খুলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
খুলে দেওয়া হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। অথচ টানেল লাগোয়া চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। মূল সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও প্রকল্পের পুরো কাজ ১১ বছরেও শেষ হয়নি। পতেঙ্গা সাগর তীরবর্তী ১৪ কিলোমিটার এ সড়কের সাথে এখনও মহানগরীর সংযোগ চালু হয়নি। এ মেগা প্রকল্পে মহানগরীর সাথে যাতায়াত সহজতর করতে তিনটি ফিডার রোড নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও মাত্র একটি চালু করা হচ্ছে। এর ফলে কর্ণফুলী টানেল চালু হলে টানেল হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ সৃষ্টিকারী এ রিং রোডে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আগামী অক্টোবরে খুলে দেওয়া হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টানেলটি চালু হলে সিটি আউটার রিং রোডে যানবাহনের চাপ ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বেড়ে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগে। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ চলছে। খুব শিগগির এ টানেলটি চালু হলে আউটার রিং রোড হয়ে মহাসড়কমুখী যানবাহনের চাপ আরও এক দফা বাড়বে।
রিং রোডের পাশেই চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। বে-টার্মিনাল চালু হলে যানবাহনের চাপ প্রায় দ্বিগুণ হবে। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এত বেশি সংখ্যক যানবাহনের চাপ সামাল দেওয়ার মত সক্ষমতা নেই বেড়িবাঁধ কাম সিটি আউটার রিং রোডের। কর্ণফুলী টানেলের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে চার লেনের ১৪ কি.মি. সড়কটি কাট্টলীর রাসমনি ঘাট এলাকায় গিয়ে টোল রোডের সাথে মিশে গেছে। সেখান থেকে ফৌজদারহাট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত সড়কটি দুই লেনের। ফলে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ওই অংশে অচলাবস্থারও আশঙ্কা করছেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।
২০২০ সালে আউটার রিং রোডটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও এ সড়কের তিনটি সংযোগ সড়ক বা ফিডার রোডের একটিও চালু হয়নি। তবে নগরীর সাগরিকা থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট প্রান্তে ফিডার রোড-৩ এর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। ওই সংযোগ সড়কটি ৯০ মিটার দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভারের কাজও শেষ হয়েছে। টানেল চালুর আগেই এ ফিডার রোডটি খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সাগরিকা বিভাগীয় স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে তৈরি হয়েছে ফিডার রোডটি। ওই সড়কের ফ্লাইওভারটি গিয়ে নামবে স্টেডিয়ামের পাশে সাগরিকা রোডের সাথে। এতে অলঙ্কার মোড় থেকে গাড়িগুলো সহজে এই ফিডার রোড হয়ে আউটার রিং দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এ ফিডার রোডের মাধ্যমে মহানগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোর্ট কানেকটিং রোডের সংযোগ স্থাপিত হবে।
নগরীর পতেঙ্গা খেজুরতলা থেকে আরও একটি ফিডার রোড নির্মাণ করা হচ্ছে। এ রোডটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু মাঝপথে এক অংশের জমি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় সেখানে কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে এ ফিডার রোডটিও সহজে চালু করা যাবে না। নগরীর বড়পোল থেকে সিএসডি গোডাউন হয়ে হালিশহর দিয়ে আরও একটি ফিডার রোড নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেখানে চট্টগ্রাম ওয়াসার সুয়্যারেজ প্রকল্পের কাজের জন্য ওই ফিডার রোডটি আটকে যায়।
তিনটি ফিডার রোডের একটিও চালু না হওয়ায় প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিটি আউটার রিং রোডের পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ ওই সড়ক হয়ে মহানগরীতে প্রবেশ করতে যানবাহনগুলোকে দীর্ঘপথ ঘুরে ফৌজদারহাট হয়ে বায়েজিদ এক্সেস রোড দিয়ে নগরীতে আসতে হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টানেল চালু হলে আউটার রিং রোড হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার যানবাহনের পাশাপাশি উত্তর চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ির যানবাহনগুলোও এ সড়ক দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার যাতায়াত করবে। ফলে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক-পশ্চিমের উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক আহমেদ বলেন, ১১ বছরেও আউটার রিং রোডের ফিডার রোডসহ পুরো কাজ শেষ হয়নি। এ অবস্থায় টানেল চালু হলে যানবাহনের চাপ বাড়বে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তিনটি ফিডার রোডের মধ্যে একটি চালু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাতে রিং রোডের কার্যকারিতা বাড়বে। তবে ফিডার রোডের সাগরিকা অংশে ইউটার্ন এবং আন্ডারপাস নির্মাণ করা না হলে সাগরিকা থেকে সিটি গেইট এবং পোর্ট কানেকটিং রোডে যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাগরিকা এবং সিটি গেইটে একাধিক বাস টার্মিনাল থাকায় যানবাহনের চাপ এমনিতেই বেশি। তার উপর তিনটি ফিডার রোডের স্থলে একটি ফিডার রোড চালু হওয়ায় সাগরিকা হয়ে রিং রোডমুখী যানবাহনের চাপও বেড়ে যাবে। এতে করে ওই এলাকায় যানজট হতে পারে। এমন আশঙ্কা জানিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর কাছে ফিডার রোড এলাকায় একাধিক ইউটার্ন এবং আন্ডারপাস নির্মাণের পরামর্শ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, নানা জটিলতার কারণে দুইটি ফিডার রোডের কাজ এখনও শেষ না হলেও সাগরিকা অংশে কাজ শেষ হয়ে গেছে। টানেল চালুর আগেই সেটি খুলে দেওয়া হবে। টানেলমুখী যানবাহনের চাপ সামাল দিতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিটি আউটার রিং রোড যেখানে শেষ হয়েছে সে অংশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত ছয় লেন করা হবে। বাকি দুইটি ফিডার রোড চালুর পাশাপাশি চট্টগ্রাম ইপিজেডের সাথে আরও একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মূল রিং রোডের পতেঙ্গা অংশে একাধিক ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
সিটি আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার কোটি টাকা। দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় ২৭শ’ কোটি টাকা করা হয়। সর্বশেষ আরও প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। কর্ণফুলী টানেল ও মহানগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গায় বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর অতিরিক্ত যান চলাচলে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে দুটি ছোট ফ্লাইওভার এবং দুটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে পতেঙ্গা এলাকায়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, টানেল পুরোদমে চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একাধিক ইপিজেডের পণ্যবাহীসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহন আউটার রিং রোড ধরে চলাচল করবে। অপরদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে মহানগরীর যানবাহনগুলো মাত্র ২০ মিনিটে পতেঙ্গা পৌঁছাবে। পতেঙ্গা সাগরপাড়ে প্রতিদিন জড়ো হওয়া শত শত গাড়ির সাথে বন্দরের পিসিটি, বে-টার্মিনালের গাড়ি মিলে ভয়াবহ যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা টানেল, আউটার রিং রোড কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যান চলাচল ব্যাহত করবে। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এসব প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে সাধারণ মানুষ।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাস বড়–য়া বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে সমন্বয়ের অভাব এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলেই এসব মেগা প্রকল্পের ব্যয় এবং সময় দুটোই বাড়ছে। আর তাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়েও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। জবাবদিহিতা না থাকায় উন্নয়নের নামে জনগণের অর্থের অপচয় চলছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কালিহাতীতে মারামারির সন্ধিগ্ধ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ড দলে নেই স্টোকস, ফিরলেন রুট
ঝিকরগাছায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
কেবল সেবন নয় মাদক ব্যবসায়ও জড়িত তারকারা, ডিসেম্বরের পরে দেখে নেবে কে?
গাবতলীতে আরাফাত রহমান কোকো ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি লালু
যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর
৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা
নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা
খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো
কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু
বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১
কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম দুর্ভোগে পথচারীরা
মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা
বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন