ফেঁসে যাচ্ছেন তিতাস গ্যাস এমডি
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শিল্পক্ষেত্রে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। অর্থচ প্রধানমন্ত্রী নাম ব্যবহার করে মোটা অংকের টাকা বিনিময় গাজীপুরের সিলভার নিট কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডে গ্যাসের সংযোগ প্রদানের ঘটনায় তিতাসের এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বিরুদ্ধে তদন্তে করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জ্বালানী মন্ত্রণালয়কে নিদের্শনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গত ২৯ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১১ রুপালী মন্ডল স্বাক্ষরিত চিঠি বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সচিবকে পাঠানো হয়েছে। শুধু তদন্তের নির্দেশনা নয়, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে।
চিঠিতে বলা হয়, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) নাম ব্যবহার করে উৎকোচ গ্রহণ করত: শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের সংযোগ প্রদানসহ নানাবিধ অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে। উল্লেখিত বিষয়ে সূত্রোস্থ পত্র ও সংযুক্তিসমুহের ছায়ালিপি এতদসঙ্গে পেরণ করা হলো। পত্রে বর্ণিত বিষয়াদি পরীক্ষান্তে বিধি মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বরাবরে আ. লতিফ নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমাকে এ পদ থেকে সরাতে একটি গ্রুপ সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। তারা নানা রকম মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙানোর প্রশ্নই আসে না। তিতাসের কিছু অসাধু কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় একটি গ্রুপ নাখোশ হয়েছে। তারাই ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে
গ্যাস সংকটের কারণে ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে নতুন আবাসিক গ্যাস-সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ। তবে ২০১৩ সালের শেষ দিকে সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জ্বালানি বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে আবাসিকে গ্যাস-সংযোগ না দিতে বলা হয়। এরপরও বিভিন্ন সময় তিতাস গ্যাস-সংযোগ দিয়েছে। গত ২০১৮ সালের প্রথম দিকে তিতাসের বোর্ড সভা এমন সাত লাখ গ্রাহককে বৈধ করেছিল। গত ২০২১ সালের ২১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে তিতাসসহ সব কটি গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানকে আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং সিএনজির নতুন সংযোগ না দিতে বলে জ্বালানি বিভাগ।
খনিজ সম্পদ বিভাগ ওই নির্দেশনার পাওয়ার পর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে অভিযোগ তদন্তপূর্বক এক মাসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য বলা হয়েছে। সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে একটি অভিযোগপত্র, কয়েকটি চেকের ফটোকপিসহ ৪০টি পৃষ্ঠার একটি নথি। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, সিলভার নিট কম্পোজিট নামক একটি প্রতিষ্ঠানের আবেদনে লিখিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মন্ত্রী মহোদয়ের অফিস হতে প্রেরিত আলাপ করবেন। আবেদনে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শেখ হাসিনা, কিংবা প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দফতরের কারো কোন স্বাক্ষর কিংবা সুপারিশ নেই। শুধুমাত্র উৎকোচ গ্রহণ করে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে প্রায় ৬ মাসের পুরনো একটি আবেদন সংযুক্ত করে দু’টি প্রতিষ্ঠানের ফাইল দ্রুততার সঙ্গে পাস করিয়ে নেওয়া হয়। জ্বালানি খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে তিতাস গ্যাসের মতো জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে রাতারাতি দু’টি নথি পাস করিয়ে নিয়েছেন। ওই নোটসহ অগ্রগামী করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ধরনের একটি স্পর্শকাতর জায়গার রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে, অথচ সেই রেফারেন্স কোন যাচাই-বাছাই না করেই অনুমোদন দেওয়াকে পুরো যোগসাজস মনে করছেন অনেকেই।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নির্দেশনা উপেক্ষা করে তিন কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে লোড বৃদ্ধি ও নতুন সংযোগ প্রদান, পাঁচ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে গড় বিল করে রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন, ডেমরা এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে ৫০ কোটি টাকা আয়, আউটসোর্সিং বিধিমালা লঙ্ঘন করে তিতাস গ্যাসে জনবল নিয়োগ এবং নিয়োগ বাণিজ্য করে অবৈধভাবে পাঁচ কোটি টাকা আয়, ২০০ কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে এক হাজার ২৪৭টি অবৈধ সংযোগ প্রদান এবং তা সার্ভারে এন্ট্রি দিয়ে বৈধ করা, এসব অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামিদের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে মামলা প্রত্যাহার বা ধামাচাপা দেওয়া, পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকার প্রি-পেইড মিটার ২৩ হাজার টাকায় কিনে রাষ্ট্রের কোটি কোটি আত্মসাৎ এবং ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে নতুন গ্যাস সংযোগ ও লোড বৃদ্ধি করে ৩০০ কোটি টাকার বাণিজ্য।
অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান এমডি যোগদান করার পর থেকে সিস্টেম লস বেড়ে গেছে। আগে যেখানে ৫ থেকে ৬ শতাংশ সিস্টেম লস ছিল, এখন সেখানে ৮ থেকে ৯ শতাংশ দেখানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সিস্টেম লস ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হবে। ৫৮ বছরের ইতিহাসে তিতাস গ্যাস এবারই প্রথম লোকসানের স্বীকার হয়েছে। হারুনুর রশীদ মোল্লাহ যোগদানের পূর্বে তিতাসের ক্রমপুঁঞ্জিভূত বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা, এখন সেই বকেয়া ৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যতীত (এমডি মালিক পক্ষ হিসেবে বিবেচিত) সকল কর্মচারীগণ প্রফিট বোনাস ৫ শতাংশ অর্থ সমহারে পাবেন। অথচ বর্তমান এমডি লভ্যাংশের অর্থ নিয়মিত গ্রহণ করছেন। ওই টাকা তার ব্যক্তিগত হিসাব নম্বরে গ্রহণ করেন না। কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে চেক ইস্যু করে নগদ টাকা গ্রহণ করে থাকেন। এ সংক্রান্ত কয়েকটি চেকের ফটোকপি জুড়ে দেওয়া হয়েছে অভিযোগপত্রে। বর্তমানে গ্যাস সংযোগ সংক্রান্ত ৩ শতাধিক কোম্পানির আবেদন ঝুঁলে থাকলেও বেছে বেছে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে ঠিকাদার জিসান পাটোয়ারীর নাম। তার কাছে গেলেই সংযোগ নিশ্চিত। এমনকি ৩ দিনের গ্যাস সংযোগ অনুমোদন করার অনেক নজির সৃষ্টি রয়েছে। বহুল আলোচিত আলী এন্টার প্রাইজের ওই ঠিকাদারের সঙ্গে এমডির দহরম-মহরম চোখে পড়ার মতো। তার সঙ্গে প্রায় প্রত্যেক কার্যদিবসে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন এমডি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্ধ্যার পর এমডির কক্ষে ওই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সে সময়ে এমডির কক্ষে কারো প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। এছাড়া আউটসোর্সিংয়ে লোকবল নিয়োগে দুর্নীতি, একাধিক গাড়ির অপব্যবহারসহ অনেকগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো, গ্যাস বিপণন নিয়মাবলী গত ২০১৪ লঙ্ঘন করে ৪০ কোটি টাকার ঘুষের লেনদেন, দুই কোটি টাকার বিনিময়ে সাড়ে ১০ কোটি টাকা মওকুফ, তিন কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে রাষ্ট্রের সাড়ে ১৩ কোটি টাকার ক্ষতি, গ্যাস বিপণন নিয়মাবলী- ২০১৪ লঙ্ঘন করে দুই কোটি টাকার ঘুষ বিনিময়, ফিদা সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের বকেয়া ৪৫ কোটি টাকা আদায় না করে অবৈধ ১০ কোটি টাকা লেনদেন, বকেয়া অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পরও গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে পাঁচ কোটি টাকার ঘুষ গ্রহণ, তিন কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে রাষ্ট্রের সাড়ে ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি, গ্যাস বিপণন নিয়মাবলী- ২০১৪ এবং মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে ২৫ কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে স্থায়ীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্নযোগ্য ১৭২টি আবাসিক গ্রাহক ও দুটি বাণিজ্যিক গ্রাহককে পুনঃসংযোগ।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তদন্তের নির্দেশ সংক্রান্ত চিঠি পেট্রোবাংলায় পৌঁছার তথ্য নিশ্চিত করেছেন পরিচালক (প্রশাসন) আলতাফ হোসেন। এর বেশি কোন তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি। প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লাহ ২০২১ সালে প্রথম এক বছরের চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ পান। চুক্তির মেয়ার শেষ হলে দ্বিতীয় দফায় আরও এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় মাস আগেই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ তাকে আবারও এক বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মির্জাপুরে নিখোঁজের পাঁচ মাস পরও খোঁজ মিলেনি
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ