আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় জয় পাচ্ছে বৈশ্বিক দক্ষিণ
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২৭ পিএম | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার অনেকের কাছে বিস্ময়কর ছিল যে, বিশ^জুড়ে ৩০টিরও বেশি দেশ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়াকে নিন্দা জানানোর জাতিসংঘ ভোটে বিরত রয়েছে এবং দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবে সম্মত হতে অস্বীকার করেছে। যে ৪০টি দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় সম্মত হয়েছে, বিশ্বের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সেসব দেশে বসবাস করে না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে ভূ-রাজনৈতিক বিভাজন সেপ্টেম্বরের শুরুতে ভারতে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনেও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, যা একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার উন্মোচন ঘটিয়েছে।
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য নামকাওয়াস্তে একটি বিবৃতিতে রাশিয়ার সমালোচনা না করে শুধুমাত্র ইউক্রেনের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জি২০-এর বিবৃতিতে এটি প্রতীয়মান হয় না যে, এই দেশগুলি রাশিয়াকে সমর্থন করে এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখ-তার প্রতি তাদের সমর্থন নেই। জোটটির বিবৃতির প্রকৃত অর্থ হল, যে তারা এটিকে একটি ইউরোপীয় যুদ্ধ বলে মনে করে যেখানে তাদের কোনও ম্বার্থ নেই। এটা দেখায় যে, তারা যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি চাচ্ছে, এমনকি অতি ন্যায়সঙ্গত সমাধান না হলেও। এর অর্থ হল, তারা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অনুগত থাকার মূল্য দিতে রাজি নয়। কারণ তারা খাদ্য ও জ¦ালানী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এর পরিণতি ভোগ করছে।
‹বৈশি^ক উত্তর› এবং ‹বৈশি^ক দক্ষিণ›-এর মধ্যে সেতু পুনর্র্নিমাণের বিষয় নিয়ে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক একটি বিতর্কও পশ্চিমাদের চোখ খুলে দেয়ার কাজ করেছে। ‘বৈশি^ক দক্ষিণ› শব্দটি এখন পশ্চিমের প্রায় প্রতিটি সমাবেশেই উঠে আসছে। বৈশি^ক দক্ষিণ জোটের মধ্যে রয়েছে অতীতের অনেক উন্নয়নশীল দেশ এবং উপনিবেশিক দেশ। এই জোটে চীন এবং ভারতের মতো অর্থনৈতিক শক্তি, তুরস্ক, ব্রাজিল এবং সউদী আরবের মতো মাঝারি আকারের শক্তি রয়েছে। এবং রয়েছে দরিদ্র দেশগুলিও, যারা পশ্চিমা আধিপত্যের কাছে তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য সংগ্রাম করে।
বৈশি^ক দক্ষিণের দেশগুলি এই অভিন্ন লক্ষ্য ভাগ করে নিয়েছে যে, তাদের কণ্ঠস্বর পশ্চিম দ্বারা শাসিত বা নির্ধারিত হওয়ার পরিবর্তে স্বাধীনভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। এই লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন জোট তৈরি ও সম্প্রসারণ করছে, যেমন সাম্প্রতিক ব্রিক্স (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) শীর্ষ সম্মেলনে আর্জেন্টিনা, মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সদস্য করে জোটটির বিস্তৃতি ঘটানো হয়েছে। তারা এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান নিচ্ছে, ইকোনমিক কমিউনিটি অফ ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) নাইজারে অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের পরামর্শ দিচ্ছে।
বৈশি^ক দক্ষিণ আন্তর্জাতিক শান্তি নির্মাতা হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠা করছে। এ লক্ষ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, সেনেগাল, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, জাম্বিয়া এবং উগান্ডা সহ আফ্রিকান নেতারা শান্তির জন্য চাপ দিতে এবং শস্য রপ্তানি অব্যাহত রাখতে কিয়েভ এবং মস্কো ভ্রমণ করেছেন। ইউক্রেনের যুদ্ধাবসানের মধ্যস্থতা করার জন্য সউদী আরব জেদ্দায় ৪০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছে যে, এশিয়া এই বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ৭০শতাংশ পরিচালনা করবে এবং ভারত ও চীন একাই এতে প্রায় অর্ধেক অবদান রাখবে।
কূটনীতি, অর্থনীতি, বানিজ্য এবং বিভিন্ন সংস্থায় বহুবিধ জোটের মাধ্যমে দক্ষিণের দেশগুলি বিশ্বে একটি শক্তিশালী ভূমিকা তৈরি করছে। ভারত, উদাহরণস্বরূপ, একদিকে, চীন নেতৃত্বাধীন ব্রিক্সের সদস্য, অন্যদিকে দেশটি কোয়াডেরও সদস্য (জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে)। বৈশি^ক দক্ষিণের নেতা হতে উচ্চাকাঙ্খী ভারত জি-২০ আফ্রিকান ইউনিয়নকে জোটে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংঠনটিকে বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তির দিকে নিয়ে গেছে। সউদী আরব ওয়াশিংটনের সাথে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব এবং ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা সত্ত্বেও সম্প্রতি ব্রিক্সে যুক্ত হয়েছে। তুরস্ক একটি ন্যাটো মিত্র, কিন্তু রাশিয়ার সাথে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং মস্কোর প্রত্যাহার করা শস্য চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করতে চায়।
বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলি তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিকে কার্বনশূন্য করার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইউরোপ তার বেশিরভাগ লিথিয়াম এবং কোবাল্ট যথাক্রমে চিলি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো থেকে আমদানি করে, যেখানে চীনের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ নিষ্কাশন, প্রক্রিয়াকরণ এবং উৎপাদনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে।
রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় দেশগুলির প্রতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ ও অসন্তোষকে সামনে নিয়ে এসেছে, যা পশ্চিমা দেশগুলির কয়েক শতাব্দীর ঔপনিবেশিকতা এবং নব্য ঔপনিবেশিক অনুশীলনের জন্য এবং প্রায়শই বিশে^র বিভিন্ন অংশে অধিকার ও আইন লঙ্ঘনের প্রতি তাদের প্রদর্শিত দ্বৈত আচরণের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ পশ্চিমকে বাধ্য করেছে বৈশি^ক দক্ষিণকে উপেক্ষা করা বন্ধ করতে। দক্ষিণের ভূ-রাজনৈতিক শক্তির জয় উত্তরকে ভবিষ্যতে এর সাথে সহজ সম্পর্কের দিকে নিয়ে যাবে না, তবে তা বৈশি^ক উত্তরকে সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রে সততা অবলম্বনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী