ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পদক্ষেপ নিয়েছি নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করবো, হাত পাতব না

জনগণ ভোট দেয়, সেই আস্থা বিশ্বাস অর্জন করুন

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা তৃণমূলের মানুষের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের সেবক। জনগণের কল্যাণে কাজ করা এটা আপনার আমার সবার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের সেবা করে, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে, আপনারা এগিয়ে যাবেন। কারণ, একবার যখন মানুষ আপনাদের ভোট দিয়েছে, তারা যেন আবারও ভোট দিতে পারে, সেই আস্থা-বিশ্বাস আপনাদের অর্জন করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ সময় তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের দেশের মানুষের সেবায় কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, আপনারা দেশের জন্য কাজ করুন। এ দেশকে ব্যর্থ হতে দেবেন না। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের বেড়ে যাওয়া খাদ্য সামগ্রীর দাম স্বাভাবিক রাখতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করব। কারও কাছে হাত পাতব না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। আর বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এ যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়েছে। আমরা খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের প্রতি ইঞ্চি জায়গা আবাদ করতে হবে। আমরা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করব। কারও কাছে হাত পাতব না।
আমার গ্রাম, আমার শহর গঠনে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ, আজকে যে পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের অভিযোগ দিয়েছিল, চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম নিজের অর্থে করবো, সেই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মা রেললাইনও করে দিয়েছি। এখন আর যোগাযোগের অসুবিধা নেই। তিনি আরো বলেন, আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে, তা দিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের প্রতিটি গ্র্রামই শহরের মতো গড়ে তুলব।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলকে সচেতন হতে ও মশারি ব্যবহার করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। মশা মেরে শেষ করা যাবে না এমন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং মশার হাত থেকে বাঁচতে হলে মশারি ব্যবহার করতে হবে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। মশা মেরে শেষ করা যাবে না। নিজেরাও সচেতন হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের উন্নয়নটা দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল। এটা যেন আর নষ্ট না করতে পারে। কারণ, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত যতটা এগিয়ে ছিলাম, বিএনপি-জামায়াত জোট সেটা পিছিয়ে দিয়েছিল। ২০০৯-২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এটা যেন অব্যাহত থাকে। তিনি আরো বলেন, ৯৬ সালে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল। আমরা ৪ হাজার ৩০০ করে যাই। পরে বিএনপির আমলে কমে গেছে সেটা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এখন ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পায়। শিক্ষার্থীদের বই, বৃত্তি, উপবৃত্তি দিচ্ছি। ডিজিটাল সেন্টার করে দিচ্ছি। ইনকিউবেটর, হাইটেক পার্ক করে দিয়েছি। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ৭৩ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ঘরে ঘরে মোবাইল ফোন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। আজ কৃষকের ঘরে সার পৌঁছে যায়। তাদের কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। এটা দিয়ে কৃষি উপকরণ কিনতে পারে। ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এর মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়। জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দিই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কাছে আমার এটাই আহ্বান থাকবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে এসডিজি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উচ্চাসনে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি, ব্যর্থ হবে না, ব্যর্থ হতে দেবো না।
মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত না হয়, সে দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। সরকার মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রার্থনালয় সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে দেশে কোনও কাঁচা রাস্তা থাকবে না বলে এ সময় মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করায় দেশের উন্নয়নের কাজ করা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাটা বজায় রাখতে পেরেছি, যার জন্য গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নটা করতে পেরেছি। আমি জানি, এখনও অনেক গ্রামে কাঁচা রাস্তা আছে। সেগুলো আল্লাহর রহমতে থাকবে না। আবারও যদি জনগণের সেবা করবার সুযোগ পাই, নিশ্চয়ই আমরা সেগুলোও করে দেবো। কারণ, প্রত্যেকটা গ্রাম শহরের মতো করে গড়ে উঠবে।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করি। কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। নানা ভাবে তাদের এগিয়ে নেওয়ার কাজ করছি। প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতা দিচ্ছি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি ও তাদের ভাতাও দিচ্ছি। ৫ কোটি মানুষের পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। এটা দিয়ে স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে।
গণভবনে উপস্থিত সারা দেশের কয়েক হাজার জনপ্রতিনিধির উদ্দেশ্যে করে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আপনাদের উপস্থিতিতে গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। তৃণমূল মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আপনারা এখানে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, আপনাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, জাতির পিতা কেন্দ্র থেকে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ক্ষমতাসীন করে জনগণের দৌরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সবার মাঝে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ঠিক সেই সময়ে এল চরম আঘাত। এর পরই থেমে গেল বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। পরবর্তী সময়ে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার সুযোগ পায়। পিতা, মাতা, ভাই সব হারিয়েছিলাম। বিদেশে আমি ও আমার ছোটবোনকে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল। আমার ছোটবোন রেহানার পাসপোর্টটিও জিয়াউর রহমান দেয়নি। সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল তবুও রিনিউ করে দেয়নি।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ বিভিন্ন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইবরাহীম। এছাড়া দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো