অভিযান নাকি চোর-পুলিশ খেলা!
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ফের অভিযানে নামছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ সোমবার থেকে সারাদেশে একযোগে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে অধিদপ্তর। গতকাল রোববার এক জরুরি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর।
জানা যায়, দেশে ১২ হাজার ৩০০ বৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। তবে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা প্রায় তিন গুণ। রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত গড়ে উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগের অবকাঠামো নেই। বৈধদের ৮০ ভাগেরই অবকাঠামো নেই। তারপরও চলছে। অনেকের নেই যন্ত্রপাতি, পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞ জনবল নেই। সিজার করতে গিয়েও রোগী মারা যাচ্ছে। রোগী ও নবজাতক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২২ সালের একাধিকবার অবৈধ ক্লিনিক উচ্ছেদের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেই, মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অনিয়ম করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে অবৈধ ক্লিনিক উচ্ছেদ নিয়ে হয়েছে চোর-পুলিশ খেলা। কিছু ক্লিনিক বন্ধ করে দিলেও পরে সেগুলো ‘বিশেষ যায়গায় অর্থ’ দিয়ে ফের চালু হয়েছে।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে ফের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের তথ্য পাচ্ছি। যারা এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা আবারো ব্যবস্থা নেব। সোমবার থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফের অভিযানে নামবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। একযোগে সারাদেশে এ অভিযান পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীর জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন হয় না। তারপরও কিছু ক্লিনিক যাদের আইসিইউ সুবিধা নেই, তবুও রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে তারা আইসিইউতে রাখে। এসব বিষয়ে অধিদপ্তর নজর রাখছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, কিছু ক্লিনিক এবং হাসপাতাল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে রোগীকে হাসপাতালে রাখছে এবং আইসিইউতে নিচ্ছে। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এবং যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ সেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধেই আমাদের অভিযান পরিচালিত হবে। আমরা আমাদের রোগীদের জিম্মি করে কোনো অসাদু চক্রকে লাভবান হতে দেব না। যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা দেশপ্রেমিক না।
ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গু বিষয়ে যে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে সেটি প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অযথা কাউকে ঢাকামুখী না করা হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব এলাকায়ই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সারাদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি বলেন, কিছু অসাদু ব্যবসায়ী এই সময়ে এসে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। আমরা সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দিয়েছি কেউ যদি স্যালাইনের দাম বেশি রাখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের স্যালাইনের সংকট হয়নি। আর্টিফিশিয়াল যে সংকট তৈরি করতে চায় তা যেন না করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা হিসেবে আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করছি। আমরা ৩ লাখ স্যালাইন আমদানি করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালে অবৈধ ক্লিনিক বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সে বছর ২৬ মে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা দেশের সব অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের পর ওই বছরের ২৮-৩১ মে পর্যন্ত তিন দিন স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সারা দেশে অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। এই অভিযানে সর্বমোট ১ হাজার ৬৪১টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছিল। অভিযানে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টার তালাবদ্ধ করা হলেও পরদিন তা আবার চালু হয়ে যায়। এছাড়া প্রায়ই অভিযানের নামে চলে বাণিজ্য। স্বাস্থ্য প্রশাসন এগুলো বন্ধে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। এমন অবস্থার মধ্যে অবৈধ ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে আবারও সাঁড়াশি অভিযান আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। সপ্তাহব্যাপী চলবে এই অভিযান।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকারের দায়িত্বশীলরা অভিযান পরিচালনা করেন, আবার পর্দার আড়ালে অর্থ নীতি ব্যাঙের ছাড়ার মতো গজিয়ে উঠা অবৈধ ক্লিনিক চালু রাখার পথ তৈরি করে দেন। রাজধানীর শনির আখড়ায় সেইফ ক্লিনিক, দেশ বাংলা হাসপাতাল, রয়েল হাসপাতাল, সোনার বাংলা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ভুক্তোভোগী রোগীদের অভিযোগ তারা বেশি টাকা দিয়েও সেবা পাচ্ছেন না। অথচ অভিযানের নামে গত বছর এই হাসপাতালগুলো থেকে যে জরিমানা করা হয়েছে। সেই জরিমানার টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের কাছ থেকে নিয়েছে। এবার অভিযানের নামে যেন চোর-পুলিশ খেলা না হয়। সেগুলো অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত