জন্য ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, ঔদ্ধত্য দেখিয়ে কিংবা শত কোটি টাকা খরচ করে বিদেশের অতি নামী পত্রিকায় বিশাল বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার চাইতে গরিব শ্রমিকদের পাওনা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া অনেক বেশি নৈতিক কাজ। ##