একদিনে আরো ২১ জনের মৃত্যু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেই

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। পরিস্থিতি যেন অনেকটাই মহামারির দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর চাপ। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করলেও কিছুতেই যেন লাগাম টানা যাচ্ছে না ডেঙ্গুর। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিদিনের কার্যক্রমে মশার যেন কিছুই হচ্ছে না। তাদের মশা নিধন কার্যক্রম শুধু লোক দেখানো বলছেন অনেকে। দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল উদ্যোগ না থাকার কারণে দিন দিন মশার প্রকোপ বাড়ছে কবলে মনে করছেন নগরবাসী।

এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৭ জনে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ২১ জনের মধ্যে ১০ জন ঢাকার এবং বাকি ১১ জন অন্যান্য জেলার বাসিন্দা। এদিকে, গত একদিনে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও তিন হাজার ১৫ জন। এতে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৮১০ জনে। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নিয়মিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৭৬ হাজার ৮১০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৫ হাজার ৮৩৩ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৯৭৭ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৯৭৭ জন।

এদিকে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮০ জন ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭১ হাজার ৪২৬ জন এবং ঢাকার বাইরের বাসিন্দা ৯৪ হাজার ২৫৪ জন। দেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে গত বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা গেছেন।

চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে শয্যা সঙ্কট। সেই সঙ্গে রোগীর অতিরিক্ত চাপে নাকাল হচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এসবের মধ্যেই নতুন করে আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে নেগেটিভ রিপোর্ট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও লক্ষণ সব ডেঙ্গুর মতোই। তাই বিষয়টি বিবেচনা করে নেগেটিভ রোগীদেরও ডেঙ্গুর ট্রিটমেন্ট প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, এনএস-১ অ্যান্টিজেন টেস্টে পজিটিভ আসে যদি জ্বর আসার তিনদিনের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু, কেউ যদি লক্ষণ দেখা দেওয়ার চার-পাঁচ দিন পর আসে তাহলে তাকে আমরা ডেঙ্গু আইজিএম পরীক্ষা করতে বলি। এরপর যেটা দেখা যায়, এনএস-১ নেগেটিভ আসা অনেকেরই আবার ডেঙ্গু পজিটিভ আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেডিকেল অফিসার বলেন, ইদানিং শুধু এনএস-১ পরীক্ষায় ডেঙ্গুর সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। অসংখ্য রোগীর এনএস-১ পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, কিন্তু ডেঙ্গু আইজিএম বা আইজিজি পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজিটিভ আসছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, এনএস-১ পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসতেই পারে। এ টেস্টে ৭০ শতাংশের মতো ঠিকঠাক রিপোর্ট আসে। বাকি ৩০ শতাংশ নেগেটিভ আসতেই পারে। এ ছাড়া, কততম দিনের মাথায় পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেটিও অনেকাংশে নির্ভর করে। কেউ যদি চার দিন পর এনএস-১ পরীক্ষা করেন, তার নেগেটিভ আসবে— এটিই স্বাভাবিক। এজন্য আরও কিছু পরীক্ষা করে ডায়াগনসিস করতে হয়। এজন্য অন্যান্য বøাডের প্যারামিটার যেগুলো আছে সেগুলো দেখেও ডেঙ্গু ডায়াগনসিস করতে হয়। বিশেষ করে বøাডের টোটাল কাউন্ট, প্লাটিলেট কাউন্ট, হেমাটোক্রিট— এগুলোর অনেক কিছু দেখে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হয়।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হিজরি সন : প্রেসিডেন্ট

মুসলিম ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হিজরি সন : প্রেসিডেন্ট

সাংবাদিকদের সকল মিথ্যা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর

সাংবাদিকদের সকল মিথ্যা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর

নেত্রকোনার পূর্বধলায় ৬০ বস্তা ভারতীয় চিনি আটক

নেত্রকোনার পূর্বধলায় ৬০ বস্তা ভারতীয় চিনি আটক

প্রতিবেশীদের কাছে প্রযুক্তিগত-প্রকৌশ পরিষেবা রপ্তানি বাড়িয়েছে ইরান

প্রতিবেশীদের কাছে প্রযুক্তিগত-প্রকৌশ পরিষেবা রপ্তানি বাড়িয়েছে ইরান

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে ২২ বছর বয়সেই সংসদ সদস্য হলেন আর স্যাম কার্লিং

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে ২২ বছর বয়সেই সংসদ সদস্য হলেন আর স্যাম কার্লিং

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের মৃত্যু

রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৫ জনের মৃত্যু

দেশের বাজারে বেড়েছে  স্বর্ণের দাম

দেশের বাজারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

নোয়াখালীতে দায়িত্বে অবহেলায় তিন শিক্ষককে অব্যাহতি

মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হবে : বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী

মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হবে : বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফ্রান্স-বাংলাদেশ অভিযোজন চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে : পরিবেশমন্ত্রী

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফ্রান্স-বাংলাদেশ অভিযোজন চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে : পরিবেশমন্ত্রী

বিতির নামাজে কোনো ভুল হলে সাহু সিজদা দেওয়া প্রসঙ্গে।

বিতির নামাজে কোনো ভুল হলে সাহু সিজদা দেওয়া প্রসঙ্গে।

চাল আমদানি নয় ভবিষ্যতে আমরা রপ্তানি করবো : খাদ্যমন্ত্রী

চাল আমদানি নয় ভবিষ্যতে আমরা রপ্তানি করবো : খাদ্যমন্ত্রী

দ: কোরিয়া বাংলাদেশে ‘দক্ষ কর্মী’ গড়ে তুলতে ১০০ কোটি টাকা দিবে

দ: কোরিয়া বাংলাদেশে ‘দক্ষ কর্মী’ গড়ে তুলতে ১০০ কোটি টাকা দিবে

দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার: রেলমন্ত্রী

দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার: রেলমন্ত্রী

বেপজা পরিদর্শন চীনা টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদলের

বেপজা পরিদর্শন চীনা টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদলের

জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে

জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে

এক দফা দাবিতে চলবে কোটা সংস্কার আন্দোলন, কর্মসূচি ঘোষণা

এক দফা দাবিতে চলবে কোটা সংস্কার আন্দোলন, কর্মসূচি ঘোষণা

বাংলাদেশ শিগগিরই গৃহহীন মুক্ত দেশ হবে : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ শিগগিরই গৃহহীন মুক্ত দেশ হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে ২০ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে ২০ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী