ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

রাহমাতুল্লিল আলামীন যাকে ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

জীবনের অপর নাম ব্যস্ততা। আর তাই জীবিত মানুষমাত্রই ব্যস্ত। এত বিক্ষিপ্ত ও বিচিত্র এই ব্যস্ততা যে, তা লিখে শেষ করা যাবে না। পৃথিবীর নানা পেশার, নানা যোগ্যতার, নানা রুচি-প্রকৃতির অসংখ্য মানুষ সবাই ব্যস্ত। কেউ কথায় ব্যস্ত, কেউ কাজে ব্যস্ত, কেউবা ব্যস্ত চিন্তা-ভাবনায়, কর্ম-পরিকল্পনায়। দৃশ্যত অতি বিচিত্র ও বিক্ষিপ্ত হলেও জীবনব্যাপী আমাদের এই ব্যস্ততা কিন্তু সাধারণ কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত।

জীবিকা-অন্বেষণ, সন্তান-সন্তুতি, পরিবার-পরিজনের লালন-পালন, শিক্ষা-দীক্ষা, যোগাযোগ, আত্মীয়তা, সামাজিকতা এবং এ রকম আরো কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করেই গোটা পৃথিবীর মানুষ ব্যতিব্যস্ত। সকাল থেকে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের কোলাহল কলরবে গোটা মানব-বসতি যেন তরঙ্গায়িত।

কিন্তু এখানেও একটা ছক আছে। সারাদিনের কোলাহল দিন শেষে কমে যেতে থাকে। একসময় সব কোলাহল থেমে যায়, ব্যস্ততার তরঙ্গে তরঙ্গায়িত মানববসতি সম্পূর্ণ নিস্তরঙ্গ হয়ে পড়ে। চারদিকে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। ঘুমন্ত মানববসতিকে মনে হয় যেন এক বিরান গোরস্তান। কিন্তু পরের দিন আবার সূর্য ওঠে। ঘুমিয়ে পড়া বসতি আবারো জেগে ওঠে। আবার মানুষ ছুটতে থাকে। কোলাহল-কলরবে পাড়া-মহল্লা, শহর-নগর আবারও দুলতে থাকে। সময়ে স্রোতে এভাবেই ভেসে চলেছে আমাদের জীবন।

ভেবে দেখার বিষয় হলো, দিবস-রজনীর এই প্রাকৃতিক নিয়মে, নিদ্রা ও জাগরণের এই প্রাত্যহিকতায়, কোলাহল-নীরবতার এই দু-রঙ্গা ফ্রেমে আমাদের জীবনকে কে বন্দী করলেন? জীবনের সকল বিক্ষিপ্ততাকে কে এভাবে বিন্যস্ত করলেন? যা অতিক্রম করে যাওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। অতিক্রম চেষ্টায় কোনো লাভ নেই।
তিনি আল্লাহ। আমাদের রব। গোটা সৃষ্টি-জগতের প্রভু-পরওয়ারদেগার। তাঁর প্রভুত্বের ছাপ খোদাই করা আছে গোটা জাহানে। তাঁর দয়া ও পরওয়ারদেগারির মোহর অঙ্কিত আমাদের সর্বসত্তায়, সকল কর্ম-ব্যস্ততায়। তাঁর ইচ্ছা ও আদেশের অধীন আমরা সবাই। আমাদের সকল ব্যস্ততাও অধীন তাঁরই প্রাকৃতিক নিয়মের।

যে মহান মালিক আমাদের জীবনের সবকিছুকে আবদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করেছেন এক অদৃশ্য প্রাকৃতিক সূত্রে, তিনিই আমাদের দান করেছেন আমাদের জীবন ও কর্মের এক অনন্য আদর্শিক সূত্রও। যার দ্বারা আমাদের সকলের, সকল প্রকারের ব্যস্ততা সূত্রবদ্ধ হয় তাসবীহের বিক্ষিপ্ত দানাসমূহের মতো। সেই আলোকিত আদর্শিক সূত্রটি হচ্ছে আমাদের দ্বীন-ইসলাম।

এই পবিত্র আদর্শ মহান রাব্বুল আলামীনের অতি বড় দান। তাঁর রবুবিয়্যাতের সুমহান প্রকাশ। মানুষের জীবন-ধারনের জন্য যিনি চারপাশের প্রকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য উপাদান তিনিই মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য দান করেছেন সুমহান আদর্শ- দ্বীন ইসলাম। এই মহান দ্বীন যে মহামানবের সূত্রে আমরা লাভ করেছি, তিনি আমাদের প্রিয়নবী (সা.)। তাঁর উপর কোরবান আমাদের জান-মাল সবকিছু। কোরবান আমাদের সকল স্বজন-প্রিয়জন-প্রিয় বস্তু।

তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সমগ্র মানবতার মুক্তির দূত। এই পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত তাঁর আনীত আদর্শই অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। তাঁরই উপর নাযিল হয়েছে সর্বশেষ আসমানী কিতাব- আল কুরআন। আর তাঁর পবিত্র জীবন ও কর্ম হচ্ছে আল কুরআনের প্রায়োগিক ব্যাখ্যা। তাঁর পবিত্র সীরাত কিয়ামত পর্যন্ত সকল আল্লাহমুখী বান্দার চোখের জ্যোতি, আত্মার দ্যুতি, হৃদয়ের আলো, জীবন ও কর্মের আলোকবর্তিকা। মানবজাতির জন্য তিনি মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।

তাঁর উপর ঈমান আনা ছাড়া কেউ আল্লাহর কাছে মুমিন গণ্য হয় না। তাঁর সুন্নাহ অনুসরণ ছাড়া কোনো ইবাদত আল্লাহর ইবাদত হয় না। তাঁর ইত্তিবা ও অনুসরণ ছাড়া কোনো ভালো কাজ নেক আমল হয় না। তাঁর জীবনাদর্শের অনুসরণ ছাড়া কোনো জীবন আদর্শ জীবন হয় না।

তাঁকে ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ। তাঁর আনুগত্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায়। তাঁর পবিত্র জীবনের অনুসরণ দুনিয়া-আখিরাতে সফলতার চাবিকাঠি। যে আদর্শের অনুসরণে জীবন আল্লাহমুখী হয়, মানুষ আল্লাহওয়ালা হয়, জীবনের সকল কাজ-কর্ম আল্লাহমুখিতার আলোকিত সূত্রে সুবিন্যস্ত-আলোকিত হয়ে যায় তিনি সেই আদর্শের শ্রেষ্ঠ নমুনা।

যুগে যুগে তাঁরই পবিত্র সীরাতের স্পর্শে কত অর্থহীন জীবন হয়েছে অর্থপূর্ণ। কত সংকীর্ণ কূপম-ুক জীবন পরিণত হয়েছে কুলকিনারাহীন বিশাল সিন্ধুতে। কত লক্ষ্যহীন অস্থির জীবন পেয়েছে স্থির লক্ষ্যের সন্ধান। কত বিচ্যুত জীবন উঠে এসেছে জীবন ও আদর্শের আলোকিত রাজপথে। শুধু নিজেই উঠে আসেনি বরং তুলে এনেছেন আরো অসংখ্য জীবনকে।

কেমন ছিলেন সেই মানুষটি, যাঁর সাহচর্যে ‘মৃত’ মানুষ শুধু ‘জীবন’ই লাভ করেনি বরং পরিণত হয়েছে সঞ্জীবনী পরশপাথরে, যার স্পর্শে দিকে দিকে জ্বলে উঠেছে হেদায়েতের অনির্বাণ শিখা। মহান আল্লাহর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর উপর, চিরকাল!


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান