মা-বাবা-বোনকে খুঁজে ফিরছে সাত মাসের হোসাইন
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
দাদা-নানার কোল বদল করতে করতে অবশেষে মাঝরাতে ঝালকাঠি সদরের বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরপাশা গ্রামে এসে পৌঁছেছে সাত মাস বয়সী হোসাইন। আরেক অ্যাম্বুলেন্সের ফ্রিজিং কক্ষে ছিল হোসাইনের মা-বাবা ও সাত বছরের বোন লিমার লাশ। যাদের তিনজনই মারা গেছেন মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির সামনের সড়কে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। বেঁচে যাওয়া হোসাইনের চোখ এখন মা মুক্তা আক্তারকে খুঁজে ফিরছে। ক্ষণে ক্ষণে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে সে। তার কপালে ও পিঠে আঘাতের দাগ স্পষ্ট। কিন্তু নিজের কষ্ট আর অনুভূতি বোঝাতে পারছে না কাউকে। দাদা নাসির হাওলাদার বলেন, পোলাডা কার কাছে দুঃখ কইবে হেই মানুষ খুইজ্যা পাইতেছে না। ওর দুঃখ কওয়ার কেউ রইলো না। ও মা-বাপ-বুইন খুইজ্যা পায় না। এরপরই ছোট্ট এই শিশুকে বুকে আগলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। শনিবার মাঝ রাতে অ্যাম্বুলেন্স এসে থামে ঝালকাঠি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আগরপাশা গ্রামে। একই সঙ্গে তিনজনের লাশ দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণ হয়। দূর-দূরান্ত থেকেও শত শত মানুষ জড়ো হয় মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার মিজানের বাড়ি। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ৪ নম্বর ওয়ার্ড বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরপাশা গ্রামে নিহত তিনজনের একসঙ্গে জানাজা শেষে একই কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
নিহত মিজানের বড় ভাই আরিফুর রহমান বলেন, আমার ভাইঝি সাত বছরের লিমাকে মাঝখানে রেখে দুই পাশে ওর মা-বাবাকে দাফন করা হয়েছে। জানাজাও লিমাকে মাঝখানে রেখে মিজান আর ও স্ত্রীকে দুই পাশে রেখে একসঙ্গে নামাজ আদায় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আল্লাহর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। তবে যাদের কারণে এমন পরিণতি হলো, আমার ভাইয়ের পরিবারটি একেবারে নিভে গেল তাদেরও যেন আল্লাহ বিচার করেন। আমরা এই শোক কিভাবে কাটিয়ে উঠব জানি না। মিজানকে বুকে-পিঠে করে ছোটবেলা থেকে বড় করেছি। সেই মিজান ঘুমিয়ে গেল চিরতরে। স্থানীয় বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক। আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। শুধু আমরা নই দেশবাসী কেউ এমন মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক ঘটনাকে মেনে নিতে পারেনি। একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। মিজানদের জানাজা দাফনের খবর শুনে দূর-দূরান্ত থেকে লোক এসেছে। জানাজায় আসা প্রতিটি মানুষ কেঁদেছে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে।
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ উচ্ছেদ শুরু: গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেজে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থল সংলগ্ন অবৈধ বিদ্যুতের তার উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিদ্যুতের লাইন উচ্ছেদ শেষ করে। এসময় মিরপুর মডেল থানার একাধিক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
ঝিলপাড় হাজীপাড়া সড়কের সিরাজিয়া ইসলামীয়া মাদরাসা ও এর পাশে মুক্তা ফার্মেসির মধ্যবর্তী দেয়াল বেয়ে নামানো অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। আর সামাম্য দূরেই শাহজাহান ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসে এ দেয়াল সংলগ্ন অবৈধ বিদ্যুতের লাইন ও উচ্ছেদ করা হয়। দেয়ালে প্লাস্টার ভেঙে ও ড্রেনের নিচ থেকে এসব লাইন কাটা হয়। শাবল, হাতুড়ি দিয়ে প্লাস্টার ভেঙে কাটা হয় বিদ্যুতের অবৈধ লাইন। ড্রেনের নিচ থেকে কাটা হয় অবৈধ বিদ্যুতের লাইন।
বাসিন্দারা জানায়, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে লাইন নিয়ে সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদরাসা ও শাহজাহান ইলেকট্রনিকস ভবন সংগলগ্ন দেওয়াল দিয়ে তা নামানো হয়। খুঁটি থেকে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ দেওয়ার পর তারা নিজেরা বিল্ডিংয়ের দেয়ালে প্লাস্টার করে দেয়। লাইনটি ড্রেনের ভেতর দিয়ে নিয়ে অন্যপাশের ঝিলপাড়ের বস্তিতে সংযোগ দেওয়া হয়। বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করে একাধিক ব্যক্তি। যাদের নিয়ন্ত্রণে ঝিলপাড় বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, বিদ্যুতের লাইন থেকে ৬টা লাইন নামিয়ে বস্তিতে দেয়া হয়েছে। যার তিনটা ঝিলপড়া বস্তির রাস্তা থেকে নামানো হয়েছে। আর বাকি তিনটা বস্তির বিপরীত পাশের সড়ক থেকে নামানো হয়েছে। বস্তিতে প্রায় ১ হাজার লোকের বসবাস। প্রত্যেক ঘর থেকে মাসে ২০০-৮০০ টাকা করে উঠানো হতো।
বাসিন্দারা বলছেন, সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে বস্তিবাসীর কাছ থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হয়। অবৈধ এসব বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে সবাই অবগত, কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলে না। দুর্ঘটনার পর পানিতে বিদ্যুৎ থাকার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। তখন দ্রুত অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের লাইনটি খুঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় সংযোগ প্রদানকারীদের কেউ। এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর নেলসন বলেন, আমরা এখানে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের নিরাপত্তা দিতে এসেছি। এখানে যাতে কোনো হট্টগোল না হয় সেজন্য এসেছি। তদন্তের পর জানা যাবে কারা এ অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে অতিবৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যায়। মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির সামনের সড়কে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরনপাশা গ্রামে। তারা হলেন- মিজান, তার স্ত্রী মুক্ত ও সাত বছরের মেয়ে লিমা। মিজান-মুক্তা দম্পতির ৭ মাসের ছেলে পানিতে ডুবে গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। তাকে দাদা নাসির হাওলাদারের তত্ত্বাবধায়নে রাখা হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
টঙ্গীবাড়ীতে হল্যান্ডের ড্যানিসপো কোম্পানির বীজ আলুর গাছ পরিদর্শনে ইউএনও
রাউজানে বড়ই সহ হরেক রকমের বাগান করে সফল মালিক শায়েস্তা খাঁন
৪ দিনের রিমান্ডে চট্টগ্রামের সাবেক এমপি নদভী
তল্লাশি চলছে বোমা হামলার হুমকি পাওয়া বিমানে
টেক্সটাইল ট্যালেন্ট হান্ট সিজন-৯ ন্যাশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
গাজায় ৩ দিনে ঢুকেছে ২ হাজার ৪ শতাধিক ত্রাণবাহী ট্রাক : জাতিসংঘ
পুলিশের জন্য গোলাপি রঙের পোশাক চান সমন্বয়ক
ঢাবি এলাকায় গাছ থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
এবার হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ডে পলক
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুসের সঙ্গে পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ
আন্দোলনকারী মালয়েশিয়াগামীদের সরিয়ে দিলো পুলিশ
গান গাইতে গিয়ে হাসপাতালে মোনালী ঠাকুর
সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা থেকে অস্ত্র ককটেলসহ ২ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে আটক করেছে মোংলা কোস্ট গার্ড
ট্রাম্পের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ‘স্টারগেট’ প্রকল্প, এআই প্রযুক্তিতে বিপ্লব
এবার যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড প্রধানকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প
টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ৪লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার
মার্কিন রাজনীতিতে উত্তরসূরির জন্য রেখে যাওয়া চিঠিতে ট্রাম্পকে যে বার্তা দিলেন বাইডেন
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের বৈঠক
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব ছাড়লেন সারজিস আলম
নাটোরে অবৈধ কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল মৎস্য ঔষধ উদ্ধার