রাজপথ বিএনপির দখলে না দিতে দলীয় নির্দেশনা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
আওয়ামী লীগের লাগাতার কর্মসূচি আজ শনিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ (উত্তর ও দক্ষিণ)। আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, ওই সমাবেশের আগে মহানগরের সঙ্গে আলাদাবে সভা করেছে দলটির ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি যদি হরতাল, অবরোধের মত কঠোর কর্মসূচি দেয় সে ক্ষেত্রে বিএনপির নাশকতার বিরুদ্ধেই দলের শান্তির বার্তাকেই সামনে নিয়ে আসবে আওয়ামী লীগ। অতীতে যেখাবে বিএনপির কঠোর আন্দোলণকে দমন করা হয়েছে অনেকটা নেই স্টাইলেই বিএনপির বিরুদ্ধে মাঠে নামতে বাধ্য হবে আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে হয়তো আগামীতে আলোচনা সাপেক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতেও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের চলমান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপির চলমান টানা কর্মসূচির বিষয়ে যেমন সতর্ক থাকা যাবে তেমনি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির ‘ওয়ার্ম আপেও’ এ ধরনের কর্মসূচি বেশ কাজে আসবে। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএনপির কর্মসূচির দিকে আগে ভাগেই নজর রেখে চলেছে আওয়ামী লীগ। সে অনুসারেই দলীয় কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও আওয়ামী লীগ একইভাবে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় সূত্র জানিয়েছে,নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কোনভাবেই চাইবে না যে কোন সংঘাত হলে যেন আওয়ামী লীগের দায় আসে। আওয়ামী লীগ চায় যে কোন সংঘাত হলে বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে যাতে এ দায় চাপানো যায়। এ জন্য আওয়ামী লীগ নিজে থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করবে না। যতটা সম্ভব সংযত আচরণ করার কৌশল নিয়েছে দলটি। তবে কোন সংঘাত হলে সে ক্ষেত্রে ছাড়ও দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের ওপর দেশে-বিদেশে চাপ রয়েছে। এমন অবস্থায় এক দিকে যেমন বিএনপিকে মাঠে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তেমনি নির্বাচনে যাবে মানুষের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা যায় সে দিকে নজর রাখতে আওয়ামী লীগ। যা ইতিমধ্যে দল করা শুরু করেছে বলে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপি এখন পর্যন্ত যেসব কর্মসূচি নিয়েছে, এর কোনোটাই সরকারের পতন ঘটিয়ে ফেলার মতো নয়। এখন পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে বিএনপি যদি হরতাল, অববোধের মত কঠোর কর্মসূচি দেয় সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বিএনপির নাশকতার বিরুদ্ধেই দলের শান্তির বার্তাকেই সামনে নিয়ে আসবে। তখন বিএনপির নাশকতা দেখিয়ে অতীতের মত জনমত তৈরী করা হবে দেশে ও বিদেশে। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপি এবার এত সহজে হরতাল- অবরোধে মত কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চাইবে না। কারণ জ্বালাও পোড়াও হলে দলটির ওপরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দায় আসতে পারে।
জানা গেছে, আজ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ শুরু হবে বিকেলে আড়াইটায়। বায়তুল মোকাররম মসজিদ এর দক্ষিণ গেইট সংলগ্ন (গুলিস্তান) ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভায় সভাপতিত্ব করবেন : ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ হুমায়ুন কবির।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, আগামী ৪০ দিন অর্থ্যাৎ অক্টোবরের শেষ নাগাদ বিএনপি আন্দোলন তুঙ্গে নিয়ে যাবে। এ সময় দলটি জ্বালাও-পোড়াও কিংবা বড় ধরেনর নাশকতা করতে পারে। এ ছাড়া সরকার চাপে থাকে এমন শক্ত কর্মসূচিও দিতে পারে বিএনপি। এখন বিএনপির মূল টার্গেট হলো ঢাকা দখল। এ জন্য ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে নিয়ে আলাদাভাবে বেশ কয়েকবার বসে আলোচনা করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক শুক্রবার বলেন, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে বিএনপির ভয়ংকর অবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, জনগনের শান্তি বিনষ্ট করে যে হাতে বোমা মারবে সে হাত গুড়িয়ে দেওয়া হবে, আগুন লাগাতে আসলে তাদের পুড়িয়ে দেয়া হবে। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই, নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি হরতাল অবরোধের মত কঠোর কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে কোন পরিবর্তন আসবে কী না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের বার্তা শান্তির। যারা দেশের গণতান্ত্রিক ধারা, নির্বাচন প্রকৃয়াকে ধ্বংস করতে চাইবে তাদের কোন ছাড়া দেওয়া হবে না। যারা হরতাল অবরোধে সন্ত্রাস করার চেষ্টা করবে তাদের কোন ছাড় নেই।
তিনি বলেন, আমরা শান্তির পক্ষ নিয়ে এগিয়ে যাব। জনসস্পৃক্ত হয়ে এগিয়ে যাব। এ ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের কর্মসূচিতে কোন পরিবর্তন আনা হবে না। কারণ আমরা জনগন সম্পৃক্ত হয়েই আছি। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আছি, চলবো।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাদাভাবে বাির্ধত সভা করেছে আওয়ামী লীগ। ওই সভায় বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় কৌশল নির্ধারণ করেন ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের নেতারা। একই সঙ্গে ভেদাভেদ ও দ্বন্দ্ব ভুলে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় সকলকে এক সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই সভায় কোনভাবেই আগামী ৪০ দিন বিএনপিকে মাঠ ছেড়ে না দিতে মহানগর নেতাদের প্রতি দলের কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তরের সঙ্গে বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, আপনার অনেক পরিশ্রম করছেন, আগামী ৪০টা দিন কষ্ট করুন। আপনারা কমিটি পান, পদ পান বা না পান, সেটা মাথায় নেবেন না। কারণ তাদের (বিএনপি) কথা অনুযায়ী যদি তারা একবার সফল হয়, তাহলে আমাদের অবস্থা কী হবে, সেটা আপনাদের অবশ্যই মনে আছে।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি এখন লাগাতার কর্মসূচি দিয়েছে। এমন অবস্থায় মাঠের রাজনীতিতে বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে না দিতে দল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক নেতা ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের সকল ভেদাভেদ ও দ্বন্দ্বভুলে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আগামীতে যে কর্মসূচি রয়েছে তা সফল করার জন্য সকলকে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে আমাদের কাছে নির্দেশনা যে, টিম ওয়ার্ক করতে হবে। কারণ টিম ওয়ার্ক ছাড়া তো বিএনপির মত দলের আন্দোলন মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, বিএনপিকে যাতে কেউ দূর্বল না ভাবে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়। কারণ প্রতিপক্ষকে দূর্বল ভাবলে উল্টো পল হয়। বিএনপির আন্দোলন নজরে রেখে সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে যা নির্দেশনা আসবে তা সকলে মিলে পালন করার কথা দল থেকে বলা হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভাতেও বিএনপির আন্দোলন নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। ওই সভায় তার আগের দিন বিএনপির দেওয়া আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে পঙ্খানুপঙ্খুভাবে আলোচনা করে আওয়ামী লীগ নেতারা। সে বিষয়ে ঢাকা মহানগরকে প্রস্তুতি নিয়ে সতর্ক অবস্থায় থাকারও নির্দেশনা দেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। ওই সভা শেষে আজ থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। ওই যৌথসভা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমরা কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছি না। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছি। তাছাড়া এ মাসেই তো আমাদের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের কর্মসূচি রয়েছে। সেটাও কি পাল্টাপাল্টি?
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা