শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল আশুলিয়া গাজীপুর
০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়েছে গাজীপুর। কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক বাজার এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় পোশাক শ্রমিকরা। এর মধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক বাজার এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে এবং মহাসড়কে ১০-১২টি যানবাহন ভাঙচুর করে বলে জানান কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খান।
এ সময়ে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শতশত শ্রমিক পুলিশকে ধাওয়া করে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে মৌচাক বাজার এলাকায় অবস্থিত কালিয়াকৈর থানাধীন পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থান নেয়। এ সময়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ফাঁড়িতে হামলা চালায়। ফাঁড়ির গেট, গ্লাস এবং সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে। এদিকে মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে আশুলিয়ায় তৃতীয় দিনের মতো সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক। এ ঘটনায় দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করছে পুলিশ। ফলে আশুলিয়ার প্রধান দ্ইু সড়কে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে সড়কের পাশের সমস্ত দোকানপাট ও শপিংমল। এছাড়া শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে অর্ধশতাধিক কারখানা ছুটি হয়ে যায়। সড়কে থানা পুলিশের পাশাপাশি শিল্প পুলিশ-১, আর্মড ব্যাটেলিয়ান, বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
গতকাল সকাল থেকে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের আশুলিয়ার ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও ঘোষবাগ এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকা শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
অপরদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর, পল্লী বিদ্যুৎ ও চন্দ্রা এলাকায় শ্রমিকরা অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা যানবাহন, হাসপাতাল, দোকানপাট ও লাসানিয়া হোটেল ভাঙচুর করে।
এর আগে উপজেলা সফিপুর এলাকায় তানহা হেলথকেয়ার নামে একটি হাসপাতলে ব্যাপক ভাঙচুর করে। পরে পাশে থাকা একটি পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়াও উপজেলার চন্দ্র এলাকায় ওয়ালটন কারখানার সামনে ওয়ালটনের একটি প্লাজায় শ্রমিকরা হামলা চালায়। এক পর্যায়ে প্লাজার বাহিরে দাঁড়ানো একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী জানান, সফিপুর এলাকায় লিডার গার্মেন্টসে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ওই পথে রওনা দেন। কিন্তু শ্রমিকরা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অবরোধ করে রাখে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী জানান, কয়েক হাজার শ্রমিক মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।
শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসের ২৩ অক্টোবর থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ও তেলিচালা এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে অবরোধ শুরু করে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শ্রমিক বিক্ষোভ গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী নাওজোর, ভোগরা, চান্দনা চৌরাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শ্রমিকরা মৌচাক ও তেলিচালা এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এছাড়া গাজীপুর মহানগরের চান্দরা চান্দনা চৌরাস্তায় এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা নানা ধরনের সেøাগান দেয়।
এদিকে, বিএনপির অবরোধের মধ্যে স্বল্প পরিমাণে যানবাহন চলাচল করলেও শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সেগুলো চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অপরদিকে সোমবার গাজীপুরের মহানগরীর কোনাবাড়ী, ভোগড়া, বাসন সড়ক, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ চলায় মঙ্গলবার অধিকাংশ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার সকালে কোনাবাড়ি এলাকায় দেখা গেছে, কোনাবাড়ী এলাকার অন্যতম বড় কারখানা তুসুকা গ্রুপের প্রধান ফটকে বড় একটি ব্যানার ঝুলছে। তাতে লেখা রয়েছে অনিবার্য কারণবশত কারখানার সব কার্যক্রম আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
একই এলাকার এম এম নেটওয়ার্ক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শুধু মঙ্গলবারের জন্য। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি কারখানার সামনে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার এক কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই খুলে দেয়া হবে।
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকার তুসুকা গ্রুপের নিটিং সেকশনের শ্রমিক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বেতন দেয়া হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই টাকায় আমাদের সংসার চলছে না। ঘরভাড়া দেয়ার পর যা থাকে তা দিয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছি। এখন আমাদের দাবি সর্বনিম্ন বেতন ২৩ হাজার টাকা দিতে হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বোর্ড নিয়ে সরকার কাজ করছে। এখনও সেটি চূড়ান্ত হয়নি। যখন মজুরি চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়া হবে তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিব সেটি মানব-কি মানব না।
কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে অভিযোগ করেন এই শ্রমিক নেতা।
গাজীপুরের বাসন থানার ওসি আবু সিদ্দিক বলেন, শ্রমিকরা বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে মিছিল করে। অধিকাংশ কারখানা বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের সংখ্যা কিছুটা কম। তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এদিকে, আশুলিয়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, থেমে থেমে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। এ ঘটনায় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তখন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে বিজিবি, পুলিশ, ডিবি পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পলাশবাড়ী এলাকার স্কাইলাইন কারখানার শ্রমিক আরিফুর রহমান বলেন, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে বহিরাগত ২০/২৫জন লোক লাঠিশোঠা হাতে তাদের কারখানায় প্রবেশ করে শ্রমিক পরিবহন ও ট্রাক ভাঙচুর শেষে আতংক সৃষ্টি করে চলে যায়। সে আরো জানায়, তাদের দেখে কারখানার শ্রমিক মনে হয়নি।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকেরা কারখানায় উপস্থিত হয়ে তাঁদের হাজিরা নিশ্চিত করার পরপরই কারখানা থেকে বের হয়ে পড়েন। এরপর তাঁরা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে। বাধা দিলে শ্রমিকেরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন।
পরে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকেরা বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পুলিশের ওপর থেমে থেমে হামলা করতে থাকেন।
দফায় দফায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের কারণে সড়কের পাশের সমস্ত দোকানপাট ও শপিংমলগুলো বন্ধ রয়েছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু ইনকিলাবকে বলেন, আন্দোলনের কারণে আশুলিয়ার ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, ঘোষবাগ ও পলাশবাড়ী এলাকার অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে।
ইউনিক এলাকার ব্যবসায়ী শাহজালাল মিয়া বলেন, আমরা সকাল বিকেল দোকান বসাই। গত তিন দিন ধরে সকাল থেকে আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকরা। তাদেরও ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে দোকানে ক্রেতারাও আসে না। আর টিয়ারগ্যাসে নাক মুখ জ্বলে। ফলে ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।
এদিকে, গতকাল বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে পলাশবাড়ী ও ইউনিক এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকেরা নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে কাঠের টুকরো ফেলে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। তখন পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, অধিকাংশ শ্রমিক শান্ত এবং নিরীহ। তারা কাজেও আসছে, অনেক কারখানায় কাজ চলছে। কিছু কিছু শ্রমিক উশৃঙ্খলতা প্রদর্শন করছে। তাদেরকে বিভিন্ন মহল থেকে ইন্দন দেয়া হচ্ছে, উস্কানো হচ্ছে, আমরা অলরেডি কিছু মহলের পরিচয় নিশ্চিত করেছি। উশৃঙ্খল যে শ্রমিক রয়েছে তাদেরকে এখান থেকে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছি। তারা যেন এখানে সহিংসতামূলক কার্যক্রমে লিপ্ত না হতে পারে আমরা সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এছাড়া কিছু কিছু কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আবার কিছু কিছু আংশিক চলছে বলেও জানান তিনি।
কালিয়াকৈরে কারখানাসহ মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সকাল থেকেই গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে দোকানপাট, হাসপাতাল ও লাসানিয়া হোটেল ও যানবাহন ভাঙচুর করেছেন বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকরা। এতে উত্তাল হয়ে ওঠে মহাসড়ক ও আশপাশের এলাকা। ফলে সকাল থেকেই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ভোগান্তিতে পড়ে স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন কর্মস্থলে যোগদানকারী লোকজন। জানা গেছে, গত ২২ অক্টোবর থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস, কোনাবাড়ী, তেলিরচালা, মৌচাক, সফিপুর, পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার বেশকিছু শিল্প-কারখানা শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল অষ্টম দিনেও সকাল থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সফিপুর এলাকায় পুলিশের সাথে শ্রমিকদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ধাওয়া পালটা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে সফিপুর এলাকায় একটি কারখানা অগ্নিসংযোগ ও তানহা হেলথ কেয়ার নামে একটি হাসপাতালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করেন ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
এসময় স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে রওনা দিলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দীর্ঘসময় অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থলে পৌছে ১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ডের কারণ তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। পরে পাশে থাকা ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়াও উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় ওয়ালটন কারখানার সামনে ওয়ালটনের একটি প্লাজায় শ্রমিকরা হামলা চালায়। এক পর্যায়ে ওই প্লাজাসহ বাহিরে দাঁড়ানো একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, সকাল থেকে মৌচাক, সফিপুর, পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় শ্রমিকদের আন্দোলনের খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশ- ২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, গাজীপুরের সফিপুর, মৌচাক, পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় শ্রমিক আন্দোলন চলছে। তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ভাঙচুর করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কাজ করছি।
মিরপুরে পোশাক শ্রমিক-বহিরাগত-পুলিশ ত্রিমুখী সংঘর্ষ : এদিকে গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুরে গার্মেন্ট শ্রমিক ও বহিরাগতদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় মিরপুর সাড়ে এগারো (পুরবী সিনেমা হল) সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে কয়েকশ’ শ্রমিক। একপর্যায়ে বহিরাগতদের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। এতে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের স্থানীয় দুটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইপিলিয়ন, ডেকো, কনকর্ড ও অ্যাপোলো নিটওয়্যারের কয়েকজন গার্মেন্ট শ্রমিকরা জানান, সকাল ৯টায় তারা কারখানায় কাজে যান। কারখানায় ঢোকার সময় বহিরাগত লোকজন তাদেরকে (শ্রমিক) কারখানা থেকে বের না হওয়ার হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখান। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। তারা রাস্তায় বের হয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে বহিরাগত লোকজন ও পুলিশ মিলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ওপর হামলা করে। হামলায় অন্তত শতাধিক গার্মেন্টস শ্রমিক আহত হয়। এর মধ্যে ১০-১৫ জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক।
এদিকে দুপুর ১২টায় ৩ শ্রমিক মারা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে গার্মেন্ট শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তারা সড়কে থাকা গাছের ডালপালা ভেঙে কয়েকটি গার্মেন্ট ভবন ও যানবাহন ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এসে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তাদের ওপর হামলার যথাযথ বিচার করার আশ্বাস দেন এ সংসদ সদস্য।
গার্মেন্ট শ্রমিক কাজল, হনুফা, রেশমা বলেন, সকালে যখন কারখানা ছুটি দেয়া হয় আমরা বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তায় বের হই। কিন্তু রাস্তায় বের হতেই অচেনা লোকজন শ্রমিকদের ওপর হামলা ও গুলি চালায়। এ ঘটনায় গার্মেন্ট মালিকদের ইন্ধন রয়েছে। বহিরাগতরা তাদের লোক। হামলায় কয়েকশ শ্রমিক আহত হন। এর মধ্যে ইপিলিয়ন ও কনকর্ড গার্মেন্টের ৩ শ্রমিক মারা যান বলে দাবি করেন শ্রমিকরা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কয়েকজন আহত হয়েছেন। কেউ মারা যায়নি। শ্রমিকদের দাবি দাওয়া পূরনের আশ্বাস দিয়েছি। এ ব্যাপারে গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। সকালে লাক্কু নামে এক সন্ত্রাসী গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর হামলা ও গুলি চালিয়েছে। পরে তারা পালিয়েছে।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা জানান, আগামী বছরের শুরুতে নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী তাদের বেতন ২৩ হাজার টাকা হওয়ার কথা। এ জন্য চলতি মাসে তাদের গ্রেড ঠিক করার কথা। কিন্তু মালিকপক্ষ গ্রেড পরিবর্তন ও বেতন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা (মালিক পক্ষ) আগের বেতন বহাল রেখেই গার্মেন্ট চালাতে চান।
রেশমা, চান, কালাম নামে কালশী ২২ তলা (স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ) গার্মেন্টসের কয়েকজন শ্রমিক জানান, বর্তমানে তারা ৮ হাজার টাকা বেতন পান। নতুন মজুরি অনুযায়ী তাদের বেতন ২৩ হাজার টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু মালিক পক্ষ বেতন বাড়িয়ে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা দিতে চান। গ্রেড পরিবর্তন করে তাদের এই বেতন বাড়াতে হবে। কিন্তু মালিকপক্ষ গ্রেড পরিবর্তনসহ নতুন মজুরি বাড়ানোর ব্যাপারে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। এ জন্য তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন বলেছেন, মিরপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনে নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে। জসিম উদ্দিন বলেন, সারা দেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে দুই একদিনের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত আসবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জার্মানিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন
চীনে ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি
কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই
টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার
আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, প্রবল বাতাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ
কাতারের আমিরের উদ্দেশে ফেসবুকে যা লিখলেন তারেক রহমান
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি, মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত
নারী শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমে ভিডিও ধারণ, যুবক আটক
শেখ হাসিনার সাথে হত্যা মামলায় জড়িত পটুয়াখালীর ইটবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল আটক
বেরোবিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
ঠাকুরগাঁওয়ে ইত্যাদি চিত্রায়ন অনুষ্ঠানে চেয়ার ভাঙচুর-মারামারি, অনুষ্ঠান স্থগিত
কেসিসির সাবেক কাউন্সিলর টিপু কক্সবাজারে খুন
লক্ষ্মীপুরে বিদেশি পিস্তলসহ গৃহবধূ আটক
ফটিকছড়িতে অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় কৃষককে পিটিয়ে হত্যা!
৭ ডিগ্রিতে নামল পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা
ম্যাচের আগে হঠাৎ বরখাস্ত এভারটন কোচ
চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের