দেশে ৪ অক্টোবর শুরু হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকাদান
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
৯৯ ভাগ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)। জরায়ুমুখ ক্যান্সার দেশে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রতিরোধযোগ্য এই ক্যান্সারে বছরে প্রায় ৫ হাজার নারী প্রাণ হারায়। অথচ জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। দেশের কিশোরীদের এইচপিভি টিকার আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ৪ অক্টোবর রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের মধ্যে শুরু হবে এই টিকাদান কার্যক্রম। এক মাসব্যাপী প্রথম ক্যাম্পেইনে আওতায় প্রায় ২৩ লাখ কিশোরীকে টিকা প্রদান করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ইতিমধ্যে টিকা প্রাপ্তির রেজিষ্ট্রেশনের জন্য একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করা হয়েছে। এদিকে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যান্সার ঠেকাতে দেশের ৯০ শতাংশ ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে ডাব্লিউএইচও। এ ছাড়া ৩৫ ও ৪৫ বছর বয়সী নারীদের দুইবার স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা করা এবং ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ডব্লিউএইচও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শতাধিক দেশে এ টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য দায়ী। বাল্যবিবাহ এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। রোগটিকে আগেভাগে শনাক্তের জন্য দেশে ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন অব দ্য সারভিক্স উইথ অ্যাসেটিক অ্যাসিড বা ভায়া পরীক্ষা চালু থাকলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম। ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ স্ক্রিনিং করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখন পর্যন্ত দেশে ভায়া পরীক্ষার মাধ্যমে ২০ শতাংশ স্ক্রিনিং করা সম্ভব হয়েছে। যত বেশি স্ক্রিনিং হবে, তত বেশ রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হবে। ডাব্লিউএইচও’র তথ্যমতে, এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর। এক ডোজের এই টিকা কিশোরীদের জন্য অধিকতর কার্যকর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, আগামী ৪ অক্টোবর শুরু হবে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধী এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম। ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রী অথবা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী পড়াশোনার বাইরে থাকা কিশোরীদের এই টিকা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। এক মাসের মধ্যে সরকারি ছুটির বাইরে ১৮ দিন চলবে এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম। প্রথম ১০ দিন ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে (উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র) এই টিকাদান কার্যক্রম চলবে। পরবর্তী ৮দিন ইপিআই এর নিয়মিত টিকাদান কেন্দ্র ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে কিশোরীদের মধ্যে এই টিকা প্রদান করা হবে। টিকাদান কার্যক্রম বাস্তাবায়নের লক্ষ্যে গতকাল রাজধানীর জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নুরুন নাহার হেনার সভাপতিত্বে এবং পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমেদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএনসিএইচ লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. নিজাম উদ্দিন, ইউনিসেফের এসবিসি সেকশনের চীফ বিজেট অব জনসন।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) তথ্যমতে, চলতি বছর থেকে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) থেকে এক কোটি ১১ লাখ ৮৩৫ ডোজ এইচপিভি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। শুরুতে রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি কিশোরী প্রায় ২৫ লাখ ২৯ হাজার। তাদের মধ্যে ২৩ লাখ কিশোরীকে প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারি তথ্যমতে, গত বছর প্রায় ২৭ হাজার নারী জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৫৮২ জন। এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মাধ্যমে সারা দেশের ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। টিকাদান সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণও শেষ হয়েছে।
টিকা কখন দেয়া যাবে না এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএনসিএইচ বিভাগের লাইন ডাইরেক্টর ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, বিনামূল্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধী এইচপিভি টিকা প্রয়োগের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা শেষ পর্যায়ে। আগামী ৪ অক্টোবর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এইচপিভি টিকাদান। এই টিকায় কোনো জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিশোরীদের আশ্বস্ত করতে চাই এই টিকায় কোনো জটিলতা নেই। এক ডোজ টিকা গ্রহণে জরায়ুমুখ ক্যান্সরের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব হবে। তবে টিকা গ্রহণের পূর্বে ১০০ ডিগ্রি কিংবা তার বেশি জ্বর থাকলে, অতীতে কোনো টিকা গ্রহণের পর এলার্জিজনিত সমস্যা হলে কিংবা টিকা গ্রহণের দিন শারীরিক অসুস্থতা থাকলে এইচপিভি টিকা গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, স্কুলে ক্যাম্পেইনকালে কেউ টিকা গ্রহণ করতে না পারলে সে স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে গিয়েও এইচপিভি টিকা দিতে পারবেন। এছাড়াও আগামী বছর থেকে ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এইচপিভি টিকা গ্রহণ করতে পারবেন।
ইউনিসেফের হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. রিয়াদ মাহমুদ বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সারে বছরে প্রায় ৫ হাজার মানুষ মারা যায়। গ্যাভি ২০১৯ সালে বাংলাদেশকে এই প্রকল্পে যুক্ত করে। কিশোরীদের টিকার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার থেকে দেশের নারীদের রক্ষা করা সম্ভব হবে। প্রথমে ঢাকা বিভাগে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও গ্যাভি থেকে আগামী বছর এপ্রিলে টিকা পাওয়া সাপেক্ষে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে এইচপিভি টিকা প্রদান করা হবে। এরপর একই বছর আগস্ট থেকে শুরু হবে দেশের বাকি পাঁচ বিভাগে এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে: ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি