ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১
জয়ের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে করবে, তাতে কিছু আসে যায় না : শেখ হাসিনা ‘আমার ছেলে (সজিব ওয়াজেদ জয়) এখানে (যুক্তরাষ্ট্র) আছে। সে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, বিয়ে করেছে, তার মেয়ে আছে, স্ত্রী আছে, সম্পত্তি আছে, বাড়ি-ঘর আছে। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যদি বাতিল করে, করবে। তাতে কিছু আসে যায় না। ’

পাল্টা নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

‘বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি কার্যকর শুরু’ খবর এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি ছাপিয়ে এখন ‘টপ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ হয়ে গেছে। দেশি-বিদেশ গণমাধ্যমে যেমন এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আলোচনা-বিতর্ক, লাইক, শেয়ার চলছে। আবার আমলা, পুলিশ, বিচারপতি, বিচারক, রাজনীতিক, নির্বাচন কমিশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়ে গেছে। ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সাক্ষাৎকার ছাপানোর পর গণমাধ্যম তথা সরকারের তোষামোদকারী সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছে। গতকাল অর্ধডজন মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির নেতারা ছাড়াও অনেক নেতাই মার্কিন ভিসানীতি কার্যকর নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে দেশের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কিংকর্তব্যবিমূঢ় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, দলবাজ আমলা, আইনশঙ্খলা বাহিনীর দলবাজ কর্মকর্তা, বিচারক এবং মন্ত্রী-এমপিরা মুখিয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি বক্তব্য দেন তা শোনার জন্য। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে ভয় পাওয়া কিংবা ঘাবড়ানোর কিছু নেই, এতে বিরোধী দলের কথাও বলা আছে। যদি তারা (যুক্তরাষ্ট্র) শুধু আওয়ামী লীগকে টার্গেট করে থাকে তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তবে মনে রাখতে হবে আমি কিন্তু কারো শক্তিতে ক্ষমতায় আসিনি। আমি ক্ষমতায় এসেছি জনগণের শক্তিতে। আমার ছেলে (সজিব ওয়াজেদ জয়) এখানে (যুক্তরাষ্ট্র) আছে। সে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, বিয়ে করেছে, তার মেয়ে আছে, স্ত্রী আছে, সম্পত্তি আছে, বাড়িঘর আছে। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যদি বাতিল করে, করবে। তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের বাংলাদেশ তো আছেই।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাদের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে। ভিসানীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে টার্গেট করলে কিছু বলার নেই। কারও শক্তিতে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় আসিনি। জনগণের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় এসেছি এবং আছি।

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা কি ২০০১ সালের অবৈধ নির্বাচন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, হ্যাঁ-না ভোটের কথা ভুলে গেছে? নির্বাচন নিয়ে এই সচেতনতা তখন তাদের কোথায় ছিল? সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা দেশের বাইরে থেকে যেন না হয়। এটি হলে বাংলাদেশের জনগণই তাদের পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেবে। ভোট ও ভাতের অধিকার আওয়ামী লীগই করেছে। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এটি আমারই সেøাগান। এর মধ্যেই কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছেন কিনাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, তার (পুতুল) নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে সামনে কাকে দেখা যাবেÑ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কে দলের নেতৃত্বে আসবে সেটা বাংলাদেশের জনগণ আর আমার দল (আওয়ামী লীগ) ঠিক করবে। আমার ছেলে ও মেয়েকে শিক্ষা দিয়েছি। তাদের শিক্ষাটাই একমাত্র সম্পদ। পুতুল একজন অটিজম বিশেষজ্ঞ। বিশ্বজুড়েই সে অটিস্টিক শিশুদের অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি, সেটা জয়ের (সজিব ওয়াজেদ জয়) কাছ থেকে শেখা। জয়ই আমাকে এ ব্যাপারে সবরকম পরামর্শ দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়া ছাড়াও একটি হোটেলে নিউইয়র্ক মেট্রাপলিটন আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন। জাতিসংঘ অধিবেশনে নির্ধারিত ভাষণ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি এবং প্রভাবশালী নেতারা ‘নীরবতার খোলস’ থেকে বেরিয়ে আসেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির দায় সরকারের নয়, যারা নির্বাচনে বাধা দিয়েছিল তাদের জন্য। তবে ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই সেলফিতেই রাজনীতির ফয়সালা হয়ে গেছে। দুই সেলফির পরেই বিএনপির ঘুম হারাম। অবাধ শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচন যারা চায়, তাদের ভিসানীতি নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। যারা নির্বাচন চায় না, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে, তারা এখন হতাশা থেকে সবকিছুতেই ইস্যু কিংবা আনন্দ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ভিসানীতির বাস্তবায়নের বাস্তবতা দেখা যাবে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে যারা সহিংসতা করবে তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন। তবে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ফলে দুই দেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগের কোনো প্রভাব ফেলবে না। যারা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, এটা ভাল। কারণ সরকার বলছে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে আর বিরোধী দল বলছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হতে দেবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোনো দল বা ব্যক্তিকে পক্ষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আসন্ন নির্বাচনের অন্তরায় যারা হবেনÑ নির্বাচন যারা বাধাগ্রস্ত করবেন এবং নির্বাচন প- করার চেষ্টা করবেন তাদের জন্য এই ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে। আমরা মনে করি এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। ভিসানীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যাপার। তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। ভিসানীতি কার্যকরের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কতজনের ওপর ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে সংখ্যাটি বড় নয়, ছোট। সরকারের কেউ (কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবার) এই বিধি-নিষেধের আওতায় এসে কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হবে। তবে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাইরে বিএনপিসহ ডান-বাম, মধ্যপন্থি প্রায় সব দলের নেতারাই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে কথা বলেছেন। তাদের বেশির ভাগই ভিসানীতির জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপের দায় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। সরকারি কর্মকর্তা, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও বিচারকম-লী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সরকারি দলের লোকজনের বিরুদ্ধে ভিসানীতি কার্যকর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসানীতি বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দায়ী উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা গত ১৫ বছর ধরে মানুষের অধিকার হরণ করেছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ভিসানীতি সরকারের জন্য অশনি সংকেত। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়া সরকারের নীল নকশার প্রকল্প ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রের ভিসানীতি কার্যকর শুরুর পর বাংলাদেশের ঢাকা থেকে প্রকাশিত দ্যা স্টারে এক সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বলেছেন, বাংলাদেশিরা যা চায়, যুক্তরাষ্ট্রও তাই চায়Ñ শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। ২৪ মে এই ভিসানীতি ঘোষণা করার পর থেকে সার্বিক ঘটনা খুব কাছ থেকে আমরা দেখেছি। সাক্ষ্য-প্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সংগঠনের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা থেকে বিরত রাখতে সহিংসতা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা মতামত প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমের ওপর পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণের মতো কারণে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি শুধু নির্বাচনের দিনের জন্য নয়, বরং সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য প্রযোজ্য। আমরা নির্বাচনের সঠিক তারিখ জানি না, তবে এটা স্পষ্ট যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই বলেছে, এই নীতির আওতায় যাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যেকোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্যÑ এমনটাও স্মরণ করিয়ে দেন লু। যাদের নামে ভিসানীতি কার্যকর হবে তাদের পরিবার-আত্মীয়-স্বাজন সবার বেলায় এটা প্রযোজ্য।

নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী : নিউইয়র্ক মেট্রোপলিটন আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে ইনশা আল্লাহ।এ সময় তিনি প্রশ্ন রাখেন, বিএনপি কি আসলেই নির্বাচন চায়? তাদের নেতা কে?’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘পলাতক আসামি, অর্থ চোর, অস্ত্র চোরাচালানকারী, খুনি ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী (তাদের নেতা) এই যদি একটি দলের নেতা হয়Ñ তবে মানুষ কেন সেই দলকে এবং তাকে ভোট দেবে? বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট পায়নি এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচন ঠেকানোর নামে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, কত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এখনো সেই পোড়া মানুষের মুখ দেখলেই বোঝা যাবে যে কী জঘন্য কাজ হয়েছে। যারা এটি করেছে, তাদের মতো আর কেউ ঘৃণ্য হতে পারে না।

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ইনশা আল্লাহ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। জনগণ সঠিকভাবে ভোট দেবে। বাংলাদেশের জনগণের অন্তত অনুধাবন করা উচিত যেÑ তারা নৌকায় (আ.লীগের নির্বাচনী প্রতীক) ভোট দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে এবং নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়ায় আজ জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। নৌকায় (দেশের জনগণ) ভোট দেওয়ার কারণে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যারা বিদেশে থাকেন তাদের বুঝতে হবে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে বিদেশে কারও সঙ্গে কথা বলা যেত না, এখন মানুষ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে।

প্রধানমন্ত্রী অপঃপ্রচারে কর্ণপাত না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেন সবসময় উজ্জ্বল হয়Ñ তা আপনাদের সকলকে সর্বদা মনে রাখতে হবে। আজ যখন বিশ্বনেতারা (বাংলাদেশের সাফল্য) স্বীকৃতি দিচ্ছেন, তখন আমাদের কিছু পাপাচারী যা বলছে তাতে মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই। বিভিন্ন অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্তরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে ও তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে। নিন্দুকদের মুখোশ উন্মোচন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মিথ্যা অপঃপ্রচার করলে তাদের মুখোশ উন্মোচিত করতে হবে। মানুষের সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। এই চোরচক্র থেকে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

জাতিসংঘে ভাষণ : এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও বৈধতা নিয়ে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর ফলে একটা শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অর্জিত সাফল্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, করোনা, জলবায়ু সংকটের প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য, অর্থায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন-লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। সকলের জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অভিন্ন সংকট মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ জন্য অবশ্যই বিভাজন, সংকীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতা বেছে নিতে হবে। শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যে আমাদের অবশ্যই সুবিচার, ন্যায় ও ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করতে হবে, যার ভিত্তি হবে জাতিসংঘ সনদ এবং ২০৩০ এজেন্ডা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো জরুরিভাবে প্রয়োজন যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিশেষ ছাড়ে, কম খরচে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করবে। তাছাড়া জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাবনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই প্রস্তাবনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি।

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত মাসে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। আসুন আমরা এই নিঃস্ব মানুষের জন্য তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি। তিনি আরো বলেন, বিশ্ব নেতাদের কাছে আমার আবেদন, যুদ্ধ, স্যাংশন ও সংঘাতের পথ পরিহার করুন এবং আমাদের জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করুন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
আরও

আরও পড়ুন

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী