আস্থা ধরে রাখতে শরিয়াহ ব্যাংকগুলোতে তারল্য সহায়তা বাড়ছে
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
দেশের শরিয়াহ পরিচালিত ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট কাটাতে নানাবিধ সুবিধা প্রদানের পরও সঙ্কট না কাটায় এবার এসব ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট কাটাতে নগদ তারল্য সহায়তা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
গতকাল এসব ব্যাংকের গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখতে যে পরিমাণ তারল্য সুবিধা দরকার তা পূরনের বিশেষ ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর। একই সঙ্গে সঞ্চিতি রক্ষায় বিশেষ সুযোগ দেয়ার আশ্বাষ দেয়া হয়েছে বলে বৈঠক অংশ গ্রহণকারী একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামী শরিয়া পরিচালিত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে গভর্নরের নিয়মিত বৈঠক ছিল। সেখানে ব্যাংকের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে তারল্য ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোন সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু জানা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি জানান, গত বছরের কয়েকটি গণমাধ্যমে ইসলামী ধারার ব্যাংকের অর্থ পাচার ও অন্যান্য অনিমের বিষয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ায় ব্যাংক থেকে অস্বাভাবিকভাবে আমানত তুলে নেয় গ্রাহকরা। এতে ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট দেখা দেয়। এমনকি কয়েকটি ব্যাংকের এসএলআর ও সিএলআর সংরক্ষনে ব্যার্থ হয়েছে। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রনাধীন কয়েকটি ব্যাংকের চলতি হিসাব নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহায়তা দেয়া হয়। তবুও স্বাভাবিক হচ্ছে না অধিকাংশ শরিয়াহ ব্যাংক। এজন্য গতকাল বৈঠক ডাকা হয়। বেসময় গভর্নর তারল্যসহ প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহায়তার আশ্বাশ দেন।
এদিকে আমানত কমে যাওয়ার পাশাপাশি সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ সহায়তা নিয়েছে দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো। কিন্তু এই সহায়তার সঠিক ব্যবহার করতে না পারায় বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকগুলো এখনও তারল্য সঙ্কট রয়ে গেছে বলে মনে করছে মুডি’জ ইনভেস্টার্স সার্ভিস। অথচ কয়েক বছর আগেও সবার কাছে আস্থার নাম ছিল দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশের বৃহত্তম শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিকানায় বা আয়ত্বে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো চলে যাওয়ায় বিপত্তি ঘটে। ধীরে ধীরে পারিবারিক ব্যাংক বানিয়ে ফেলায় সঙ্কটে পড়তে থাকে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে দেশের ইসলামী ধারার ৬টি ব্যাংক রয়েছে। গ্রুপটি বিদেশে বিনিয়োগ ও নামে-বেনামে অর্থ হস্তান্তরের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংককে বাচাতে এবং বড় ধরণের অনিয়ম রোধে পর্যবেক্ষকও নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এস আলমের মালিকানায় যাওয়ার পর থেকে মানুষের আস্থা সঙ্কটে ভুগছে ব্যাংকগুলো। যে কারণে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল রেটিং এজেন্সি মুডি’জ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোয় এখনো তারল্য সঙ্কট কাটছে না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমানত কম হওয়ায় তারল্য সঙ্কটের কারণে অনেক ইসলামি ব্যাংকের পক্ষে স্বল্পমেয়াদী নির্দেশনাগুলো পূরণ করা কষ্টসাধ্য হতে পারে। গত মঙ্গলবার ফিচ রেটিংসের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের ইসলামি ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কটের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত জুনে ইসলামি ব্যাংকগুলোর সিস্টেম ওয়াইড ইনভেস্টমেন্ট (ঋণ) ও আমানত হার দাঁড়িয়েছে ১০১ শতাংশে। এর আগের বছর তা ছিল ৯৪ শতাংশ। মুডি’জ-এর প্রতিবেদনে বলা আরও হয়েছে, আনুপাতিক হারের এমন চিত্রের অর্থ দাঁড়ায় যথেষ্ট পরিমাণে কমে যাওয়ার পরও তারল্য ঘাটতি অব্যাহত আছে। বছরের পর বছর ভালো তারল্য থাকার পর সাম্প্রতিক সময়ে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।
২০২২ সালের শেষে ১০ ইসলামি ব্যাংকের সবগুলোর তারল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা পূরণ করে। এর ছয় মাস পর দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর মধ্যে চারটিতে নগদ অর্থের ন্যূনতম মজুদ ও নিয়ম অনুযায়ী তারল্য অনুপাত পূরণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না।
মুডি’জ-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুনের শেষে বাকি ছয় সূচক অপরিবর্তিত থাকলেও ইসলামি ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য ছিল সামান্য পরিমাণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুনে এ খাতে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ৬৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুসারে, আমদানিকারকদের জন্য লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিষ্পত্তি ও আমানত বৃদ্ধির ধীরগতির মধ্যে ঋণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ইসলামি ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে খরচ বেড়ে যাওয়ায় পারিবারিক সঞ্চয় কমেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর তহবিলে সংগ্রহের এই প্রধান উৎসে ভাটা দেখা যাচ্ছে।
২০২৩ সালের জুনে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে। এর আগের বছর তা ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, আগস্টে মূল্যস্ফীতি ২৩ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর তহবিল সঙ্কট দূর করার প্রচেষ্টা আগামীতে প্রত্যাশিত ফল নাও দিতে পারে। প্রায় দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতির কারণে ওয়েটেড এভারেজ ডিপোজিট রেট ৫ শতাংশেরও কম, যা নেতিবাচক অবস্থানে আছে। ব্যাংকিং খাতের পার্কিং তহবিল অনেক সঞ্চয়কারীর কাছে আকর্ষণীয় নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জুনে ইসলামি ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি গত বছরের একই সময়ে ছিল ১১ শতাংশ। সম্প্রতি কয়েকটি ইসলামি ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে গ্রাহকদের অনেকে আমানত তুলে নিয়েছেন। গত বছরের জুনে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ (ঋণ) প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। গত জুনে তা ১০ শতাংশেরও কম হয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে তহবিল সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুটি তারল্য সুবিধা চালু করে। এই দুই সুবিধাÑইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (আইবিএলএফ) ও মুদারাবাহ লিকুইডিটি সাপোর্ট (এমএলএস) কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো ইসলামি ব্যাংকগুলোকে তহবিলের বিকল্প উৎস সরবরাহ ও তাদের স্বল্পমেয়াদি তারল্য ঘাটতি পূরণে সহায়তা করা।
মুডি’জ-এর প্রতিবেদন বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারবে না। কারণ, এই উদ্যোগের সুবিধা নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ ব্যাংকগুলোর হাতে নেই। ফিচ র্যাটিংসের দৃষ্টিতে, ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়া, বাহরাইন, পাকিস্তান, মিশর, জর্ডান ও ওমানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম ইসলামি ব্যাংকিং বাজার।
উল্লেখ্য, দেশে ১০টি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে ছয়টি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব ব্যাংকগুলো নানা অনিয়ম বিপর্যস্ত।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী