নির্বাচনের আগে ‘দলের অনুপ্রবেশকারীরা’ ভাবাচ্ছে আওয়ামী লীগকে
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বেশ চিন্তায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় এই অনুপ্রবেশকারী ক্ষমতার স্বাদ পেতেই দলে প্রবেশ করেছে। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির চেষ্টায় রয়েছে দলের এই অনুপ্রবেশকারীরা। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, দলের এই অনুপ্রবেশকারীদের অনেকেই এখন রং বদলাতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে মুখোশ খুলতে শুরু করেছে অনুপ্রবেশকারীদের কেউ-কেউ। এ ছাড়া নির্বাচনের আগেই সুযোগ বুঝে দলের এই অনুপ্রবেশকারীরা দিক পরিবর্তন করতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সুবিধাবাদীরা দলবদল করতেও শুরু করেছে। তাদের অনেকে এত দিন আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে ছিল। অনুপ্রবেশকারীদের কেউ-কেউ আবার দলের নীতি আদর্শবিরোধী কাজ করে আওয়ামী লীগের গায়ে কালিমা লেপন করতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। মূলত বর্তমানে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন দলের এই ‘হাইব্রিড’ অনুপ্রবেশকারীরা। দেশের বিভিন্ন জায়গা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তারাই মামলা করেছেন। তাদের কারণেই আওয়ামী লীগের তৃণমূল কমিটিগুলোতে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের আশঙÍা বেড়ে গিয়েছে। যা রীতিমত আগামী নির্বাচনের আগে ভাবাচ্ছে আওয়ামী লীগকে।
গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডি ৩/এ এর সামনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটিতে ‘অনুপ্রবশকারীদের পদ দেওয়ায় আমরণ অনশনে বসেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আলী আকবর সিদ্দিক। তার অভিযোগ, জেলা আওয়ামী লীগে কমিটিতে বিএনপি-জমায়াতের অনুপ্রবেশকারীরা পদ পেলেও দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতারা বঞ্চিত হয়েছে। কি কারণে তিনি অনশনে বসেছেন জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে জামায়াত, বিএনপির অনেকের জায়গা হলেও আমাদের মত ত্যাগী নেতা যারা ৪৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ করছি তাদের জায়গা হয় না। কারা কারা বিএনপি-জমায়াতের কর্মী যারা আওয়ামী লীগের ওই কমিটিতে পদ পেয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক বেশ কয়েকজন আছে। এটা আমি বলবো না, দল খুঁজে বের করুক। কারণ এটা বের করে দেওয়ার দায়িত্ব আমার না। দলের এই অনুপ্রবেশকারীদের সকলেই নব্য টাকাওয়ালা এমন দাবি করেন আওয়ামী লীগের এই তৃণমূল কর্মী। তিনি বলেন, এই অনুপ্রবেশকারীদের দলের নেতা বানানো হইছে। তবে অর্থের বিনিময়ে তারা দলে অনুপ্রবেশ করছেন কী না সেটা আমি বলতে পারবো না। তিনি বলেন, আমি চাই আমি যে ৪৪ বছর ধরে আমার রাজনীতির স্বীকৃতি।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে দলে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি-জামায়াত কিংবা ভিন্ন মতের নেতা-কর্মীদের পদায়ন হয়েছে এটা সত্য। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরাই দল ভারী করার জন্য তাদের দলে ঠাঁই করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দলে ভীরেই তারা দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘বলয়’ তৈরী করেছেন। তাছাড়া দীর্ঘ দিন তারা ভিন্ন আদর্শ ধারণ করায় তাদের আগামী নির্বাচনে তাদের নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে দলে। এই নেতারা অনেকটা ‘দুধের মাছির’ মত। দলের বিপদে কিংবা দূর্দিনে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।
দলের অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে দল চিন্তিত বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকার কারণে সুবিধা নেওয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াতের ‘উচ্ছিষ্ট’ কিছু লোক আওয়ামী লীগে জায়গা নিয়েছে। আমাদেরও কিছু নেতা নিজেদের গ্রুপ ভারী করার জন্য, শক্তি বৃদ্ধির জন্য আওয়ামী লীগে তাদের জায়গা দিয়েছে। অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করে না। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করে না। এই অনুপ্রবেশকারীরাই দলে বেশি জামেলা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, যারা দলে ‘অনুপ্রবেশকারী’ আমি তাদের বিশ্বাস করি না। তবে দলের কিছু সংসদ সদস্য এটা করেছেন, তাদের নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য। দলে এই অনুপ্রবেশকারীদের টেনে অনেকেই দলের ক্ষতি করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিএম মোজাম্মেল হক জানান, অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। যেখানে দলের এই ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ বাদি। যারা দেশে এমন ঘটনা ঘটছে। এই অনুপ্রবেশকারীদের কারণে সরকারের এত উন্নয়ন হওয়ার পরও আগামী নির্বাচনে আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে নানা করলেনই ব্যবস্থা নেওয়া যায় নি বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে দলের শক্তি বৃদ্ধি করা যায় না। বরং দলের শক্তি ক্ষয় হয়। অনুপ্রবেশকারীরা বদনামের কাজ করে। যারা অনুপ্রবেশকারীদের দলে জায়গা দেয়, তারা আহম্মগের স্বর্গে বাস করে। বিভিন্ন জায়গায় হাইব্রিড-অনুপ্রবেশকারীরা প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, এটা আগামী নির্বাচনে দলের জন্য কাল হতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ দিকে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আওয়ামী লীগের অনেকেই দল ত্যাগ শুরু করেছেন। যাদের অনেকেই দলের অনুপ্রবেশকারীরা। জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছে শরীয়তপুরের হাসেম সরদার (৬০) নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী। হাসেম সরদারের দাবি সর্বশেষ তিনি শরীয়তপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। শরীয়তপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ বেপারীর দাবি হাসেম সরদার আওয়ামী লীগের দলের পদধারী কোনো নেতা নন। তিনি যে দাবি করেছেন ৭নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি, তা মিথ্যা। উনি দুধ দিয়ে গোসল করে বিএনপিতে যোগদান করেছেন এটা সম্পূর্ণ উনার ব্যক্তিগত বিষয়। এতে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
গত ১০ জুলাই জামালপুর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে ৩০ জন কর্মী বিএনপিতে যোগদান করেন। জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর বরগুনার জেলার আমতলী উপজেলা বিএনপিতে যোগ দেন আওয়ামী লীগের ৫০ জন নেতাকর্মী। আমতলীর চাওড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সফেজ উদ্দিন প্যাদা ও সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিতে যোগদান করেন নেতা-কর্মীরা। এই ঘটনার সঙ্গে-সঙ্গে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে আওয়ামী লীগ করে তারা কখনো দল বদলাতে পারে না। মূলত এরা সুযোগ সন্ধানী। কখনও এই দলে আবার কখনও ওই দলের সঙ্গ দেওয়াই এদের কাজ। এরা নিজেদের স্বার্থে দলকে ব্যাবহার করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছেন, অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের লীগের জন্য শুভকর নয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে দলে অনুপ্রবেশকারীরা। এরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে ঢুকে পড়েছে, জেলা-উপজেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদও বাগিয়েছে তারা। অনুপ্রবেশকারীরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপাকে ফেলতে তৎপর হয়ে উঠতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের মত আদর্শবান সংগঠনের জন্য প্রদাহের মত। অনুপ্রবেশকারী কেউ ধরা পরলে আমরা তাকে দল থেকে বের করে দেই। সুবিধাবাদিদের তাদের স্বার্থের জন্য আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে, তাদের আচরণে আমাদের দলের আদর্শবান-ত্যাগী নেতাকর্মীর হৃদয়ে আচড় লাগে। সুবিধাবাদিদের স্বার্থান্বেষী কর্মকা-ে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দলের জনপ্রিয়তায় আচড় পড়ে। অনুপ্রবেশকারীদের অনৈতিক কর্মকা-ে আমাদের দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা কষ্ট পায়, আমরাও কষ্ট পাই। আওয়ামী লীগে আমরা অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দিতে চাই না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ