যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান গোপন অস্ত্র চুক্তি : পুরস্কার আইএমএফ ঋণ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
এই বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে গোপনে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে পাকিস্তান, তার পুরস্কার হিসাবে মিলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ঋণ। এই বিস্ফোরক এই তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া পাকিস্তান সরকারের গোপন নথিপত্রে। ফাঁস হওয়া কিছু নথি অনুযায়ী, ২০২২ সালের গ্রীষ্ম থেকে ২০২৩ সালের বসন্ত পর্যন্ত অস্ত্র বিক্রি করেছে পাকিস্তান। সেই অস্ত্র ব্যবহার করেছে ইউক্রেন।
অভ্যন্তরীণ পাকিস্তানি এবং মার্কিন সরকারী নথির সাথে যুক্ত দু’টি সূত্র মতে, ইউক্রেন বর্তমানে যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতিতে ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আবহের মধ্যেই চরম অর্থ সঙ্কট তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানে। এই সুযোগে সহজ শর্র্তে আইএএফ এর ঋণ পাইয়ে দেয়ার মার্কিন মধ্যস্থতায় গ্লোবাল মিলিটারি প্রোডাক্টস নামক একটি সংস্থার মাধ্যমে এই অস্ত্র কেনাবেচার চুক্তি স্বাক্ষর করে পাকিস্তান। এবং গত জুলাই মাসে আইএমএফ দেশটির জন্য ৩শ’ কোটি ডলারের ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করে।
পাকিস্তানের গোপন নথিপত্রে সাথে প্রকাশ্যে এসেছে দেশটির আর্থিক এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের পর্দার আড়ালের চেহারাটিও, যা জনগণের কাছে খুব কমই উন্মোচিত হয়, যদিও জনসাধারণকে এন মূল্য পরিশোধ করতে হয়। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে দীর্ঘ পরিকল্পিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য মস্কো গিয়েছিলেন। এই সফর মার্কিন কর্মকর্তাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে।
এরপর, মার্কিন সহকারী স্বরাষ্ট্র সচিব ডোনাল্ড লু তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ খানের সাথে এক বৈঠকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, পাকিস্তান শুধুমাত্র ইমরানের নির্দেশে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। অন্যান্য মার্কিন কূটনীতিকরাও ইমরান ক্ষমতায় থাকলে ভয়ানক পরিণতির হুঁশিয়ারি দেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে, তাকে অপসারণ করা হলে সবাইকে ক্ষমা করা হবে।
তারপর, ২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় একটি অনাস্থা ভোট সাজিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অপসারণ করে। তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের পক্ষ নিয়েছে এবং পুরষ্কার হিসেবে আইএমএফ এর ঋণ পেয়েছে। এদিকে, ইমরানকে অপসারণের পর সামরিক বাহিনী তার রাজনৈতিক দলকে নির্মূল করার জন্য ব্যাপক হত্যা এবং গণ আটকের শুরু করে।
আইএমএফ এর জরুরী ঋণ নতুন পাকিস্তান সরকারকে সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী নিপিড়ন শুরু করার এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন স্থগিত করার জন্য নতুন পাকিস্তান সরকারকে সুযোগ করে দিয়েছে, যা দেশটির জনপ্রিয় নেতা ইমরান খানকে ভবিষ্যত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখার একটি অজুহাত হিসাবে দেখা হচ্ছে।
কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের গণতস্ত্র রক্ষায় মরিয়া হলেও, পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম মাত্রার বিষয়ে নীরব ছিল, যা দেশটির গণতন্ত্রের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের প-িত এবং পাকিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আরিফ রফিক বলেছেন, ‘ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত যেতে পারে।›
রফিক বলেন, ‹মূল কথাটি হল, আমাদের ইউক্রেনকে বাঁচাতে হবে, ইউরোপের পূর্ব সীমান্তে গণতন্ত্রের এই যোদ্ধাকে বাঁচাতে হবে। আর মূল্য দিতে হবে এশিয়ার এই বাদামি দেশটিকে। তাই তারা স্বৈরশাসনে থাকতে পারে, তাদের জনগণের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা যেতে পারে, যেভাবে এই দেশের প্রতিটি জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বরা বলছেন যে, আমাদের নেতা নির্বাচন করার ক্ষমতা, নাগরিক স্বাধীনতা পাওয়ার ক্ষমতা, আইনের শাসন, এই সমস্ত কিছু যা অনেক ইউরোপীয় দেশ এবং সংহতির গণতন্ত্রকে রাশিয়ার থেকে আলাদা করতে পারে, পেতে হলে আমাদের ইউক্রেনকে সমর্থন করতে হবে।›
তবে, যুক্তরাষ্ট্র বা পাকিস্তান কেউই এখন পর্যন্ত এই চুক্তির কথা স্বীকার করেনি, তবে অস্ত্র লেনদেনের বিশদ বিবরণ এই বছরের শুরুতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর একটি সূত্রের মাধ্যমে দ্য ইন্টারসেপ্টের কাছে ফাঁস হয়েছে। নথিগুলি বলছে যে, চুক্তিতে মার্কিন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের স্বাক্ষরের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ বন্ধকী রেকর্ডে তার স্বাক্ষরের সাথে মিল প্রমানিত হয়েছে। এবং মার্কিন নথির সাথে প্রকাশ্যে উপলব্ধ কিন্তু পূর্বে অপ্রকাশিত স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান দ্বারা পোস্ট করা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অস্ত্র বিক্রির নথিগুলি পর্যালোচনা করে এটি প্রমানিত হয়েছে।
দ্য ইন্টারসেপ্টের তদন্ত অনুসারে, ২০২৩ সালের ২৩ মে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মাসুদ খান ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড লু-এর সাথে অস্ত্র বিক্রি এবং আইএমএফের ঋণ সংক্রান্ত বৈঠকে বসেন। লু স্বীকার করেছেন যে, পাকিস্তানিরা মনে করেছিল যে, তাদের অস্ত্রের মূল্য ৯০ কোটি মার্কিন ডলার, যা তাদের আইএমএএফ এর শর্ত অনুযায়ী অবশিষ্ট অর্থ মেটাতে সাহায্য করবে, যা প্রায় ২শ’ কোটি মার্কিন ডলার। তবে, যুক্তরাষ্ট্র আদতে পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে আইএমএফকে কতোটা অর্ত পরিশোধ করবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক