মানবাধিকার উপেক্ষা করে ব্যবসাকে গুরুত্ব দিলেন ম্যাখোঁ
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২১ পিএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
বাংলাদেশে দু’দিনের সফরকালে ফ্রান্সের এশিয়া-প্যাসিফিক কৌশল এবং ‘নতুন সাম্রাজ্যবাদ’ প্রতিরোধের উপায়গুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি পরাশক্তির প্রভাবও বিরাজমান। নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলন শেষে গত রোববার সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশ এসেছিলেন তিনি।
গত সোমবার ঢাকায় এক বৈঠকে ম্যাখোঁ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘নতুন সাম্রাজ্যবাদের মুখোমুখি একটি অঞ্চলে গণতান্ত্রিক নীতি এবং আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে একটি তৃতীয় পন্থা উপস্থাপন করতে চাই।’ যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন বিস্তৃত অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেখানে ফ্রান্স বিকল্প অবস্থানে রয়েছে।
তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে তিনিই প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট যিনি বাংলাদেশ সফর করলেন। বিশ্বের অষ্টম সর্বাধিক জনবহুল দেশটি তার দুর্বল গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রেকর্ডের জন্য অনেক পশ্চিমা শক্তি দ্বারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ১৪ বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগকে বিরোধী দলের সদস্যদের নীরব করার জন্য ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে। তার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শত শত মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বা জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে।
অনেক বিরোধী নেতা, সুশীল সমাজের সদস্য এবং মানবাধিকার রক্ষাকারীরা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন যা তাদের বেশিরভাগ সময় আদালতের কক্ষে বা কারাগারে কাটাতে বাধ্য করেছে।
হামবুর্গ-ভিত্তিক জিআইজিএ ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজের বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ জেসমিন লর্চ মনে করেন, ‘আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ বৈধতা পাওয়ার ক্ষেত্রে ম্যাখোঁর সফর দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনী প্রক্রিয়া লঙ্ঘনকারীদের ভিসা বাতিলের হুমকি দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার শিকার হয়ে আসছে।’
লর্চ যোগ করেন, ‘এই প্রেক্ষাপটে, ম্যাখোঁ সরকারকে একটি ‘তৃতীয় উপায়’ প্রস্তাব করছেন এবং বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এটি হাসিনা সরকারের জন্য একটি উপহার’।
সোমবার ম্যাখোঁ ও হাসিনার মধ্যে আলোচনার পর ঢাকা ও প্যারিস একটি আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম চালু করতে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড এবং ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস কোম্পানির মধ্যে লেটার অব ইনটেনটে সই হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা উভয়েই আশা করি যে, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে এ নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে’।
অধিকার গোষ্ঠীগুলোর আহ্বান সত্ত্বেও ম্যাখোঁ তার সফরকালে বাংলাদেশের দুর্বল গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের রেকর্ড সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন। তিনি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং ব্যবসায়িক সুযোগের ওপর আরো বেশি মনোযোগ দিয়েছেন তার দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সাথে আলোচনা করেছে।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো অনুসারে, জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ এর মধ্যে বাংলাদেশ ফ্রান্সে প্রায় ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য, বেশিরভাগ পোশাক রফতানি করেছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ডাটাবেস অনুসারে গত বছর বাংলাদেশে ফ্রান্সের রফতানি ছিল প্রায় ২৫৪.৩২ মিলিয়ন ডলারের।
ঢাকা ও প্যারিস একটি আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম চালু করতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সোমবার ম্যাখোঁ ও হাসিনার মধ্যে আলোচনার পর রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড এবং ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস কোম্পানির মধ্যে লেটার অব ইনটেনটে সই হয়।
উভয় নেতা ফ্রান্সে সদর দফতর বিমান নির্মাতা এয়ারবাস থেকে ১০ এ৩৫০ কেনার জন্য বাংলাদেশের জাতীয় এয়ারলাইন থেকে একটি ‘প্রতিশ্রুতি;’ নিয়েও আলোচনা করেছেন, একটি সম্ভাব্য চুক্তি যার মূল্য ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন হতে পারে।
জাতীয় বাহক বিমান এর আগে সবসময় মার্কিন নির্মাতা বোয়িং থেকে বিমান কিনেছিল এবং এয়ারবাস থেকে কেনার আশা ছিল ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ ম্যাখোঁ হাসিনার সাথে সাংবাদিকদের বলেন।
হাসিনার প্রেস অফিসার সাখাওয়াত মুনের মতে, দুই নেতা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করার বিষয়েও আলোচনা করেছেন।
হাসিনা বলেন, ‘আমরা উভয়েই আশা করি যে, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে এ নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে’। সূত্র : ডিডাব্লিউ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল
ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা
মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা