মার্কিন নাগরিকের টাকা আত্মসাৎ তদন্তে সিআইডি
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
প্রতারণার মাধ্যমে এক মার্কিন নাগরিকের ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা (২ লাখ ২২ হাজার ডলার) হাতিয়ে নিয়েছে দুই বাংলাদেশি প্রতারক। হুন্ডির মাধ্যমে এসব অর্থ বাংলাদেশে আনার পর রেকর্ড মুছে ফেলতে তা ৯৬টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করা হয়। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে প্রমাণ হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিষয়ে বিস্তারিত উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএফআইইউ’র তদন্তে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, নাম সর্বস্ব ব্যবসার আড়ালে একাধিক ব্যাংক হিসাব খোলার সত্যতা মেলে। পরে বিএফআইইউ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঘটনার সাথে জড়িতদের তথ্য উদঘাটনে বিষয়টি সিআইডিকে অবহিত করে। গতকাল রোববার সিআইডির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তাদের সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে তারা অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়টি সিআইডি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন তাই এ মুহূর্তে বিস্তারিত বলতে পারছি না। এছাড়া আগাম তথ্য পেলে প্রতারক চক্র পালিয়ে যাওয়া কিংবা ভিন্ন ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নিতে পারেন। তাই সময় হলে আমরাই সবকিছু প্রকাশ করবো। এদিকে এ ঘটনায় বিএফআইইউ ইতোমধ্যে তদন্ত করে গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রদান করেছে। এই প্রতিবেদনে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও এতে জড়িতদের সম্পর্কে বিবরণ প্রদাণ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফআইইউ’র এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা মার্কিন নাগরিকের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে প্রতিবেদনে সবকিছু তুলে ধরছি। এখন সিআইডি এ নিয়ে কাজ করছে। আশাকরছি জড়িতদের দ্রুতই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতারণায় জড়িত ২ জন বাংলাদেশি নিজেদের আমেরিকার ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির এজেন্ট পরিচয় দিয়ে মার্কিন নাগরিক ডেবোরাহ জন্সটন রামলো ডেবির কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে অন্য এক বাংলাদেশির ব্যাংক হিসাবে সেসব অর্থ লেনদেন করে। বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও বাস্তবে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউকে লেনদেনকৃত ৫টি দেশি এবং ২টি বিদেশি ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া ৫টি ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে ৩৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা জমা এবং ৩৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা উত্তোলনের তথ্য পেয়েছে। এই ৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যেসব ব্যক্তির নামে খোলা হয়েছিল, একই নামে আরও ৯১টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পান আর্থিক খাত নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দারা। এসব হিসাবে ২৯১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা জমা হয় এবং উত্তোলন করা হয় ২৯১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে যেসব নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, তার সবই অস্তিত্বহীন। ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ নামে ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে একটি ব্যাংকে মিরপুরের ঠিকানা এবং অন্য ব্যাংকে পুরান ঢাকা বাসীচরণ পোদ্দার লেনের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। দুই ঠিকানাতেই এই নামে প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া জামান এন্টারপ্রাইজ নামের অপর আরেকটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক হিসাবে নিজেদের আমদানিকারক উল্লেখ করলেও প্রতিষ্ঠানটির আমদানি নিবন্ধন পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে অর্থ লেনদেন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অর্থ লেনদেনের গতিপথ যাতে শনাক্ত করা না যায়, সেজন্য প্রতারণায় জড়িতরা মানি এক্্রচেঞ্জ, ট্রেডিং ব্যবসার প্রতিনিধি, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সরবরাহকারী, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস অপারেটর, মোবাইল এক্সেসরিজ, ফার্নিচার, কৃষি, হোটেল, স্টিল, সুপারশপসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করেছে, যা ব্যাংক হিসাবধারীদের ব্যবসার প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেকেই বড় ধরনের হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেসব ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে প্রতারণা অর্থ লেনদেন করা হয়েছে, তাদের অন্যতম একজন পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস। তার মালিকানাধীন ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, ও মা গোল্ড হাউজ নামে একাধিক ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়।
এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা ভিন্ন ভিন্ন (কাপড় ব্যবসা, সরবরাহকারী ও জুয়েলারি) প্রকৃতির দেখানো হয়েছে।
এছাড়া মা গোল্ড হাউজ নামে তাঁতীবাজারে স্বর্ণের দোকান থাকলেও দীর্ঘদিন সেটি বন্ধ রয়েছে। এসব ব্যাংক হিসাবে বিপুল অঙ্কের লেনদেন হলেও মনীন্দ্রনাথ ৩ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ৫ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছেন।
তাঁতীবাজারের ১৯/এ হোল্ডিংয়ের শামীমা মার্কেটের ৪ নম্বর দোকানটি মা গোল্ড হাউজ। আড়াই মাস ধরে দোকানটি বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কেটের দারোয়ান বিল্লাল ও আশপাশের দোকানদাররা। ওই দোকানের মালিক মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ওরফে মনুদা নিজেই। তিনি বড় কোনো ব্যবসায়ী নন। হঠাৎ দোকানটি দুই-তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। দোকানের কারিগরকে বিদায় করে দেয়া হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে