ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
মস্কো, বেইজিং ও পিয়ংইয়ং জোট আরও সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের সাধ্য নেই রাশিয়া, চীন ও উ.কোরিয়াকে ঠেকানোর

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৩৬ পিএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন খুব কমই নিজ দেশের বাইরে বের হন। তবে তিনি এই সপ্তাহে কয়েক ঘণ্টার জন্য রাশিয়ার পুতিনের সাথে সাক্ষাত করতে দেশটির সুদূর মহাকাশ বন্দর ভস্তোচনি সোওসমোদ্রোম সফর করেছেন। এবং বুধবার এক বিরল বৈঠকে তিনি আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, যা মস্কোর নিরাপত্তা ও স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে সতর্ক করে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, মস্কো এবং পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে সহযোগিতা বন্ধ করার ক্ষমতা ওয়াশিংটনের নেই, বিশেষ করে যখন তাদের নেতারা দেশগুলির পারস্পারিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘স্টিমসন সেন্টার’ এর জেনি টাউন বলেন, ‹যুক্তরাষ্ট্রের এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারি। আমরা বিধিনিষেধ বাড়াতে পারি। আমরা টিকে থাকা আরও কঠিন করে তুলতে পারি, কিন্তু আমরা অন্য দেশের সাথে সমান সম্পর্ক রাখা থেকে এটিকে আটকাতে পারি না, বিশেষ করে যখন আমাদের নিজেদের সাথে সম্পর্ক নেই।›
অবশ্য, দুই প্রেসিডেন্ট এমন অস্ত্র চুক্তির কথা প্রকাশ করেননি, যা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হবে। তবে কিম স্পষ্টভাবে সংঘাতের কথা উল্লেখ না করেই ইউক্রেন যুদ্ধে ক্রেমলিনের পক্ষে জোরালো সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিম জং উন বলেছেন, ‘ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া সবসময়ই রাশিয়ান সরকারের গৃহীত সমস্ত পদক্ষেপের প্রতি তার পূর্ণ এবং নি:শর্ত সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এবং আমি এই সুযোগটি গ্রহণ করে পুনরায় নিশ্চিত করছি যে, আমরা সর্বদা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ঐক্যে এবং স্বাধীনতার ঐক্যে রাশিয়ার সাথে দাঁড়াব।›
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান সতর্ক করে বলেছিলেন যে, দুই দেশ অস্ত্র চুক্তিতে সম্মত হলে মূল্য দিতে হবে। এবং সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর উত্তর কোরিয়ার প্রতি আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে, যদি দেশটি রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশগুলির মধ্যে দু’টি। এশীয় সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক মার্ক ব্যারি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার উপর আরও দন্তহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, তবে সেগুলি পিয়ংইয়ংকে মস্কোর সাথে কাজ করা থেকে বিরত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং চীন ভবিষ্যতে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারে, কারণ মস্কো তার দুই এশীয় প্রতিবেশীর সাথে সংহতির চিত্র তুলে ধরতে চায়।›
ইউক্রেন যুদ্ধের বাইরে, কিম এবং পুতিনের মধ্যে বুধবারের বৈঠকটি উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে একটি বৃহত্তর, ক্রমবর্ধমান মৈত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে যার মধ্যে চীনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে শত শত কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিয়ে ইউক্রেনকে সহায়তা করছে, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করে উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলার কাজ করছে। আবার আলাদাভাবে, ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের সাথে একটি কৌশলগত প্রতিযোগিতায়ও জড়িত। ফলে, মস্কো, পিয়ংইয়ং এবং বেইজিংয়ের ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য থেকে থাকলেও, তারা উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় ‘ওয়াশিংটন, সিউল এবং টোকিও’ জোটের বিপরীতে তাদের অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করছে।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বলেছে যে, ওয়াশিংটন পিয়ংইয়ংয়ের সাথে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত, কিন্তু যে কোনো আলোচনা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির উপর লক্ষ্যস্থির করবে, বৃহত্তর সম্পর্কের উপর নয়। টাউন বলেন, ‹উত্তর-পূর্ব এশিয়াতে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা চলছে। এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার মাঝখানে উত্তর কোরিয়া একতরফাভাবে তার নিজের অস্ত্র উন্নয়নের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং সীমাবদ্ধতা আরোপ করার জন্য সম্মত হবে, এমন ধারণা নিয়ে শুরু করা সত্যিই অবাস্তব। হ্যানয় শীর্ষ সম্মেলনের মোহভঙ্গ নিয়ে উত্তর কোরিয়া রাশিয়া ও চীনের সাথে নিজেকে আরও গভীরভাবে আবদ্ধ করেছে, বিশেষ করে মস্কো তার নিজস্ব নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করতে পারার কারণে। এই তিনটি দেশের মধ্যে সম্মিলিত নিরাপত্তার বোধ বাড়লে তা আরও সাহসী পদক্ষেপের দিকে নিয়ে যেতে পারে।› সূত্র: আল জাজিরা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান