কোটি অংকের ব্যাংক হিসাব ১ লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৫ এএম
ব্যাংকে কোটি টাকা রয়েছে- এমন হিসাবের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশেষ করে আর্থিক সঙ্কট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতি চাপের মধ্যেও বড় অঙ্কের জমার হিসাব সংখ্যা বেড়েছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি রয়েছে; এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সংখ্যা এক লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের এই আদিকালের ‘কোটিপতি হিসাব’ ব্যবহার নিয়ে আর্থিখ খাতের বিশ্লেষকদের প্রশ্ন রয়েছে। তাদের মতে, এক সময় ‘লাখোপতি’ শুনলে মানুষ মনে করতেন বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক। যার লাখ টাকা রয়েছে সেই লাখোপতি। পরবর্তীতে সেটা বাড়িয়ে ‘কোটিপতি’ হয়। মানুষের মধ্যে বলাবলি হতো ওনি কোটি টাকার মালিক (কোটিপতি) এখন সারাবিশ্বের মানুষের মতো বাংলাদেশের বিত্তবানের সংখ্যাও বাড়ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ নানাভাবে মানুষ অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ছে। এখন গণিতের টাকার অংকের বদলে ডলারের অংশে অর্থের হিসাব হয়। মিলিয়ন, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন, কোয়াড্রিলিয়ন এবং কুইন্টিলিয়ন অর্থের হিসাব হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেকেলে হিসেবে ‘কোটিপতি’তে পড়ে রয়েছে। মাঝে মাঝেই এভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, দেশে দেশে এতজন কোটিপতি রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমান বাজারে এক কোটি টাকার মালিক কোন পর্যায়ে পড়ে? ব্যবসা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান যারা পরিচালনা করেন তাদের কেউ কেউ ১৫-২০ কোটি টাকার এলসি খোলেন ব্যবসায়িক কাজে। কয়েক বছরে দেশের বাজেট শতগুণ বেড়েছে। যে দেশে প্রায় ১ লাখ শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। সেগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-লেনদেন হচ্ছে। এক সময় একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ২ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেতেন; এখন ২ থেকে ৩ লাখ টাকাও বেতন পান। একটি পিয়নের চাকরি, একটি দারোয়ানের চাকরি নিতে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। সে দেশের ব্যাংকগুলো এখনো সেকেলে কোটিপতির হিসাব প্রকাশ নিয়েই পড়ে রয়েছেন। ব্যাংকিং সেক্টরে দায়িত্বশীলদের এই সেকেলে চেতনা থেকে সরে এসে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত বলে মনে করছেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা।
২০২৩ সালের জুনভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানেই উঠে আসে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নানা সঙ্কট আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যাঁতাকলে পিষ্ট নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছে না। ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারছে না। ব্যাংকে টাকা জমানো তো দূরের কথা, অনেকে আগের জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতেও এক শ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে। এরা হচ্ছে বিত্তশালী বা বড় প্রতিষ্ঠান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৯২ টি। যেখানে জমা ছিল ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছেÑ এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি। কোটি টাকার উপরে এসব হিসাবে জমা ছিল ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ কোটি টাকার হিসাবধারীদের টাকা।
তিন মাস আগে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫৬টি। জমা ছিল ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানতের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ১৯২টি। এ হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ৩ হাজার ৩৬২টি আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫ হাজার ৯৭টি। এক বছর আগেও ২০২২ সালের জুনে কোটি টাকার হিসাব ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭টি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে, এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৭৭২ টি। যেখানে জমা ছিল এক লাখ ৮৬ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ২৪৫টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা।
এছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৮১টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৮৬৫টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ২৭৬টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯০৯টি আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০৭টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৫৩টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭২২টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৮২৪টি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এ আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬ টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬ টি।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭
রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ
ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা
উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন
ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা
উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের
দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা
ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ
হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি
রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক
কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত
গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার
সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান