আ.লীগকে মির্জা ফখরুল

সেলফিটা বাঁধিয়ে গলায় ঝুলিয়ে ঘুরেন

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে ঢোল পেটাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেলফি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, সেলফিটা বাঁধিয়ে গলার মধ্যে ঝুলিয়ে ঘুরেন। এই কদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে কত কথা। এখন কি বুঝব, আপনি সেন্টমার্টিন দিয়ে দিয়েছেন? সেলফির জন্য কিন্তু র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা কিংবা ভিসানীতি উঠে যায়নি। ভোটটা ঠিকমতো না করলে কোনো সেলফিই রক্ষা করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, তারা সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। আমরা সেই অবস্থানের পাশাপাশি জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিই।

গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব নাকি বলেছেন, ফখরুল এখন কী বলবেন? আমি বলি, আমার পরামর্শটা নেবেন? সেটা হচ্ছে, এই ছবিটা বাঁধিয়ে ওইটা গলার মধ্যে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। সেটা আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করবে; বোঝানোর চেষ্টা করেন জনগণকে আমেরিকা-বাইডেন আমার সঙ্গে আছে।

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কয়দিন আগে তিনি বললেন, আমেরিকা এখন বলছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নাকি তাদেরকে দিয়ে দেওয়ার জন্য। যেহেতু সেন্টমার্টিন দ্বীপ দিচ্ছে না সেই জন্য আমেরিকা নাকি তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। তাহলে এখন কি বুঝব আমরা, আপনি সেন্টমার্টিন দ্বীপ দিয়ে দিয়েছেন?

তিনি বলেন, সেলফির জন্য র‌্যাবের ওপর থেকে স্যাশন উঠে যায়নি, ভিসা নীতির পরিবর্তন হয়নি। তার জন্য আবার ডেমোক্রেসি কনভেনশন ডেকে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সুতরাং ভেবে-চিন্তে কথা বলবেন। এত নিঃস্ব হয়ে গেছেন যে, বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে এখন ঢোল পেটাচ্ছেন, আমরা জিতে গেছি! জেতাবে তো বাংলাদেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে। সেই ভোটটা ঠিক মতো হওয়ার ব্যবস্থা করেন।

আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ দেশকে, জাতিকে জিম্মি বানিয়ে আবার একটা নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দিতে এত ভয় কেন? নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা ১০টা আসনও পাবে না। জনগণ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না এই সরকারকে।

সাইফুর রহমানের অবদানের বর্ণনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশকে মনে রাখতে হবে, অর্থনীতির মৌলিক পরিবর্তন তিনি নিয়ে এসেছিলেন। আজকে সরকার মিথ্যা কথা বলে, জনগণকে ভুল বুঝিয়ে, বাগাড়ম্বর করে চেষ্টা করেছে। এখন আর জনগণকে পারে না। এ জন্য ওরা এখন শক্তি প্রয়োগ করে। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি-আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমলাতন্ত্রকে দিয়ে জোর করে ক্ষমতায় বসে থাকতে চায় এবং সেটাই তারা করে আসছে। তারা বলে, আমাদের অধীনেই নির্বাচন হবে, আমরা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করব। সবাইকে বলে। তোমাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে! তার আলামত তো আমরা এখন থেকেই দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি, বিরোধী দলের সব নেতাকর্মীকে তোমরা গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছো। মিথ্যা মামলা করছো, গায়েবি মামলা করছো।

তিনি বলেন, পুলিশের আইজি সাহেব বলেন, গায়েবি মামলা কী ওনি জানেন না। জানার কথা না, কারণ মামলাগুলো ওনি দেন তো না; ওনার পুলিশ দেয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) সম্পূর্ণ দেশকে, জাতিকে জিম্মি বানিয়ে আবার একটা নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি; বিএনপি একা না, কারণ এই সমস্যাটা বিএনপির একার না, এই সমস্যা সমগ্র জাতির। আজকে সমগ্র জাতি বঞ্চিত হচ্ছে ভোটের অধিকার থেকে। আমাদের সংবিধানে যেটা বলা আছে, এটা জনগণের রাষ্ট্র। জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী দেশ চলবে। জনগণ যাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে তারাই শুধুমাত্র দেশ পরিচালনা করবে পাঁচ বছরের জন্য। এখন সেটাকে তারা পুরোপুরি বদলে দিয়ে এটা আওয়ামী লীগের সংবিধানে পরিণত করেছে। সে জন্য আবারো তারা ওই নির্বাচনে যেতে চায়। তার জন্য কত রকমের ব্যবস্থা তারা করছে! প্রতিদিন অসংখ্য মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

এদিকে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে এই সরকার ও ঢাকার দুই সিটির মেয়র ব্যর্থ হয়েছে। অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে চরম ব্যর্থ সরকার। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বিকার।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যখাতে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ বছর অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ডেঙ্গু মৃত্যুদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ২০ জন করে লোক মারা যাচ্ছে। এ বছর মোট মৃত্যু ৭১৬ জন যার মধ্যে ৫১৩ জন ঢাকাতে এবং ২০৩ জন ঢাকার বাইরে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৩৫ জন যার মধ্যে ৬৬ হাজার ৬৫ জন ঢাকাতে এবং ৭৯ হাজার ২৭০ জন ঢাকার বাইরের।

মির্জা ফখরুল বলেন, নি¤œমানের কীট ও সরকারের উদাসীনতার জন্য আমরা জানি না কি পরিমান রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, আসল রোগীর সংখ্যা কত তা সহজেই অনুমেয় যে, কয়েকগুন বেশি হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না, আবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে মানুষ। লাশের সারি প্রতিদিনই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিশুরা মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে, মৃতের একটা বড় অংশ শিশু। সম্প্রতি ৭ দিনের ব্যবধানে ২ সন্তান হারিয়ে ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার খবর কি ব্যর্থ এই সরকারের বিবেককে নাড়া দেয় না? তাদের এসব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, জবাবদিহিতা নেই। শুধুমাত্র সরকারের দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে এই রোগ এখন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, শুধু ঢাকা সিটিতেই মশা নিধনে বাৎসরিক বাজেট প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা যা ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই আত্মসাত করছে। ডেঙ্গু শুরু হওয়ার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মেয়র পরিবারের প্রমোদ ভ্রমণেই প্রমাণিত হয় এই রোগ নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা ও উদাসীনতা। মানবতাহীন অনির্বাচিত গণবিরোধী সরকার বলেই তারা জনস্বাস্থ্যের প্রতি ভ্রক্ষেপহীন। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই মেয়রের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছি।###


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
কুমারখালীতে রাতের আঁধারে সড়কের অর্ধশতাধিক গাছ কর্তন
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
ধামরাইয়ে ২টি ড্রেজার মেশিন জব্দ
ছিনতাইকারীর হাতে খুন হন হাফেজ কামরুল
আরও

আরও পড়ুন

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

বিহারিরা কেমন আছে

বিহারিরা কেমন আছে

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

কিউবায় সমাবেশ

কিউবায় সমাবেশ