ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা

প্রবাসে বৈধ আয়ের টাকাও দেশে আসছে হুন্ডিতে

Daily Inqilab হাসান-উজ-জামান, সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে

২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

সিঙ্গাপুর প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠাতে গেলে বাংলাদেশের নির্ধারিত বৈধ ব্যাংক ও মানি ট্রান্সফার কোম্পানির এজেন্ট আয়ের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে। এছাড়া নির্ধারিত অঙ্কের বেশি টাকা পাঠানোও সম্ভব হয় না। বৈধভাবে টাকা পাঠাতে অতিরিক্ত ঝামেলার পাশাপাশি হয়রানির শিকার হতে হয়। যে কারণে দেশে টাকা পাঠাতে অধিকাংশ প্রবাসী হুন্ডি অথবা মানি লন্ডারিং-এর আশ্রয় নেন। এমনই অভিযোগ করেছেন, সেখানে বসবাসরত রেমিট্যান্সযোদ্ধারা। তারা বৈধ উপায়ে দেশে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া আরো সহজ এবং টাকার উৎস জানতে চেয়ে হয়রানি না করার দাবি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রেমিট্যান্সযোদ্ধা জানান, গত ২০০৬ সাল থেকে তিনি সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন। তার নিয়োগপত্রে মাসিক বেতন হিসেবে ১ হাজার ২০০ সিঙ্গাপুরি ডলার উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন, তার নিয়োগকর্তা একজন ভালো মানুষ। দীর্ঘসময় ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। যে কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার একটি ইন্টারনাল চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের বাইরেও তিনি কাজ করতে পারছেন। এজন্য তার নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানের শুধু প্যাড কিংবা নাম-ঠিকানা ব্যবহার করছেন। বিনিময়ে তার নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানকে কিছুই দিতে হয় না। ঠিকাদারি কাজের পুরো আর্থিক লাভটা তিনি গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা শুধু কাজের সুনামটুকু নেয়। ওই রেমিট্যান্সযোদ্ধা বলেন, তার নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান বাইরে ঠিকাদারি কাজ করতে দেয়ার তিনি প্রতিমাসে ভালো একটি টাকা উপার্জন করেন। যা তার নিয়োগপত্রে উল্লেখিত টাকার অন্তত ১০ গুণ বেশি। তিনি বলেন, করোনাকালীন সিঙ্গাপুরের সবাই লকডাউনে ঘরে কোয়ারেন্টামে ছিলাম। লকডাউন শেষে দিনরাত এতটাই কাজের চাপ ছিল যে, লকডাউন শেষে প্রথম মাসে কম করে হলেও ৫০ হাজার ডলার বাড়তি আয় করেছি। আমরা এখানে বাড়তি পরিশ্রম করি দেশে কিছু বেশি টাকা পাঠানোর জন্য। অথচ এই বাড়তি টাকা দেশে পাঠাতে গেলে নানা ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
তার মতো অনেকে বলেছেন, তাদের অনেকে অতিরিক্ত সময় কাজ করেন। এ আয়ের বৈধ প্রমাণ তাদের নেই। এ কারণে চাইলেও ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতে পারেন না। তাই অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং বেছে নেন। তারা জানান, বিদেশে থাকা এজেন্টদের টাকা দিলে তাদের দেশে থাকা সহযোগীরা মোবাইল অ্যাকাউন্ট থেকে প্রবাসীর স্বজনদের মোবাইল ব্যাংকে টাকা পাঠিয়ে দেন।
সরেজমনিনে দেখা গেছে, দেশের অভ্যন্তরে যেভাবে মোবাইলে টাকা লেনদেন করা যায়, সিঙ্গাপুর থেকেও তা করা যায় খুব সহজে। সেখানের মোস্তফা প্লাজাসহ বাঙালিপাড়ার দোকানে দোকানে রয়েছে বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। প্রবাসীরা সেখানে টাকা দেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে দেশে স্বজনের মোবাইলে তা পৌঁছে যায়। এটাকে মোবাইল ব্যাংকিং বলা হলেও আদতে তা হুন্ডি।
মুন্সীগঞ্জের এক যুবক সেখানে কাজ করেন দীর্ঘ ১১ বছর। তিনি বলেন, বৈধভাবে দেশে অতিরিক্ত টাকা পাঠাতে গেলে সেখানে বসে খুঁজতে হয় কার বেতন কম। তার অ্যাকাউন্ট দিয়ে দেশে টাকা পাঠিয়ে আবার স্বজনদের মাধ্যমে সেই টাকা নিতে হয়। আবার ব্যাংকের পাশাপাশি যার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা পাঠানো তাকেও খুশি করতে হয়। নিরাপত্তার বিষয়টি তাতেও থেকে যায়। তিনি বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠানোর জন্য খরচের চেয়ে ঝামেলা বেশি। এসব ঝামেলা এড়াতে নিজেদের পরিচিত লোকজনের কাছে টাকা জমা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে; আর সেটা অবৈধ পথে বা হুন্ডির মাধ্যমে। বৈধ পথে টাকা পাঠালে ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলতে হয়। কিন্তু মোবাইলে পাঠানো টাকা স্বজনরা বাড়িতে বসেই পান।
তিনি বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে টাকা পাঠাতে খরচ না নেয়ার পাশাপাশি হয়রানি বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল