গাজায় প্রতিদিন ৪২০ শিশু হতাহত
০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের সংঘাত চলছে। সংঘাতের শুরু থেকেই অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ যে, ইসরাইলি হামলায় গাজায় প্রতিদিন হতাহত হচ্ছে ৪২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশু। এমন তথ্যই সামনে এনেছে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।
ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন ৪২০ জনেরও বেশি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে বলে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল জানিয়েছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি বলেছেন, গাজা ছাড়াও পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে অন্তত ৩৭ শিশু নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সংঘাতে ৩০ জনেরও বেশি ইসরাইলি শিশু নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আর গাজা উপত্যকায় অন্তত ২০ শিশু বন্দি রয়েছে, তাদের ভাগ্য এখনও অজানা। রাসেল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এবং সংঘাত-শত্রুতা যদি শেষ না হয়, তাহলে আমি এই অঞ্চলের শিশুদের ভাগ্য নিয়ে শঙ্কিত।’ পরে তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে ‘অবিলম্বে’ একটি রেজুলেশন পাস করার আহ্বান জানান।
সেখানে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর পাশাপাশি গাজায় নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয়ার দাবি এবং অবিলম্বে বন্দি সব শিশুর নিরাপদ মুক্তির বিষয়টি উল্লেখ থাকার কথা জানান ক্যাথরিন রাসেল। মধ্য গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় আরও অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, সোমবার রাতে আল-নুসিরাত শরণার্থী শিবিরের একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে ইসরাইলি বিমান হামলায় ওই ১৪ জন নিহত হন। হামলার পর ভুক্তভোগীদের দেইর এল-বালাহের আল-আকসা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহত এসব ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে এসে এই ক্যাম্পের একটি ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অন্যদিকে সোমবার রাতে ইসরাইলি এই হামলায় নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে বলে একটি মেডিকেল সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৪ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।
এদিকে, লেবাননে আশঙ্কা বাড়ছে যে, সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং ইসরাইলের মধ্যে লড়াই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এমনকি সেখানকার সাধারণ মানুষও ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের সময় গাজায় বোমাবর্ষণের শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে। সাম্প্রতিক দিনগুলিতে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং ইসরাইল একে অপরের ভূখণ্ডের গভীরে আক্রমণ শুরু করেছে। আক্রমণগুলি প্রধানত সামরিক ফাঁড়ি এবং যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে, যদিও কিছুসংখ্যক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ক্রসফায়ারে আশঙ্কায় লেবাননের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে, অনেক লোক রাজধানী বৈরুতের শহরতলিতে হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিতে পালিয়েছে। আপাতত সেই এলাকা নিরাপদ।
‘আমি সত্যিই আশা করি যে, সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হবে না কারণ তখন এটি কখনই থামবে না,’ বৈরুতে তার ফোনের দোকান থেকে ৩০ বছর বয়সী এলি খুরি বলেছিলেন। ‘আমরা এটি (অর্থনৈতিকভাবে) পরিচালনা করতে সক্ষম হব না। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধও নেই এবং হাসপাতালগুলিতে সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।’ একটি অনলাইন পিটিশন, যাতে ইতিমধ্যে ৮,৯৩৯ জন স্বাক্ষর রয়েছে, লেবাননের সরকারকে যুদ্ধে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এটি সতর্ক করে দেয় যে, লেবানন অন্যথায় বিদেশী শক্তি দ্বারা লড়াই করা আরেকটি ‘প্রক্সি যুদ্ধের রণক্ষেত্র’ হয়ে উঠতে পারে। তবে কিছু বাসিন্দা আল জাজিরাকে বলেছে যে, তারা গাজায় ইসরাইলের হামলায় উচ্চ মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করে লেবাননকে আরও আক্রমণাত্মক ভঙ্গি নেয়াকে সমর্থন করবে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরাইলের চলমান বোমাবর্ষণে ৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে, ৩,১৯৫ জনই শিশু। বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে নিহত শিশুর মোট সংখ্যার চেয়ে এটি বেশি।
দায়ী পশ্চিমারা, বিশ্বে বিশৃঙ্খলা দরকার যুক্তরাষ্ট্রের : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান সংকটের পেছনে পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী একের পর এক বিশৃঙ্খলা দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মূলত টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইল গাজায় বোমাবর্ষণ করে চলেছে এবং এতে করে অবরুদ্ধ ওই ভূখণ্ডটিতে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য, সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের বৈঠকে দেয়া ভাষণে পুতিন বলেন, ‘মার্কিন অভিজাত শাসক ও তাদের ‘স্যাটেলাইট’ গাজার ফিলিস্তিনিদের হত্যার পেছনে এবং ইউক্রেন, আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার সংঘাতের পেছনে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমাগত বিশৃঙ্খলার প্রয়োজন। তাই (যুক্তরাষ্ট্র) সেই সব দেশকে অপমান করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যারা গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য জোর দেয় এবং একইসঙ্গে রক্তপাত বন্ধ করতে ও সংকট সমাধানে সত্যিকারের অবদান রাখতে প্রস্তুত।’
গাজার পরিস্থিতি ‘অমানবিক’ হয়ে পড়ছে : সমগ্র গাজার পরিস্থিতি ‘অমানবিক’ হয়ে উঠছে, ফিলিস্তিন শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কমিশনার জেনারেল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি লাখ লাখ মানুষের জীবন ও মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আয়োজনে গতকাল এক বৈঠকে ইউএনআরডব্লিউএ-এর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি গাজায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বর্ণনা করেছেন।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলি গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির জন্য নিরাপত্তা পরিষদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। বৈঠকে উপস্থিত বক্তারা বেসামরিক ব্যবস্থার ভাঙ্গন, বিশুদ্ধ পানির ক্ষতি এবং শিশুদের মৃত্যুর হার বিস্তারিত বর্ণনা করেন। সঙ্কটের বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পূর্ববর্তী চারটি খসড়া প্রস্তাবে রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছে। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের ১০ জন নির্বাচিত সদস্য - ব্রাজিল সহ বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি - একটি রেজোলিউশন তৈরি করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন যা পাঁচটি স্থায়ী সদস্য গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
লাজারিনি গাজার জনগণকে ভূখণ্ডের উত্তর থেকে দক্ষিণে বাস্তুচ্যুত করতে বাধ্য করার জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছেন - যেখানে তারা এখনও নিরাপদ নয়। ইসরাইলের হামলায় এখন অবধি ৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে জাতিসংঘের ৬৪ জন কর্মী রয়েছে বলে লাজারিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে সামির নামে জাতিসংঘের এক কর্মী, সেইসাথে সামিরের স্ত্রী ও আট সন্তানকে হত্যা করে ইসরাইলিরা।
গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে : জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক অধিবেশনে জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ একটি মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ‘এটি বলার সময় এসেছে যে, ভয়াবহ ধরণের একটি মানবিক বিপর্যয় জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে এবং গাজা উপত্যকায়, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে উন্মোচিত হচ্ছে,’ তিনি বলেছিলেন।
‘প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যার অর্ধেকই নারী ও শিশু,’ দূত উল্লেখ করেছেন। ২ হাজারেরও বেশি মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়ে গেছে, ২১ হাজারের বেশি মানুষ গুরুতর আহত এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১৬ লাখ, তিনি উল্লেখ করেছেন। উপরন্তু, নেবেনজিয়া সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে জাতিসংঘের কর্মীদের হতাহতের কথাও উল্লেখ করেছেন। ‘এই ভয়ানক পরিসংখ্যান প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে। আমরা সাইটে থাকা সমস্ত মানবিক কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ যারা চিকিৎসা সহ মৌলিক জিনিসপত্রের বিপর্যয়কর অভাবের পাশাপাশি তাদের জীবনের উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে,’ কূটনীতিক বলেন। সূত্র : গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা, তাস।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত : পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে বিজিবির কড়া প্রতিবাদ
নিকোলাস মাদুরোর তৃতীয় শপথ, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের আশঙ্কা
সুপার কাপ ফাইনালে বার্সা-রিয়াল মহারণ
কার সাথে সংসার করছেন জয়া?
২৪ বিপ্লবের শহীদদের মতো বিডিআরের নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
টানা চার ম্যাচে রোনালদোর গোল,নতুন বছর জয় দিয়ে শুরু নাসেরের
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র দেওয়া সম্ভব নয় : উপদেষ্টা মাহফুজ
টঙ্গীবাড়ীতে মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে জখম
জার্মানিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন
চীনে ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি
কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই
টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার
আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, প্রবল বাতাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ
কাতারের আমিরের উদ্দেশে ফেসবুকে যা লিখলেন তারেক রহমান
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি, মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত
নারী শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমে ভিডিও ধারণ, যুবক আটক
শেখ হাসিনার সাথে হত্যা মামলায় জড়িত পটুয়াখালীর ইটবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল আটক