ভয়ঙ্কর রূপে ডেঙ্গু
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৩৬ পিএম | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃতের সংখ্যা।
ইতোমধ্যে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধ, প্লাটিলেট পরিষেবা দাম বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীদের খবর জোগাতে হিমসীম খাচ্ছে পরিবারগুলো। গত সাপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার প্রতি ডেঙ্গু রোগীর জন্য ৫০ হাজার টাকা করে খরচ করছে। কিস্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই খরচ আরো বেশি। এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে।
রাজধানী ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ ব্যাপক আকারে বেড়েছে। বিছানা, মেঝে, বারান্দা কোথাও জায়গা মিলছে না। রোগী বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে সেবা প্রদান করতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্সরা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন তেমনি রোগীরাও পড়ছেন নানান ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায়। একই সঙ্গে রোগী বাড়ায় ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্লাটিলেট, পরীক্ষার জন্য কিট এবং ডিএনএস স্যালাইনের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের সঙ্কটে রোগীদের চিকিৎসা সোব ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া জেলা, উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বেড না থাকা, রক্তের প্লাটিলেট দেয়ার ব্যবস্থা না থাকা, আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ঢাকার বাইরের রোগীর চাপ বাড়ছে।
জাততে চাইলে ল্যাবএইড হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান সৈয়দ মাহবুব করিম শামীম বলেন, চলতি মাসে প্লাটিলেট পরিষেবার চাহিদা ৫-৬ গুণ বেড়েছে। তিনি জানান, ১-২৬ আগস্টের মধ্যে তারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এই পরিষেবা দেয়ার অনুরোধ পেয়েছিলেন এবং ২০০ জন রোগীকে তারা এই পরিষেবা দিয়েছেন। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মুখপাত্র নুরুল আলম দাবি করেছেন, আমাদের জানামতে প্লাটিলেট সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত কিটের কোনো সঙ্কট নেই। আর আমরা আমদানিকারকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানির অনুমতি দিয়েছি।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে সর্বশেষ আগস্ট মাসে। এ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়েছে, যা এর আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে দেড়গুণ বেশি। এ মাসে মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক। আগস্টের ৩১ দিনেই ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৩৪২ জন। আর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৪ জন। এছাড়া চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৪২ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ৫৯৭ জন। এর আগে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছিল ২০২২ সালে। গত বছর ৬১ হাজার রোগীর মধ্যে মারা যায় ২৮১ জন। এর আগে ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাবের সময় আক্রান্ত হয়েছিল সর্বোচ্চ ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন মানুষ, মারা যায় ১৭৯ জন। সে বছর বিশ্বে সর্বোচ্চ সংখ্যাক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় বছরটি বাংলাদেশের জন্যও ছিল সতর্কবার্তার। তারপরও ঘুম ভাঙেনি সরকারের। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং ঢাকার ২ মেয়র অবশ্য বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছেন, তারা ডেঙ্গু মোকাবিলায় পর্যাপ্ত কাজ করছেন। তবে ডেঙ্গুর প্রাথমিক বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা এখননো বংশবিস্তার করে চলেছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সমীক্ষা অনুসারে, এ বছর দেশব্যাপী গ্রামীণ এলাকায় এডিস মশার প্রকোপ বেড়েছে তীব্রহারে। গত কয়েক মাস ধরে গ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জরিপে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর সংক্রমণের জন্য দায়ী ডমিনেন্ট স্ট্রেইন হলো এডিস অ্যালবোপিকটাস। ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য দায়ী ভেক্টর এডিস মশা। এ প্রজাতির মশার দুটি প্রধান স্ট্রেইন- এডিস অ্যাজিপটি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস। এডিস অ্যাজিপটি মূলত শহরাঞ্চলে বেশি, আর গ্রামাঞ্চলে বেশি এডিস অ্যালবোপিকটাস। এসব মশা গাছের গুঁড়ি, কলাগাছের বাকল এমনকি পাতায় জল জমে থাকা পানিসহ বিভিন্ন জায়গায় ডিম পাড়ে।
কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এডিস এজিপটির তুলনায় এডিস অ্যালবোপিকটাস নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি জটিল। এই জটিলতার কারণে গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। এডিস অ্যালবোপিকটাস সাধারণত প্রাকৃতিক জলাধারে বেড়ে ওঠে। তাদের মতে, এডিস মশা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর মধ্যে পরিকল্পনা, সমন্বয় ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি সেপ্টেম্বর মাস হবে ডেঙ্গুর জন্য আরও ভয়ংকর। তাই দ্রুততার সাথে মশা নিধন করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতি সাবেক সভাপতি মঞ্জুর এ চৌধুরীর মতে, অন্যান্য দেশে ডেঙ্গু একটি প্রতিবেদন ‘রিপোর্টযোগ্য’ রোগ, যার অর্থ প্রতিটি ডেঙ্গু রোগীর ডেটা রেকর্ড করা আবশ্যক। আক্রান্তদের সঠিক সংখ্যা, তাদের অবস্থান এবং ধরন সংক্রান্ত তথ্যের অভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। একই সঙ্গে সব ডেঙ্গু রোগীর তথ্য ছাড়া এটা নির্মূল করা সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক প্রফেসর ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, এখন ঢাকার চেয়ে বাইরে রোগী বেশি হবে। কারণ, ঢাকার বাইরে আগেই ডেঙ্গু ছড়িয়েছে, এখন তার ফল দেখা যাচ্ছে। এই প্রবণতা নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ঢাকার চেয়ে বাইরের এলাকাগুলোতে ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তার রোধে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়নের তাগিদ দেন বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, ২০৩০ সালব্যাপী এই কর্মপরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে। কারণ, ঢাকার বাইরে শহরগুলোর মশা বিস্তার রোধে পরিকাঠামো শক্তিশালী নয়। এখন পরিকল্পনার মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ভবিষ্যতে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রোধে এটা অবশ্যই করতে হবে।
সূত্র মতে, সুনির্দিষ্ট যেকোনো বড় মাপের কাজের সূচনা করতে হয় একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে, যেটি একটি নির্দেশিকা হিসেবেও কাজ করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট পলিসি’; যেটির স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কেবল খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। সেটা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। মানুষ মনে করে ২ সিটি করপোরেশনের মেয়র মশার উপদ্রব থেকে মানুষকে রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু নীতিমালা না থাকায় এটা কেবল প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ। অবশ্য মশা নিয়ন্ত্রণ এখতিয়ারের মধ্যে না পড়লেও এ ক্ষেত্রে আগ্রহ ও তৎপরতা দেখিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি ঢাকা শহরের কোন এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সে বিষয়ে জরিপ পরিচালনা করে ওয়ার্ডভিত্তিক ভয়াবহতা তুলে ধরেছে।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের ডেঙ্গুর যে হিসাব তাতে ঢাকার মাত্র ৫৭টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং ৮১টি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালের তথ্য উঠে আসছে। তবে সারা দেশের প্রায় ১৬ হাজার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংক ডেঙ্গু চিকিৎসা দিচ্ছে। পাশাপাশি অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদফতরের খাতায় নেই। তবে ঢাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বাইরের এলাকাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্লাটিলেট কিটের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে তাদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে যাদের শরীরে প্লাটিলেট কমে যায়, তাদের যত দ্রুত সম্ভব প্লাটিলেট দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অ্যাফেরেসিস মেশিন নামের একটি ডিভাইস ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর্মীরা রক্তদাতার রক্ত থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করে থাকে, যা শিরার মাধ্যমে আক্রান্তদের শরীরে দেয়া হয়। এই ডিভাইসের মাধ্যমে রক্তদাতার রক্ত থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করার পর রক্ত পুনরায় দাতার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, রক্তদাতার কাছ থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করে তা রোগীর শরীরে দেয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকা মূল্যের একক ব্যবহারযোগ্য আমদানিকৃত কিট প্রয়োজন। এই কাজটি করতে বেসরকারি হাসপাতালে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং সরকারি হাসপাতালে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তবে, যেহেতু কিটের ঘাটতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রায়ই এই পরিষেবা স্থগিত রাখতে হয়, তাই প্লাটিলেট-সমৃদ্ধ প্লাজমা সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ৩-৪ জনের কাছ থেকে রক্ত নেয়া হয় এবং এই পদ্ধতিতে প্লাটিলেট সংগ্রহের পর দাতাদের আর রক্ত ফেরত দেয়া হয় না। এই কারণে গুরুতর রোগীর জন্য পরিবারকে তাৎক্ষণিক একাধিক রক্তদাতা জোগাড় করতে হয়। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে।
এদিকে গত মে মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় জুলাইয়ের শেষের দিকে অ্যাফেরেসিস মেশিন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কিটের সঙ্কট দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্লাটিলেট সংগ্রহের এই পরিষেবা এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও এই ঘাটতি আরও তীব্র হয়েছে।
গ্রিন লাইফ হাসপাতালও গত সপ্তাহে প্লাটিলেট সংগ্রহের পরিষেবা স্থগিত করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগস্টের শুরু থেকেই সেখানে কিট সঙ্কট দেখা দেয়। হাসপাতালটির একজন টেকনোলজিস্ট বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা বহিরাগত রোগীদের সেবা দেয়া স্থগিত করেছি। এখন আমাদের কাছে কোনো কিট মজুত নেই। বর্তমানে জাতীয় কার্ডিওভাসকুলার রোগ ইনস্টিটিউটে বহিরাগত রোগীদের পরিষেবা দেয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য এখনো ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় ডাক্তাররা বলছেন বাইরে থেকে স্যালাইন নিয়ে আসতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্যালাইন সঙ্কটের কথা না বললেও রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করছেন, হাসপাতালে ভর্তির সময়েই স্যালাইন লাগবে বলে ডাক্তারের সহকারীরা বলে দিচ্ছেন। সব ফার্মেসিতে এখন স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। ফার্মেসিগুলোতে গেলেই সাথে সাথে বলে দেয়া হচ্ছে তাদের কাছে স্যালাইন নেই। কিন্তু কিছু ফার্মেসি থেকে বের হয়ে গেলেই একশ্রেণীর লোক পেছনে পেছনে আসছে। কানে কানে বলছে, কিছু বেশি দিলে স্যালাইন দেয়া যাবে। রোগীর স্বজনরা কোনো কথা না বলে বেশি টাকা দিয়ে স্যালাইন কিনছেন। রাজধানীর শাহবাগের ফার্মেসির দোকানগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অবশ্য এটা ঠিক, সব দোকানে ডিএনএস স্যালাইন সরবরাহ নেই। রামপুরা, বনশ্রীর একজন ওষুধ বিক্রেতা জানিয়েছেন, জুলাই মাসেও তার দোকানে ডিএনএস স্যালাইন ছিল। ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। এরপর আর তাকে স্যালাইন দিচ্ছে না কোনো কোম্পানি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ৬টি ব্লাড ব্যাংকের কর্মচারীরা জানান, গুরুতর রোগীর জন্য হন্যে হয়ে প্লাটিলেট খুঁজছেন, সঙ্কটের কারণে এমন লোকদেরকেও ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিট আমদানিকারকরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারেন বলেও জানান তারা। রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ জাহিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের জন্যও বেদনাদায়ক। প্লাটিলেট সংগ্রহ পরিষেবা সেবা বন্ধের কথা জানালে মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিট সরবরাহকারীদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন আর ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করতে পারছি না। তারা সবসময় বলে যে অভাব আছে। অথচ অতিরিক্ত অর্থ দিলে ঠিকই তারা কিটের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা তাদের অতিরিক্ত অর্থ দিতে পারি না, যেহেতু আমরাও রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নিতে পারি না। অবশ্য চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা জানান, তিনি আশা করছেন শিগগিরই এই সঙ্কট কেটে যাবে।
বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টের সভাপতি প্রফেসর রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের সঙ্কট যে হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই সঙ্কট প্রতিরোধে উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমাদের সুসংগঠিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা না থাকায় এমনটা হয়েছে। একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা জানান, তাদের হাসপাতালে কিট সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বরিশাল ব্যুরো থেকে নাছিম উল আলম জানান, বরিশাল অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে গত মাসেই প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর সরকারি হাসপাতালগুলোতে এ পর্যন্ত যে ৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে, তার ২৯ জনই মারা গেছেন গত মাসে। যার মধ্যে বরিশালে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ২৭ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া দ্বীপজেলা ভোলাতে ৭ জন এবং পিরোজপুর এবং বরগুনাতেও আরো ৩ জন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। ডেঙ্গুতে মৃত ৪০ জনের মধ্যে অন্তত ২৫ জনই নারী। ইতোমধ্যে শুধু সরকারি হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যাটা ১৪ হাজারের কাছে পৌঁছেছে। এবার শহরের মত গ্রামাঞ্চলেও বিপুল সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তিকৃত ও মৃতদের একটি বড় অংশই শহরের বাইরের বলে জানা গেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন
আসাদের পতন, নিজের বেঁচে থাকার গল্প বললেন এক সিরিয়ান শরণার্থী
গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক
বঙ্গতে আসছে 'ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ'
সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন
পানামা খাল দখলের হুমকি ট্রাম্পের, ভর্ৎসনা পানামার প্রেসিডেন্টের
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা
পাবনা-৩ এলাকায় অ্যাডভোকেট রবিউলের গণসংযোগ ও কম্বল বিতরণ
পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়
জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া
স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭
রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ
ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা
উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন
ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা
উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের