বাজারে আগুন জ্বলা দাম
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যারা দাম বাড়তি না। বলতে গেলে বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। তুলনামূলক কম দাম বলতে শুধু মাত্র পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা। আর বরবটি, টমেটো তো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া সেঞ্চুরি ক্রস করে ১২০-এ গাজর, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। সব মিলিয়ে অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে সব সবজির দামও বলতে গেলে আকাশ ছোঁয়া। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির কারণে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা কারওয়ান বাজার থেকে সবজি কিনে খুচরা বিক্রি করেন। মাঝ রাত পর্যন্ত চলা বৃষ্টিতে বাজার এবং রাস্তায় পানি জমে থাকায় রাতেও কারওয়ান বাজারে বেচাকেনা কম হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়েছে সবজির দামে। তাই সবজি কম এসেছে। এ কারণে দাম বেড়ে গেছে ১০-২০ থেকে টাকা পর্যন্ত।
রামপুরার উলন রোডের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন কাঁচাবাজারে ঢ্যাঁড়স কিনতে গিয়ে দেখেন, প্রতি কেজির দাম ৬০ টাকা। অথচ বৃহস্পতিবার তিনি একই সবজি কেনেন ৫০ টাকায়। একইভাবে প্রতি আড়াইশো গ্রাম কাঁচা মরিচের দাম ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। আব্দুল হামিদ নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এলে কিছুই কিনে শান্তি পাই না। সব কিছুতেই আগুন জ্বলা দাম! যে জিনিস কিনতে যাই, সেটারই দাম বেড়ে যায়। যে বাজেট নিয়ে বের হই, তা দিয়ে আর সবকিছু কেনা হয় না। বাজারে এলেই তো ঘাম ছুটে যায়। এভাবে কী চলা যায়?’ এভাবেই আক্ষেপের সুরে ক্রমশ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির বর্ণনা দিচ্ছিলেন
প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির এমন অভিযোগ শুধু আব্দুল হামিদের নয়, ম্যাচে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাইফেরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাবার উপায় নেই।
হঠাৎ দাম বাড়লো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আফজাল নামে এক বিক্রেতা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির কারণে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে। তাই সবজি কম এসেছে। এ কারণে দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, কয়েকদিন বিভিন্ন জায়গায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ফসল রক্ষায় কৃষক ব্যস্ত। এ কারণে জোগান কম। শুধু রামপুরা বাজারই নয়; গতকাল রাজধানীর মালিবাগ, মহাখালী, সেগুন বাগিচাসহ একাধিক বাজার ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি, ফলে সবজি কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যার মধ্যে লম্বাকৃতির বেগুন প্রতি পিস ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকায় এবং ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি পিস জালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারে সবজির মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বলতে পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কাঁচা কলা প্রতি হালি (৪ টি) ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, মূলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কচুর মুখি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা আর কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম ভোক্তা পর্যায়ে নির্ধারণ করে দিয়েছিল গত ১৪ সেপ্টেম্বর। এরই মধ্যে কেটে গেছে নয় দিন। বেঁধে দেয়া দাম এখনো কার্যকর হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে আলু-পেঁয়াজের সঙ্কট দেখা গেছে খুচরা বাজারে। গতকাল বাজারে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় আর আগের আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এছাড়া ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর খুচরা দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা ও পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা বেঁধে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া ডিমের ডজন ১৪৪ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলু ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রফিকউল্লাহ বলেন, পাইকারিতে ডিমের দাম সামান্য কমেছে। তাতে খুচরায় কমানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বরং মুন্সিগঞ্জ এলাকায় দুইদিন আলু বিক্রি বন্ধ থাকায় উল্টো দাম বাড়ছে।
শুধু সবজির বাজারেই আগুন নয়; কিছুদিন আগে ৩২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হওয়া রুই মাছ কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, ভরা মৌসুমেও মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা কেজিদরে। বড় সাইজের ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে শুরু করে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত, তবে ছোট সাইজের কিছু ৮০০ টাকা কেজিদরে পাওয়া যাচ্ছে। কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে বাটা মাছ।
গত সপ্তাহেও এ মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। বড় সাইজের ট্যাংরা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা দরে। তবে মানভেদে এ মাছ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া ছোট পুঁটিমাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে, ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে মলা মাছ। তবে ভালো মানের কোনো ছোট মাছই ৫০০ টাকা কেজিদরের নিচে মিলছে না।
এদিকে, বাজারে ব্রয়লার কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে অবশ্য ১৭০ টাকা কেজিদরে ব্রয়লার পাওয়া গেছে। অপদিকে, রোস্টের মুরগি কেজিপ্রতি ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে মাছ ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ বলেন, মাছের দাম তো একরকম থাকে না। দাম বাড়ে কমে। আমরা আড়ত থেকে যে দামে কিনি, তার থেকে অল্প কিছু লাভে বিক্রি করি। এখানে আমাদের তো কিছুই করার নেই। অপর এক মাছ বিক্রেতা তুহিন বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়ছে। তাই মাছের দামও বাড়ছে। আমরা তো আর দাম ঠিক করে দেই না। আমরা কমে কিনতে পারলে কম দামেই বিক্রি করব।
রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হেলাল আহমেদ বলেন, মাছ-গোশতে তো আমরা সাধারণ ক্রেতারা হাত দিতেই ভয় পাই। এখন আবার সবজির দামও বাড়তি, বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। আগে যে সবজি কিনেছি এক কেজি সেটা দামের কারণে বাধ্য হয়ে এখন আধা কেজি কিনি। সব ধরনের সবজির দাম যদি এত বাড়তি হয়, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা এগুলো কীভাবে কিনবে?
রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে আসা মামুন হোসেন ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তিনি বলেন, বাজারে সবকিছুর এত দাম বেড়েছে যে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের জন্য যেন কিছুই কেনার নেই। এমনকি সবজি কিনতে এসেও বিচার বিবেচনা করতে হয় কোন সবজিটা কিনব। সব সবজিগুলোরই বেশি দাম। বরবটি, করলা, বেগুন কিনতে যেয়ে দেখলাম বেশি দাম, তাই বাধ্য হয়ে তুলনামূলক কম দামি সবজি পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়া কিনলাম। অন্যদিকে এক ব্রয়লার ছাড়া অন্যান্য সব কিছুর দামই বাড়তি। যে কারণে মাছ-গোশত কেনাও যায় না। আগে তাও সবজির দাম কিছুটা কম ছিল, অন্তত সবজি কিনে খাওয়া যেত। এখন তো দাম বাড়তির কারণে সবজি কেনারও উপায় নেই।
সবজির বাড়তি দামের বিষয়ে মহাখালী কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা হুমায়ন কবীর বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। এর মূল কারণ- এখন অনেক সবজির মৌসুম না, ফলে এগুলোর দাম বেশি। মূলত শীতকাল আসার আগ পর্যন্ত সবজির দাম এমন বাড়তিই থাকে। কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য সব পাইকারি বাজারে সব ধরনের সবজিই প্রতি পাল্লায় দাম বেড়েছে। সে কারণে আমাদের কেনার খরচ আগের চেয়ে বেশি লেগে যাচ্ছে। এরপর তা পরিবহনসহ শ্রমিক খরচ, রাস্তা খরচ, যেখানে দোকান বসাচ্ছি তার খরচ সব মিলিয়ে খুচরা বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। তিনি বলেন, দাম বাড়ার কারণে আমাদের মতো ছোট খুচরা ব্যবসায়ীদের ব্যবসা কমে গেছে। কারণ মানুষ কম সবজি কিনছে বেশি দামে। আগে একজন ক্রেতা যেখানে এক কেজি করে প্রতিটা সবজি নিতো, এখন অনেকেই নেয় আধা কেজি। ফলে আগে যেখানে এক পদের সবজি ২০ কেজি নিয়ে আসতাম, এখন নিয়ে আসি ১০ কেজি ৫ কেজি করে।#
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা