পানির অপচয় বন্ধ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
পানি ব্যবহারে অনেকে সচেতন না। পানির অপচয় বন্ধ করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। পানি ব্যবহারে মানুষ যেন মিতব্যয়ী হয় এ আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর নানাবিধ নির্দেশনা উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ওয়াসার পানির উৎপাদন খরচের একটা সমন্বয় করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সবাইকে পানির অপচয় বন্ধ করতে বলেছেন। অনেকে পানির ট্যাপ ছেড়ে রাখেন এটা যেন না হয় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ১ বিলিয়ন পাওয়া যাবে। ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্প নিতে হবে। সুন্দরবন গুরুত্ব পাবে। পশখ হাসিনা বলেন, জলাভূমি অঞ্চলে সড়ক সংস্কার করতে হবে। পানির চাপ বাড়লে অধিক কালভার্ট ও ব্রিজ বানাতে হবে। সেতু বানালে উচ্চতা খেয়াল করবেন নকশা ভালো হতে হবে কাজ করতে গিয়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্যাক্স সংক্রান্ত মামলা পড়ে আছে, এটাকে আইন মেনে ফয়সালা দিতে হবে।
আগস্টে খাদ্য খাতে রেকর্ড ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। মুরগি ও ডিমের বর্ধিত দামের কারণেই এই রেকর্ড মূল্যস্ফীতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় তিনি এ দাবি করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, এটাকে এড্রেস করার চেষ্টা করব। শিগগিরই এটা কমানোর চেষ্টা করব। আগস্টে মূল্যস্ফীতির নায়ক মুরগি ও ডিম। এম এ মান্নান বলেন, আমাদের যে বৃদ্ধি এটা টেকসই মানের। সহনীয় মাত্রায় বাড়ছে। শ্রীলঙ্কা এক লাফে উঠেছিল, এখন নামছে। আমাদের বৃদ্ধি হয়েছে সহনীয় এবং কমবেও সহনীয়ভাবে। গত মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। যা এর আগে কখনো হয়নি। এর আগের মাসে এই খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ আগস্টে এ লাফে বেড়েছে ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
গত ১১ বছরের মধ্যে এখন সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তিন বছরের ব্যবধানে এই খাতে বৃদ্ধি হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, সরকার অধিক টাকা ছাপায় না। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ছাপায়। ভবিষ্যতে আমাদের টাকার নোটগুলো সব প্লাস্টিকের হবে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, একদিন সব টাকা প্লাস্টিক নোট হবে। কাগজের টাকা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই ভবিষ্যতে কাগজের টাকার নোট বাদ দিয়ে প্লাস্টিকের নোট ব্যবহার করা হবে। সরকার বেশি করে টাকা ছাপাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শামসুল আলম বলেন, অনেকে বলে সরকার অনেক টাকা ছাপায়। বাস্তবে সরকার অধিক টাকা ছাপায় না। যতটুকু প্রয়োজন হয় ততটুকুই ছাপায়। সরকার বাজারে বেশি টাকা ছাড়ে এমন কথাটাও সঠিক নয়। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে শামসুল আলম বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার বেশি ধার নিয়েছে। আমরা মূল্যস্ফীতির চক্রে পড়েছি। একবার মূল্যস্ফীতি বাড়লে আর কমে না। এদিকে ১৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১২ হাজার ৬০ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হলোÑ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প যথাক্রমে জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (খুলনা জোন) প্রকল্প, ফেনী (মোহাম্মদ আলী বাজার)-ছাগলনাইয়া করেরহাট সড়ক (ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়ক) (জেড-১০৩১) প্রশস্তকরণ এবং ফেনী নদীর ওপর শুভপুর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এবং ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্ট সমূহের জরুরি পুনর্বাসন ও পুনঃনির্মাণ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প যথাক্রমে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর গুদারাঘাটের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কদমরসুল ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (রাস্তা ও ড্রেন) প্রকল্প, রায়েরবাজার এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প এবং উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ গ্রহণে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন (স্বপ্ন)- ২য় পর্যায় প্রকল্প, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মাজার মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প যথাক্রমেÑ চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল এবং কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্প, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষক পর্যায়ে বিএডিসির বীজ সরবরাহ কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্প, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার নদীবিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প যথাক্রমে মেঘনার শাখা নদীর ভাঙন হতে হিজলা উপজেলাধীন পুরাতন হিজলা, বাউশিয়া ও হরিনাথপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্প, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীরের ভাঙন হতে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকা রক্ষা প্রকল্প এবং চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্প, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্প, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প।
গতকালের একনেক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেনÑ পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ, পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া একনেক বৈঠকে পরিকল্পনা কমিশন ও ইআরডি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ডেভলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি)। সংগঠনটির প্রকাশনা স্টেট অব দ্য ডেভেলপমেন্ট : ইমপ্যাক্ট অব মেগা প্রজেক্টস’-এর মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজেএফবি’র সভাপতি হামিদ-উজ-জামানের পক্ষে বইটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এসময় তিনি ডিজেএফবি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন। বৈঠক শেষে ব্রিফ্রিং এর সময় আবারও বইটির প্রকাশনা করা হয়। এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ডিজেএফবির প্রকাশনা হাতে নিয়ে আনন্দিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ডিজেএফবিকে ধন্যবাদ জানান। এসময় সংগঠনের নেতাদের খুঁজেছিলেন তিনি।#
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন