চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি
১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
দেশের পর্যটন শহর কক্সবাজারের পথে ট্রেন চলাচলে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১২ নভেম্বর ১৮ হাজার কোটি টাকার এ মেগা প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন। তার আগে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চলছে নানা তোড়জোড়। গতকাল রোববার পটিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রায়াল রান তথা পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর প্রাথমিক সংস্কার কাজ শেষ হলেই নভেম্বরের শুরুতে এ ট্রায়াল রান হবে। আজ সোমবার শত বছরের পুরাতন এ সেতুর সংস্কার কাজ এবং কক্সবাজারমুখী রেললাইন প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের পথে রেলট্র্যাক (ট্রেন চলাচলের পথ) নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। তবে নয়টি স্টেশনের মধ্যে কয়েকটির কাজ এখনও শেষ করা যায়নি। বাকি আছে বেশকিছু লেভেল ক্রসিংয়ের কাজও। স্টেশনগুলোর কাছে একাধিক লুপলাইন প্রকল্পে থাকলেও আপাতত একটি করে লুপলাইন প্রস্তুত করা হচ্ছে। রেললাইনে সিগন্যালও এখনো বসানো হয়নি। আগামী ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে এসব কাজ দ্রুত শেষ করতে চায় রেলওয়ে। কক্সবাজার সদরে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়ায় ঝিনুক আকৃতির আইকনিক স্টেশনের কাজও এগিয়ে চলছে। স্টেশনের ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত এবং যাত্রীদের জন্য ওয়েটিং রুম নির্মাণসহ আনুষাঙ্গিক কাজ এখন প্রায় শেষের পথে। বিগত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে টানা বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় সাতকানিয়া অংশে রেললাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতের কাজও শেষ হয়েছে।
রেল চলাচল করবে কালুরঘাট সেতু দিয়ে। আর এজন্য অনেক আগেই সেতুটি সংস্কার করে রেল চলাচলের উপযোগী করার প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজ পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট তিন মাসের জন্য সেতুটিতে যান চলাচল বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ শুরু হয়। কাজ এখনও শেষ হয়নি। আজ কক্সবাজারের উদ্দেশে চট্টগ্রাম থেকে ট্রায়াল রান হওয়ার কথা থাকলেও সেতুর সংস্কার কাজ না হওয়ায় তা পিছিয়ে দেয়া হয়। একপর্যায়ে পটিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রায়াল রানের প্রস্তুতিও নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হলে ট্রায়াল রান হবে। আমরা ভালোমানের কোচ ও ইঞ্জিন দিয়ে ট্রায়াল রান করব। সেতুটি সংস্কার কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ২৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রাথমিক সংস্কার কাজ শেষ করতে পারবে বলে জানিয়েছে। সংস্কার কাজের পাশাপাশি এ মহা প্রকল্পের অন্য কাজও এর মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চট্টগ্রামের কালুরঘাটের পুরোনো যে সেতুটি রয়েছে তা দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর আগেই সংস্কার করে মজবুত করার কাজ চলছে। অক্টোবরের মধ্যে সেতুটির সংস্কার কাজও সম্পন্ন হবে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন হওয়ার পরের দিন থেকেই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে না। আমরা হয়তো কিছুদিন সময় নেব। এরই মধ্যে হয়তো কালুরঘাটের পুরোনো সেতুতে ট্রেন সীমাবদ্ধ গতিতে চলবে। দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন যে রেললাইন এটাতে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন লোকোমোটিভ ট্রেন যাতে চলাচল করতে পারে সে উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত কালুরঘাটে নতুন সেতু না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত পুরোনো সেতু অংশে শুধু সীমাবদ্ধ গতিতে ট্রেন চলবে। কিন্তু সেতুর পর থেকে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে।
এই প্রকল্পে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ হলেও চট্টগ্রাম নগরী থেকে দোহাজারী পর্যন্ত প্রায় ৪৭ কিলোমিটার মিটার গেজ রেললাইন। কক্সবাজারের পথে এই রুটে ট্রেন চালাতে চট্টগ্রাম-দোহাজারী অংশে নতুন করে পাথর বিছানোসহ সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার এ চারটি স্টেশনের কাজও শেষ। কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার এই মহাপ্রকল্পে মোট ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে এবং বাকি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের জন্য দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার অংশে কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু, ১৪৯টি বক্স কালভার্ট এবং ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট। বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন চালুর ঘোষণা দেন। তার সেই নির্বাচনী অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে প্রকল্পটির প্রথম অনুমোদন দেয়া জয়। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল মাত্র এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ করার কথা ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে জমি অধিগ্রহণের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য এডিবিকে অর্থায়নের প্রস্তাব দেয় সরকার। এডিবি বিশদ সমীক্ষা পরিচালনা করে ট্রান্স এশিয়ান রেল লাইনের আওতায় প্রকল্পটিতে অর্থায়নে সম্মতি দেয়। এরপর ২০১৭ সালে প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পটির ব্যয় ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। পরে কাজের অগ্রগতি প্রত্যাশিত না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী বছর জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অবশেষে কাজের সমাপ্তি হলো সিকৃবির নান্দনিক অডিটোরিয়ামের
শ্বশুরকে সৌদি প্রবাসীর কাফনের কাপড় উপহার, রাগ করে স্বামীকে স্ত্রীর তালাক
আটঘরিয়ায় জালসায় তুচ্ছ ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বেশি টাকা গুণলেই গোপনে মিলছে সার
ঘোড়াঘাটে পাওয়ার টিলার ট্রলি চালাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
সিন্ডিকেটের প্রভাবে পেঁয়াজ চাষীদের মাথায় হাত
গাড়ি নিয়ে খালেদের বাহাস, স্পষ্ট করে যা বললেন হাসনাত
চন্দ্রঘোনায় প্রতিষ্ঠান ওমরা হজ্জ্ব ঘোষণা
অপহরণের ১২ ঘণ্টা পরেও উদ্ধার হয়নি মার্চেন্ট ব্যবসায়ী
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে: প্রকৌশলী জাকির সরকার
কাতারের কাটারা কালচার ভিলেজে বাংলাদেশি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আরব সফরে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিনিয়োগের আহ্বান জানাবেন
ভারতে আটক জেলেরা দেশে ফেরত আসতে পারেন সোমবার
কুষ্টিয়ায় বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার
পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের সংঘষে যুবক নিহত
ছাত্রদের মনে রাখতে হবে শুধু স্লোগান দিয়ে দেশ শাসন করা যায় না- ডঃ আব্দুল মঈন খান
শেরপুরে আ.লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল চৌধুরীসহ গ্রেফতার-২
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দুটি হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বেগ
নোয়াখালীতে মাটির ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল কিশোর চালকের
আমরা চাঁদাবাজ-দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই : ডা.শফিকুর রহমান