জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশি^ক উত্তাপ-৪

বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য বাড়তে থাকবে বন্যা-খরায়

Daily Inqilab দ্য ইকোনোমিস্ট

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:২৯ পিএম

এল নিনো বছরগুলিতে গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠ বরাবর বাতাস প্রবাহিত হয়। উষ্ণ পানির প্রবাহ দক্ষিণ আমেরিকার দিকে ফিরে আসে, যা পুষ্টি সমৃদ্ধ শীতল পানিকে চেপে রাখে এবং মাছের সরবরাহ হ্রাস করে। এল নিনো প্রথম পেরুর জেলেরা আবিষ্কার করেছিলেন। তারা লক্ষ্য করেছিলেন যে, প্রতি তিন থেকে সাত বছর পর, সমুদ্রে কার্যত কোনও মাছ থাকে না। এল নিনোর কারণে মাছের আকাল নাটকীয় হতে পারে। ১৯৭২-১৯৭৩ সালের এল নিনোতে মাছের আাকালের কারণে পেরুর মৎসখাত প্রায় বন্থ হয়ে গিয়েছিল।

এল নিনোর সময় বাতাসের শ্লথ গতি নিশ্চিত করে যে, সুদূর পশ্চিমের মতো উষ্ণ পানি স্বাভাবিক প্রবাহ ঘটবে না। এর মানে হল, ইন্দোনেশিয়ার চারপাশের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে শীতল থাকবে এবং ফলস্বরূপ সেখানে কম বৃষ্টিপাত ঘটবে। পেরু এবং ইন্দোনেশিয়া সরাসরি এল নিনো দ্বারা প্রভাবিত। তবে আরও অনেক দূরে আরও অনেক জায়গা রয়েছে, যা আবহাওয়ার পরিবর্তনের শিকার হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও উত্তর-পূর্ব ব্রাজিল এবং পূর্ব অস্ট্রেলিয়াতে এল নিনো বছরে খরার প্রবণতা রয়েছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের রাজ্যগুলি এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ প্রায়ই বন্যার কবলিত হবে। প্রাক্তন ফায়ার কমিশনার গ্রেগ মুলিন্সের মতে, অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলস এই বছর তার নির্ধারিত মাত্রার মাত্র ২০শতাংশ পুড়েছে।

এল নিনো সাধারণত পূর্ব আফ্রিকায় যে আদ্র পরিস্থিতি নিয়ে আসে, আইওড বা ভারত মহাসাগরের দু প্রান্তের এল নিনোকে আরও শক্তিশালী করে দেয়। ফলে, বৃষ্টিপাত অত্যধিক হবে এবং চাষের জমি প্লাবিত হবেম ফলহানি ঘটবে এবং ফসল বাজারে আনার জন্য ব্যবহৃত রাস্তাগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ধরণের বিপর্যয় কৃষি বাজারেও বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। যেমনটি বর্তমানে হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারত সরকার কয়েক ধরণের চাল রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা ভারতের বার্ষিক রফতানির প্রায় অর্ধেককে প্রভাবিত করেছে, যা আয়তনের ভিত্তিতে চালের বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৪০ শতাংশের এর উৎস।

এইভাবে এল নিনো ২০১১ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী চালের দাম সর্বোচ্চে চড়িয়েছে। চালের বাজারের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। গমের আরও দামও বাড়তে হতে পারে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বব্যাপী ফসলের ১২ থেকে ১৫ শতাংশ উৎপাদন করে এবং এল নিনো বছরে দেশটির ফলন অর্ধেক নেমে যেতে পারে। গবেষণা সংস্থা এসএন্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইন্সাইটস এর পল হিউজ বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য বিষয়গুলির সাথে গমের বাজারের অনিশ্চিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফসল অস্ট্রেলিয়ান গম এবং এটিকে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’

পাম তেল আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য। গত বছর, পাম তেল সূর্যমুখী তেলের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করেছিল। কিস্তু এবার এর দুই বৃহত্তম রফতানিকারক ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় খরার ফলে পাম ফলের ফলন কমে যাবে। এস এসএন্ডপি গ্লোবালের আশঙ্কা যে, যদি প্রারম্ভিক এল নিনো মৃদু হয় তাহলে, মালয়েশিয়ার রফতানি ১০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে এবং যদি এটি গুরুতর হয়, তাহলে দ্বিগুণ কমবে। এল নিনো এইভাবে ভোজ্য তেলের জন্য ইতোমধ্যে বিস্তৃত বাজারে দ্বিতীয় ধাক্কা হিসাবে আসবে। (চলবে)


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সম্প্রীতির জন্য রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নাম বদলে হলো ‘যমুনা রেলসেতু’
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পঙ্গু করে ফেলছে : শিক্ষা উপদেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

কালিহাতীতে মারামারির সন্ধিগ্ধ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

কালিহাতীতে মারামারির সন্ধিগ্ধ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ড দলে নেই স্টোকস, ফিরলেন রুট

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ড দলে নেই স্টোকস, ফিরলেন রুট

ঝিকরগাছায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

ঝিকরগাছায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

কেবল সেবন নয় মাদক ব্যবসায়ও জড়িত তারকারা, ডিসেম্বরের পরে দেখে নেবে কে?

কেবল সেবন নয় মাদক ব্যবসায়ও জড়িত তারকারা, ডিসেম্বরের পরে দেখে নেবে কে?

গাবতলীতে আরাফাত রহমান কোকো ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি লালু

গাবতলীতে আরাফাত রহমান কোকো ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি লালু

যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর

নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর

৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা

আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা

নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা

নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা

খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো

খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো

কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু

কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু

বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১

কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা

কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন