ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : জনসভা শেষে দুপুরেই ফিরবেন ঢাকায় খরস্রোতা কর্ণফুলীর তলদেশে সুড়ঙ্গপথ, আরো একটি গৌরবদীপ্ত ইতিহাস সৃষ্টি

টানেলে যাত্রা শুরু

Daily Inqilab রফিকুল ইসলাম সেলিম

২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম

স্বপ্ন এখন সত্যি। নদীর তলদেশে সুরঙ্গপথে চলবে গাড়ি। টানেল যুগে প্রবেশ করছে দেশ। আজ শনিবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পর খরস্রোতা কর্ণফুলীর তলদেশে সুরঙ্গপথ-আরো একটি গৌরবদীপ্ত ইতিহাস সৃষ্টি করল বাংলাদেশ। এটি দেশের প্রথম সড়ক টানেল। দক্ষিণ এশিয়ায় টানেল নির্মাণের ইতিহাসও আর কোনো দেশের নেই। টানেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আরো একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় পতেঙ্গা প্রান্তে উদ্বোধন শেষে টানেল হয়ে আনোয়ারা প্রান্তে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সরকার পতনের একদফ দাবিতে রাজধানী ঢাকায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে উত্তাল রাজপথ। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আজ বিএনপিসহ মাঠে নামছে প্রায় ৪০টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। সরকারি দল আওয়ামী লীগও উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামছে। ঢাকার রাজপথে সরকার ও বিরোধী দলের এমন মুখোমুখি অবস্থানে সৃষ্ট উত্তাপ উত্তেজনা জড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। আর তাই দেশের প্রথম টানেল তথা উন্নয়ন উৎসব ছাপিয়ে আগামী দিনের রাজনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলেন, তা নিয়ে ব্যাপক কৌতুহল দেখা দিয়েছে। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি আনোয়ারায় জনসভার ওপর দৃষ্টি থাকছে রাজনৈতিক সচেতন মহলের।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর বার্তার অপেক্ষায় রয়েছেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আগেই প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অতি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম আসবেন তিনি। জনসভায় ভাষণের পরেই দুপুরে তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। এজন্য বিকেলের বদলে জনসভা সকালে আয়োজন করা হয়েছে।
জনসভাকে সফল করতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। শোডাউনের জন্য প্রস্তুত দলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় এবং জেলার নেতারা। কর্ণফুলী নদীর দুই তীর পতেঙ্গা আর আনোয়ারায় পতপত করে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। বর্ণিল তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ড অন্য রকমের আবহ সৃষ্টি করেছে। দুই তীরে এখন সাজ সাজ রব। টানেল নির্মাণের চার বছরের কর্মকা- শেষে এবার দুই প্রান্তে দেখা উদ্বোধনের বিপুল আয়োজন। সাগরতীরের সিডিএ আউটার রিং রোড ধরে পতেঙ্গায় টানেলের প্রবেশপথ পর্যন্ত সেজেছে নতুন সাজে। পতেঙ্গা প্রান্তে টানেল ও আউটার রিং রোডের সংযোগস্থল গোলচত্বর লাল-সবুজের পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কাঠের স্থাপনায় লেখা হয়েছে ‘জয় বাংলা’। গোলচত্বরসহ পুরো রিং রোডের বিভাজক, গাছপালা রঙিন করে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গোলচত্বর পার হওয়ার পর টানেলে ঢোকার দু’টি সড়ক মিলবে। একটি ‘অতিরিক্ত উচ্চতার যানবাহন ফিরে যাওয়ার পথ’। আরেকটি সাধারণ যানবাহন যাওয়ার পথ। প্রবেশমুখ থেকে সংরক্ষিত এলাকা শুরু, যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে নৌবাহিনী। নৌবাহিনীর নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে যানবাহন প্রবেশ করবে ওজন স্কেল। ইতোমধ্যে সেখানে স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এরপরই টানেলের মূল প্রবেশপথ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন উপলক্ষে টানেলের প্রবেশমুখ থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার এলাকায় সমুদ্র সৈকতের সব দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লাইটার জাহাজ ও মাদার ভ্যাসেলকে গতকাল সকালের মধ্যে ওই এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সমুদ্র সৈকতে দর্শনার্থী সমাগম শিথিল করা হয়েছে। পতেঙ্গা-আনোয়ারা উভয়দিকে টানেলের প্রবেশমুখে উদ্বোধন মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তেও টোল প্লাজা স্থাপন করা হয়েছে। দু’টি আলাদা সুড়ঙ্গপথ, প্রতিটি পথ দু’লেইনের। সুড়ঙ্গের ভেতরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা আছে।
কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে চীনের সাংহাই সিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে টানেল প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন, এর মধ্য দিয়েই মূল কর্মকা- শুরু হয়।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
নির্মাণ কাজ করেছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র নদীর তলদেশের টানেলটি নির্মাণ করতে চীন ও বাংলাদেশ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। তাদের ঘামে-শ্রমেই অসাধ্য সাধন করেছে বাংলাদেশ। #


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা