কাকরাইলে এস এ পরিবহনের গোডাউনে ভয়াবহ আগুন
১০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
রাজধানীর কাকরাইলে এস এ পরিবহনের পার্সেল অ্যান্ড কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেল ডেলেভারি শাখার গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত ঘটে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গোডাউনে রাখা গ্রাহকদের মালামালে। আগুনে গ্রাহকদের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পটকা, আতশবাজি, আগরবাতি, রাসায়নিক পন্য, সিলিন্ডারসহ বিস্ফোরক জাতীয় পণ্য একই সঙ্গে রাখায় সহজে আগুন বেগবান হয়ে উঠে। মূলত পূজা উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ আতশবাজি ও পটকার পার্সেল গুদামে রাখা ছিল। এতে ক্ষণে ক্ষণে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ফলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কেমিক্যাল, রাসায়নিক পণ্য বিস্ফোরিত হয়ে বাতাসের সঙ্গে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরপরই মালিবাগ-কাকরাইলের সড়ক পুলিশের পক্ষ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ওই এলাকাসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হবে। বিস্ফোরক ও কেমিক্যালের উপস্থিতির কারণে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এসএ গ্রুপের এমডি বলছেন, এটা ছোটখাটো ব্যাপার, দুর্ঘটনা। ষড়যন্ত্র করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযানের কাজে অংশ নেয়া একাধিক ফায়ার সার্ভিস সদস্য জানান, এখানে বিস্ফোরণ ও আগুন বেগবান করার মত অনেক ধরনের পণ্য ছিল। এর মধ্যে রয়েছে পটকা, আগরবাতি কেমিক্যাল, কসমেটিক্স পণ্য, রাসায়নিক পণ্যও। যেগুলো এখানে ঢোকারই কোন সুযোগ ছিল না। আগেই আলাদা ব্যবস্থাপনায় রাখার কথা ছিল। অথচ সব ধরনের সাধারণ পণ্যের সঙ্গেই এসব ঝুঁঁকিপূর্ণ পণ্য রাখা হয়েছিল।
ফায়ার সার্ভিস ও কুরিয়ার সার্ভিস কার্যালয়ের স্টাফরা জানান, পরিবহন থেকে মালামাল নামানোর সময় গতকাল সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসকে ১০টা ১০ মিনিটের দিকে খবর দেয়া হয়। একে একে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১০টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুরোপুরি নির্বাপনে আসতে সময় লাগে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। এর মধ্যে আগুনে কার্যালয়ে থাকা অসংখ্য মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
গতকালবেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ক্ষণে ক্ষণে ঘটছে বিস্ফোরণ। পটকা জাতীয় পণ্যের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় উদ্ধার অভিযান প্রায় ঘণ্টাখানেক বন্ধ রাখে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পানির সঙ্গে ফোমও স্প্রে করছেন। ফায়ার সার্ভিসের অনেক কর্মীকে আবার বালি ভর্তি বস্তা টেনে নিয়ে সেখানে ফেলতে দেখা গেছে। এরই মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে সেখানে বিস্ফোরণ ও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। পরে দুপুর সোয়া ১ টার দিকে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ দল।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে আধা পোড়া শাড়ি, কাপড়, নকশি কাঁথা, হোমিওপ্যাথি ওষুধের কাঁচের কৌটা, সিগারেট, বিড়ি, হারবাল ওষুধ, সুপারি পড়ে আছে। যেসব পণ্য অক্ষত রয়েছে সেগুলো পরিবহনের কর্মীরা দ্রুত সরিয়ে নিয়েছেন। তিন তলা ভবনের নিচতলায় পণ্য রাখার কক্ষগুলোতে মূলত আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পরও নিচতলায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সেগুলো আতশবাজি ও পটকা ছিল বলে এস এ পরিবহনের কর্মকর্তা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন। আগুন নিভে যাওয়ার পরও ঘটনাস্থলে কেমিক্যালের ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
এস এ পরিবহনের যানবাহন শাখার সহকারী ফোরম্যান খোরশেদ আলম পলাশ ইনকিলাবকে বলেন, এখান থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে পার্সেল ডেলিভারি হয়। সকালে কেবল এখানে গাড়ি থেকে পার্সেলগুলো নামানো হয়েছে। এর পরই আগুন লাগে। একটি গাড়িও পুড়ে গেছে। কি কারণে আগুন লেগেছে সেটা এখনো আমরা জানি না। ডেলিভারির জন্য আনা গার্মেন্টসের পণ্যসহ আরো নানা ধরনের পণ্য পুড়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, এখানে দুর্বল অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। গোডাউনে আতশবাজি বা পটকা ফোটার মতো শব্দ পাওয়া গেছে। গোডাউনে সাধারণ মালামালের সঙ্গেই এসব মালামাল রাখা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে এখানে প্রাথমিকভাবে যেটা বুঝতে পারতেছি এখানে ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা দুর্বল ছিল। সাধারণত যেটা নিয়ম কঠোরভাবে পরিপালন করতে হয়, সেটা হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে আসা সাধারণ পণ্যগুলো আলাদা করে রাখা এবং বিস্ফোরক জাতীয় বা অন্য রাসায়নিক দ্রব্য জাতীয় পণ্য সঠিকভাবে আলাদা করে রক্ষণাবেক্ষণ করা। আমরা এখানে সেটা দেখছি না। সাধারণ পণ্যের সঙ্গে বিস্ফোরক ও রাসায়নিক দ্রব্যজাতীয় পণ্য একই সঙ্গে রাখা হয়েছে। আবার আগুন নিয়ন্ত্রণ কিংবা নির্বাপনের জন্য তাদের যথাযথ ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বলেন, অনেক কারণে আগুন লাগতে পারে। ধূমপান কিংবা কি কারণে আগুন লেগেছে এটা আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে, তদন্ত করে পরবর্তীতে বলতে পারবো। কেউ ষড়যন্ত্র করে আগুন লাগিয়ে দিল কি না এটা আমাদের বিভাগীয় তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফরাজীকান্দি নেদায়ে ইসলাম ওয়েসীয়ান ছাত্রদের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সা.) উপলক্ষে আনন্দ র্যালি
ব্রুনাইয়ে ভবন থেকে পড়ে গফরগাঁওয়ের প্রবাসী নিহত
গুলিবিদ্ধ ইলহামের জন্য তারেক রহমানের অনন্য উদ্যোগ
মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন
মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে
ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী
ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১
যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক আওয়ামী লীগ তা কখনও চায়নি : শিমুল বিশ্বাস
এনপি জনগণকে নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম ডাঃ জাহিদ হোসেন,
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামীলীগের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তার
শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমানসহ ৩৬ জনের নামে নারায়ণগঞ্জে মামলা।
আড়াইহাজারে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার