কয়েক ধাপে সরানো হয় সোনা
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউজের গুদামে থাকা লকার থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, এক রাতে চুরি হয়েছে। আসলে পর্যায়ক্রমে কয়েক মাস ধরে সরানো হয়েছে সোনা। পরিকল্পিতভাবে সোনা রাখার গুদামে বসানো হয়নি সিসিটিভি। গুদামের গেটে সিসি ক্যামেরা ৪ মাস আগে নষ্ট হলেও নতুন করে লাগানো বা মেরামত করা হয়নি। সোনা চুরির মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে যাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিমানবন্দর থানা থেকে মামলাটি ডিবির উত্তরা বিভাগের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কাস্টম হাউজের নিজস্ব গুদামে সাধারণ কোনো ব্যক্তির প্রবেশ করার সুযোগ নেই। চাঞ্চল্যকর এ চুরির ঘটনার পর প্রকৃত অপরাধীদের আড়ালের চেষ্টা করা হয়েছে। ধামাচাপা দিতে না পেরে নতুন করে ‘ইনভেন্ট্রি’ শুরু করে হাউস কর্তৃপক্ষ। তখনই বেরিয়ে আসে লকারে থাকা ৫৫ কেজি সোনা গায়েবের তথ্য। আসলে দীর্ঘদিন ধরে সোনা সরানোর পর অডিটে যাতে ফেঁসে না যান সেজন্য কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সাজানো হয়েছে চুরির নাটক, করা হয়েছে মামলা।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গোডাউনের নিরাপত্তার দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন এ, বি, সি ও ডি শিফটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুম রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকরাম শেখ। তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার নামে চার সিপাহিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে জড়িত দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার নামও। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এক সিপাহিসহ দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।
তিনি আরও বলেন, মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গায়েব হওয়া সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালে আসা। অথচ মামলার এজাহার এবং ডিএম অনুযায়ী গায়েব হওয়া সোনাগুলো গুদামে এসেছিল চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে। হেফাজতে থাকা সিপাহিসহ আট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে এটা স্পষ্ট যে, বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদামে সুরক্ষিত লকার থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ লুটে জড়িত কাস্টমসেরই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি চক্র।
মামলার নথি ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে, সোনা চুরির এই ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে গত শনিবার। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় ৩ সেপ্টেম্বর। বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের নিজস্ব গুদামে দিনভর ইনভেন্টরি শেষে ৫৫ কেজি সোনা চুরি বা বেহাত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করে কাস্টম হাউজ। গত রোববার রাতে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন।
থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলার ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও এলিট ফোর্স র্যাবের গোয়েন্দা শাখা। সোনা উধাওয়ের ঘটনায় প্রশ্নে উঠেছে কাস্টমস গুদামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আটকের রসিদ (ডিএম) মোতাবেক ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জব্দ করা ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না দেওয়া নিয়েও। সোনা চুরির ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির বিমানবন্দর জোনের এডিসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আটজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ইতোমধ্যে চার সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। বাকি চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার মধ্যে দুজনের কাছ থেকে চুরি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় যোগাযোগ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে চুরি নয়, পরিকল্পিতভাবে সরানো হয়েছে সোনা। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কাস্টমস কর্মকর্তাদেরই সম্পৃক্ত থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সোনা একদিনে সরানো হয়নি। যেসব সোনা সরানো হয়েছে তা কিন্তু এ বছরেরই জব্দ করা।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়। অথচ কাস্টমসের গুদামে সিসিটিভি না থাকাটা বড় প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। স্বর্ণ চুরির আলামত নেই বললেই চলে। একটি বিষয় পরিষ্কার, কাস্টম হাউসের নিজস্ব গুদামে যার-তার প্রবেশের সুযোগ নেই। সুতরাং বাইরের কেউ এসে গুদাম থেকে স্বর্ণ নিয়ে যেতে পারবে না। আর বাইরের কেউ চুরি করতে এলে তো সবই নিয়ে যাওয়ার কথা। একটি-দুটি করে তো নেওয়ার কথা না। কাস্টমসের তথ্যমতে, ডিএম থেকে ‘আংশিক স্বর্ণ চুরি’ হয়েছে। প্রশ্নটা তাই এখানেই, চোর বাইরের নাকি ভেতরের কেউ।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, বিমানবন্দর কাস্টমসের গুদাম থেকে সোনা গায়েবের বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে ছায়া তদন্ত করছে। একাধিক টিম কাজ করছে। কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লে. কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকা বিমানবন্দরের কাস্টমসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা গায়েব হওয়ার ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশও কাজ করছে। র্যাবও গুরুত্বের সঙ্গে ছায়া তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত বেশ কিছু আমলযোগ্য তথ্য মিলেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ