অনাবৃষ্টি খরতাপে শরৎ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
সর্বত্র ভ্যাপসা গা-জ্বলা গরমে-ঘামে হাঁসফাঁস কাহিল অবস্থা। ভাদ্র পেরিয়ে আশি^ন মাস চলছে বোঝার উপায় নেই। শরৎ ঋতু ঠিক মধ্যভাগে এখন। আবহমান বাংলায় শরৎকালে শেষ রাতে কিছুটা শীতের আমেজ দিয়ে হালকা-পাতলা বিক্ষিপ্ত কুয়াশা-পড়া শুরু হওয়ার কথা। অথচ ‘অসময়ে’ তাপপ্রবাহ বইছে ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলায়। গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায়ও ৩৭ ডিগ্রিতে উঠে গেছে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, প্রায় সারা দেশে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগসহ ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, ভোলা, ফেনী ও কুমিল্লা জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে তাপদাহ পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমে আসতে পারে।
মৌসুমের এ সময়ে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের যে ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে তাও নেই। মাঝেমধ্যে ছিটেফোঁটা বর্ষণে গরমের দাপট কাটছেই না। কোথাও নেই স্বস্তি। স্বল্প বৃষ্টিতে যেন গরমের তেজ উসকে উঠছে। তাছাড়া হঠাৎ ও ক্ষণস্থায়ী বর্ষণের পরই অসহনীয় ভ্যাপসা গরম আবারও ফিরে আসে। এ ধরনের বিপরীতমুখী আবহাওয়ায় অর্থাৎ উচ্চ তাপমাত্রার কারণে তীব্র উষ্ণতার সাথে স্বল্পসময়ের হঠাৎ বৃষ্টিতে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার প্রজনন পরিবেশ ও ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে বলে জানান বিশিষ্ট প্রাণিবিজ্ঞানি ও কীটতত্ত্ববিদ প্রফেসর ড. কবিরুল বাশার।
বাংলাদেশ ও এর সংলগ্ন অঞ্চলের আবহাওয়াম-লে ঘোর মেঘমালা সঞ্চার ও বৃষ্টিপাতের আবহ দুর্বল থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর পেছনে বৈশি^ক উষ্ণায়ন, জলবায়ুর নেতিবাচক ধারায় পরিবর্তনের সঙ্গে চলতি বছরে ‘এল নিনো’ অবস্থার ধাক্কাকে দায়ী করছেন আবহাওয়া-জলবায়ু বিশেষজ্ঞগণ। ‘এল নিনো’র প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ স্রোত বয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে বৃষ্টিরোধক অবস্থা তৈরি হয়েছে। এলোমেলো হয়ে উঠেছে আবহাওয়ার আচরণ। যার প্রভাবে বিশেষত এশিয়ার দেশসমূহে উচ্চ তাপমাত্রায় তীব্র তাপপ্রবাহ, খরা-অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি-বন্যা-ঢল, ঘূর্ণিঝড়সহ দুর্যোগের ঘনঘটা বিরাজ করছে।
অনেক সময়েই আবহাওয়ার পূর্বাভাস বাস্তব অবস্থার সাথে মিলছে না। শুধু তাই নয়, চলমান চরম-ভাবাপন্ন আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের ধারার সাথে ‘এল নিনো’র প্রভাবে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস-জনিত রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সম্প্রতি আইআরআরসি’র গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে। যা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সঙ্কট ও ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। নিম্নআয়ের ও মধ্যবিত্তরা চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থায় পড়েছেন। বিজ্ঞানরা বলছেন, অতি উষ্ণ ও বৈরী আবহাওয়ায় কমে যাচ্ছে মানুষের কর্মক্ষমতা এবং গড় উৎপাদনশীলতা।
এদিকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর উড়িষ্যা উপকূলের বিপরীতে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। তবে পরদিনই লঘুচাপটি দ্রুত দুর্বল হয়ে কেটে গেছে। এতে করে উত্তর বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘমালা ও বৃষ্টিপাত সঞ্চারের যে আবহ তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় তা তিরোহিত হয়ে যায়। এর মাত্র এক সপ্তাহ আগেও সমুদ্রে আরেকটি লঘুচাপ ঘনীভূত হওয়ার আগেই দুর্বল হয়ে কেটে যায়। এবার ভরা বর্ষাকালে ও প্রাক-বর্ষায় মে-জুন-জুলাই মাসে (আষাঢ়-শ্রাবণসহ) সারা দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে গড়ে ৬৭ শতাংশই কম। তবে বর্ষা শেষেই গেল আগস্টে দেশে ৩৬ ভাগ বেশি বৃষ্টি ঝরে। তবে বর্ষা শেষের এ বৃষ্টিতে মাটির তলায় পর্যাপ্ত পানির রিচার্জ বা পুনর্ভরণ হয়নি।
সারাবছর উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও দেশে সার্বিক তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ঊর্ধ্বে থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। টানা তাপদাহ ও খরা-অনাবৃষ্টির কারণে দেশের অধিকাংশ জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচের দিকে নামছেই। বর্ষাকাল শেষ হতে না হতেই ফল-ফসল, ক্ষেত-খামারে চাষাবাদে পানির সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকের ব্যয় বেড়েছে বাড়তি কৃত্রিম সেচের পেছনে। সেই সাথে অতি উষ্ণ ও চরম-ভাবাপন্ন আবহাওয়ায় ডেঙ্গুর বিস্তারসহ হরেক ধরনের রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আজ মঙ্গলবার দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বর্ষণ : মৌসুমী বায়ু হঠাৎ সক্রিয় হওয়ায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত, কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হয়েছে। এ সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১১৭ মিলিমিটার। ঢাকায় ২২, চট্টগ্রামে ৯৮, রাজশাহীতে ২১, সিলেটে ২৬, খুলনায় ১১, বরিশালে ৬৩ মি.মি.সহ দেশের অনেক জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তবে রংপুর ও ময়মনসিংহে কোন বৃষ্টি হয়নি। রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় স্বল্প বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৩৬.৪ এবং সর্বনি¤œ বান্দরবানে ২৩.৬ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় পূর্ববর্তী তাপমাত্রা ৩৬.৯ থেকে বৃষ্টির সুবাদে নেমে আসে ৩২.৫ ডিগ্রিতে।
পরবর্তী আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রতিবেদনে আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামীকাল বুধবার ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক স্থানে হালকা বা মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। দিন-রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক