ত্রিপুরায় ভূমিকম্প, কাঁপলো সিলেটও!
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩৫ এএম
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যে রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৪ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্পের আঘাতে গতকাল শনিবার কেঁপেছে সিলেটও। স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৪৮ মিনিটে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে বলে ভারতের জাতীয় ভূমিকম্প কেন্দ্র (এনসিএস) জানিয়েছে। তবে ভূমিকম্পে কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
এনসিএসের তথ্য অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। ভারতের জাতীয় ভূমিকম্প কেন্দ্র বলেছে, ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগর শহর থেকে ৭২ কিলোমিটার উত্তরপূর্বের ৪৩ কিলোমিটার ভূগর্ভে ভূমিকম্পটি রেকর্ড করা হয়। এদিকে এমনিতেই ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোন সিলেট। ভূমিকম্পের গতি প্রকৃতি হানা দিলেই আঁতকে উঠে সিলেটের জনজীবন।
সর্বশেষ গত ২৯ আগস্ট দুপুর ১টা ১৪ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয় সিলেটে। সিলেটের জৈন্তাপুর থেকে ১৮ কিলোমিটারের দূরে ভারতের ডাউকিতে ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থান। গত ১৪ আগস্ট সোমবার রাত ৮টা ৪৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে এক ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তার মাত্রা ছিল ৫.৫ সেটিও জৈন্তা ও গোইয়ানঘাট এলাকা থেকে হয়েছিল। মূলত সিলেটের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে ডাউকি ফল্ট। ২০২১ সালে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট এলাকায় একদিনে অন্তত পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে এবং দফায় দফায় এমন কম্পনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে।
সেই সময় আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় কোন ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে। বিদেশি এক নিউজ পোর্টালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সেই সময় চারটি ভূমিকম্পন অনুভূত হয় মাত্রা ছিল ৪.১, ৪, ৩ এবং ২.৮ মাত্রার। তখন কোন কোনটি এতো মৃদু যে সব স্টেশনে মাত্রা মাপাও যায়নি। তবে সিলেট কখন ভূমিকম্পন হয় তা বুঝে উঠা মশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেট অঞ্চল দীর্ঘ দিন ধরেই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে। বিশেষ করে তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশে। তারমধ্যে ঝুকিতে সিলেটের জৈন্তায় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। তবে এখন পর্যন্ত দেখা যতটি ভূকম্পন হয়েছে সবগুলোই ছোটো ধরণের ভূমিকম্পন হয়েছে।
ভূকম্পন গবেষকরা বলছেন যেহেতু সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া ওই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে। এই ভূকম্পনের মাত্রা গত ২০ বছরে দেশের ভেতরে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। গত কয়েক বছরে এই চ্যুতিরেখায় বেশ কিছু ভূমিকম্প হয়েছে। এর ফলে ‘ডাউকি ফল্ট’ বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা জাগাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণত রিখটার স্কেলে ৫-এর ওপরে গেলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প বলা হয়। এর নিচে হলে তাকে মৃদু কম্পন হিসেবে গণ্য করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ভূখ-ে উৎপত্তি সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই। যার মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। এ ছাড়া গত এক বছরে বাংলাদেশে ১৭টি ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ভূমিকম্প ছিল ৫ মাত্রার বেশি। যা ১৪ আগস্ট ভূমিকম্প ছাড়া বাকি দুটি ভূমিকম্পের একটি ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট হয়। যার মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১, আর আরেকটি ভূমিকম্প হয় চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি। ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ২। এ ছাড়া ১৪টি ভূমিকম্পের মাত্রাই ছিল ৪ থেকে ৫-এর মধ্যে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ আগস্ট যে ভূমিকম্প অনুভূত হয় তার উৎস ছিল ঢাকা থেকে ২২৮ কিলোমিটার দূরে সিলেটের কানাইঘাট ও ভারতের আসাম সীমান্তের কাছে। ভূগর্ভের ১০ কিলোমিটার গভীরে এর উৎপত্তি। ভূমিকম্পটির কম্পন রাজধানীসহ সারাদেশে ভালোই অনুভূত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান রুবায়েত কবির বলেন, গত ১৪ আগস্ট ভূমিকম্পের উৎসস্থলটি ডাউকি চ্যুতি বরাবর। সেখানে ভূমিকম্প বাড়ছে। এটা ওই এলাকায় বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের হিসাবে, সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। সিলেটকে বরাবরই ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রায়ই এখানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। গত দু’বছরে সিলেট অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে সৃষ্ট বেশ কয়েকটি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ, ছাতক, বিশ্বনাথ, সিলেট সদর এবং ডাউকি ফল্ট জৈন্তাপুরে কয়েকটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। ২০২১ সালে ১০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে যে ১০ দফা ভূমিকম্প হয়েছে। এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তি ছিল ডাউকি ফল্টে। এজন্য সিলেটের স্থানীয় এ ভূমিকম্প নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও চিন্তিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে। ফলে ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। আর সিলেট থেকে ঢাকার অবস্থান খুব বেশি দূরে নয়। সেখানে যদি ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয় তাহলে এর বড় প্রভাব গোটা দেশেই। বাংলাদেশের সিলেট ও ভারতের আসাম মিলিয়ে ডাউকি চ্যুতি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় তিনশত কিলোমিটার বিস্তৃত। এর আগে, ১৮৯৭ সালে ‘ডাউকি ফল্টে’ ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। ওই ভূমিকম্পের উৎস ছিল ঢাকা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। সে সময় ভূমিকম্পে ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলসহ ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এদিকে, সিলেটের স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, দেশে উন্নয়ন যজ্ঞের উৎসব চলছে। মেঘা প্রকল্পের বদৌলতে দেশ পরিণত হচ্ছে সিঙ্গাপুর-কানাডার কথিত আদলে। সেই সাথে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে একটি অগ্নিগর্ভের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের ভবিষ্যত। চারিদিকে অন্ধকার! এরকম সময়ে বারবার ভূমিকম্পের ধাক্কা নতুন এক শঙ্কায় বিচলিত করছে সিলেটের মানুষকে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চুয়াডাঙ্গার আন্দুলবাড়ীয়া বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল ডিসপ্লেতে ভেসে উঠল‘আ.লীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’
জন্মভিটায় গিয়ে অদ্বৈতের প্রতি শ্রদ্ধা
বিপিএল টি- ২০ উপলক্ষে সমন্বয় সভা করলো বিসিবি
৫৫ দিনের তারুণ্য উৎসবে শত আয়োজন
৫ সমন্বয়কের ফেসবুক আইডিতে আক্রমণ, নেপথ্যে জানা গেল যাদের নাম
এক বছরে ১৫০ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ, আটক ৮৬
ভারত থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় বেনাপোল সীমান্তে আটক ৭
মতলব দক্ষিণে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
৫৭৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে রূপালী ব্যাংক
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের জন্য হেলথকার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন
ঢাবি দাবা প্রতিযোগিতা শুরু
জোকোভিচ-কিরগিওস জুটির বিদায়
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের তালিকাভুক্তির সময় বাড়ল
হাসিনার বিরুদ্ধে সিনেমা করে হুমকির মুখে তিশা
ডুয়েটে টেকনিক্যাল সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত
প্রতিদিনের বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হলেন মোরছালীন বাবলা
‘লেখাপড়া না করে দেশ শাসন করতে গেলে আ.লীগের মতো ভুল করার আশঙ্কা রয়েছে’
বিরলে অবৈধ সুদ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বিরলে বুরো বাংলাদেশের আয়োজনে শীতবস্ত্র বিতরণ
বিরল প্রেস ক্লাবে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত