ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
সংকট নিরসনে সুজনের ১৭ দফা জাতীয় সনদের প্রস্তাব

‘দেশকে সুপার পাওয়ারগুলোর খেলার জায়গা বানানো হচ্ছে’

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থানে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। আলাপ-আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে কেউ আর বিশ্বাস করে না। দুই দলের অনড় অবস্থান দেশকে সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সংলাপ-সমঝোতার পথ একেবারে রুদ্ধ হয়নি। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দুই পক্ষের দ্রুত আলোচনার টেবিলে বসা প্রয়োজন। গতকাল রোববার ‘সমঝোতা নাকি সহিংসতা : কোন পথে আমরা?’ শীর্ষক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনলাইনে এই সভার আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বক্তারা আরো বলেন, সব পক্ষ ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার জন্য বিভোর। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আসলেই চিন্তিত। দেশ এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির না, সুপার পাওয়ারগুলোর খেলার জায়গা হয়ে গেছে।

সূচনা বক্তব্যে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর ২০২৩ থেকে ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ এর মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সবার চাওয়া এই নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক। কিন্তু বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অনুকূল না। তিনি আরো বলেন, সুজর যে প্রস্তাবনা দিয়েছে এই বিষয়গুলো প্রাথমিক বিষয় হিসেবে ধরে নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। ঐকমত্য সৃষ্টির মাধ্যমে ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন ও স্বাক্ষর করা সম্ভব হলে রাজনীতিতে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হবে। তবে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন। নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন হবে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার।

সভায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন, তারা ভাবছেন রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে বেশি বেশি টাকাপয়সা কামানো যায়। উত্তরোত্তর ধনী হওয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁদের মিষ্টি কথায় সরানো যাবে না। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকট আছে, যেটার সমাধান দেখছি না। তবে বিশ্বাস করি, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। সময় কম থাকায় তাড়াহুড়ো আছে। সব না হলেও কিছুটা সমাধান করতে হবে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সংকট সমাধানে কী করতে হবে, সেগুলো নিয়ে অতীতেও আলোচনা হয়েছে। দুটি বড় রাজনৈতিক দলের ভোট প্রায় সমান সমান। সমাজের একটা বড় অংশকে বাদ দিয়ে দেশ এগোতে পারে না। সমঝোতার বিষয়টি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অলীক চিন্তাভাবনা মন্তব্য করে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সব পক্ষ ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার জন্য বিভোর। তারা বিকল্প চিন্তা করতে পারে না। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আসলেই চিন্তিত। দেশ এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির না, সুপার পাওয়ারগুলোর খেলার জায়গা।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিলে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ভোটার তালিকা করতে হবে। এটি একটি সিরিয়াস ধারা। পুরোপুরি সংবিধান পরিপন্থী এটি নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে বড় রকমের গন্ডগোল হবে। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ৯১(ক) ধারায় সংশোধনী এনে নির্বাচনের ওপর কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করা হয়েছে।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক সেকান্দার খান বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। সাধারণ মানুষকে নিয়ে তারা চিন্তা করছে না। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সচেষ্ট হলে নির্বাচন নিয়ে তাদের ভয় থাকত না।
বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলনে গুণগত পরিবর্তন রয়েছে বলে জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য ৩১ দফা ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে আলোচনা সম্ভব না। সরকার একগুঁয়েমি করলে আন্দোলন করেই অধিকার আদায় করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, যাঁরা ৩১ দফা দিয়েছেন, ক্ষমতায় গেলে এই দফা তারা বাস্তবায়ন করবেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুবিধা নিয়ে ক্ষমতায় এসে সেই পদ্ধতি বাতিল করেছে।

সাংবাদিক সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ১৯৯৬ সালে যে পরিস্থিতির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল, গত ২৭ বছরে যে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের লোকজন আরও বেশি দলীয়করণ হয়েছে। আগামী ৩ মাসে সমাধান কঠিন। তবে রাজনৈতিক পক্ষগুলো একমত হলে অন্তবর্তীকালীন কোনো ব্যবস্থা হতে পারে।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজপথে দাবি আদায় করতে হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছিল। কেমন নির্বাচন হয়েছে সবাই দেখেছে। তাই আলোচনার ওপর বিশ্বাসও থাকতে হবে।আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, সব সমস্যার সমাধান এক বসাতে হয়ে যাবে না। এককভাবে কোনো দলের পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সবার আগে সমঝোতা চাই, এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসতে হবে।

সভায় সুজনের পক্ষ থেকে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ১৭ দফার জাতীয় সনদের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার এটি পড়ে শোনান।
জাতীয় সনদে সম্ভাব্য ঐকমত্যের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, কার্যকর জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, প্রশাসনিক সংস্কার, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণের মতো বিষয় রয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা