উধাও হয়ে যাচ্ছে নথির গুরুত্বপূর্ণ কাগজ
০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৮ এএম

আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের টেবিল থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড। ফটোকপি হয়ে নথি চলে যাচ্ছে স্বার্থান্বেষীদের হাতে। কখনোবা নথি থেকে ফেলে দেয়া হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের রায়। দেয়া হচ্ছে ধামাচাপাও। ফলে ডায়েরি ও স্মারক নম্বর যুক্ত নথিও যথাসময়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে না কর্মকর্তাদের সামনে। ফলে ন্যায়সঙ্গত ও আইনানুগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছেন না কর্মকর্তারা। মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই দফতরের ভৌতিক এই তৎপরতায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন অনেক ভুক্তভোগী। অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ডেস্কে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ বিশেষের হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে এই অপকর্ম। ফাইল থেকে গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠা বিনষ্ট করে ফেলছে। কখনওবা সরিয়ে ফেলছে। অথবা এক নথির রেকর্ড লুকিয়ে রাখছে অন্য নথির ভেতর। এতে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নথি নং-৬৯১। তারিখ ০৪/১০/২০২৩। বিচার-৭/২এন-২০/৭৬। এটি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (রেজিস্ট্রেশন) আবু সালেহ মো: সালাহউদ্দিন খাঁনের সেকশনের একটি নথি। এটি একজন নিকাহ রেজিস্ট্রারের অধিক্ষেত্রে ৭ কিলোমিটার দূরবর্তী আরেক ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রারকে সংযুক্তিকরণ সংক্রান্ত নথি এটি। বিদ্যমান নিকাহ রেজিস্ট্রার আব্দুল মোতালেবের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের স্ট্যাটাসকো (সিভিল পিটিশন নং-১৬৬/২০১৯, তারিখ-২৪/০৩/২০১৯) রয়েছে। স্ট্যাটাসকোতে ইতঃপূর্বে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু আদশের কপি ফেলে দিয়ে নথিটি প্রথম উপস্থাপন করা হয় মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (প্রশাসন-২) শেখ গোলাম মাহবুবের টেবিলে। কিন্তু অসম্পূর্ণ হওয়ায় ফাইলটি তিনি নিচে ফেরত পাঠিয়ে দেন। পরে ভুক্তভোগী আব্দুল মোতালেব তার পক্ষে স্ট্যাটাসকো রয়েছে-মর্মে কয়েকবার দরখাস্ত করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একাধিকার আবেদন করেন। সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর তিনি স্ট্যাটাসকো’র কাগজসহ সচিব বরাবর আরেকটি আবেদন (ডাইরি নং-৫০৯৩) দেন। এতে কাজ না হওয়ায় সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর যুগ্ম-সচিব বরাবর আরেকটি আবেদন (ডাইরি নং-১২০, তারিখ ২৬/০৯/২০২৩) করেন। কিন্তু সিনিয়র সহকারী সচিব, উপ-সচিবের টেবিল হয়ে পূর্ণাঙ্গ নথিটি অদ্যাবধি যুগ্ম-সচিব (প্রশাসন-২) এর টেবিলে পৌঁছেনি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অধীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি ওয়ার্ডে ১৭ জন কাজী রয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন সচিব বরাবর একটি অভিযোগ দেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। গত ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগটি রিসিভ করে মন্ত্রণালয়। কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জানা গেছে, আশরাফউদ্দিন ভূইয়া ওরফে সায়েম নামক এ বিতর্কিত নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে পিও ফয়সাল আবেদনটি গায়েব করে দেন।
২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর মাতুয়াইল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মো: মাহবুবুর রহমান ২০১৭ সাল থেকে অস্থায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তার লাইসেন্সটি স্থায়ীকরণের জন্য সচিব বরাবর আবেদন দিয়েছিলেন। দুই বছর হতে চললেও আবেদনটির কোনো সুরাহা হয়নি। মোটা অঙ্কের নজরানা না দেয়ায় ফয়সাল আবেদনটি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে।
নিকাহ রেজিস্ট্রি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টের একটি আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে (নং-২৯২৮/২০২৩) আদেশ নেন নিকাহ রেজিস্ট্রার আবুল কাশেম মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ। আপিল বিভাগের আদেশযুক্ত করে আদেশানুগ ব্যবস্থা নিতে সচিব বরাবর আবেদন করেন তিনি। কিন্তু উপ-সচিব আবু সালেহ মো: সালাহউদ্দিন খাঁ’র অদৃশ্য ইশরায় এ আবেদনটিও ধামাচাপা দিয়ে রাখেন পিও ফয়সাল। এ রকম বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে উল্লেখ করার মতো।
জানা গেছে, উপ-সচিব (নিবন্ধন)’র ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো: ফয়সালের নেতৃত্বে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড ফেলে দেয়ার কাজটি করছে। স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির হয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই কাজ করছেন তিনি। এতে অনেক ভুক্তভোগীর সর্বনাশ হলেও যার হয়ে তিনি কাজ করছেন উদ্ধার হচ্ছে তার স্বার্থ। বিনিময়ে পকেট ভারী হচ্ছে নিজের। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ফয়সাল প্রায় ৮ বছর রয়েছেন একই দফতরে। এই সুবাধে কোনো নথিতে কার কি স্বার্থ রয়েছে সবই তার নখদর্পনে। বিশেষত নিকাহ রেজিস্ট্রারদের কোন ফাইল উপরে উঠবে, কোনটা নিচে নামবে, কোনটা উপরে ওঠানো হবে না-এসব সিদ্ধান্ত নেন ফয়সাল। নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ফেলে দেয়া, কাগজ লুকিয়ে রাখা, কিংবা জাল কাগজ নথিতে ঢুকিয়ে রাখেন তিনি। এর ফলে মামলা মোকদ্দমাসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত নিকাহ রেজিস্ট্রারগণ তার কাছে জিম্মি। তাকে মোটা অঙ্কের নজরানা না দিলে ফাইল চলে না। পিও ফয়সালই যেন এখানে শেষ কথা। এ কারণে আইন মন্ত্রণালয়ে নিম্নতম পদে চাকরি করলেও তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। এই চক্রের দুর্নীতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন অনেকেই অবহিত নন। দুর্নীতিবাজ এ চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তিতে ফেলে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিলেও এ বিষয়ে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, গুটিকয়েক ব্যক্তির কারণে পুরো আইন মন্ত্রণালয়ের ভাব-মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ফেলে দেয়া, নথি ধামাচাপা, দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছচারিতার বিষয়ে পিও মো: ফয়সালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় গতকাল সোমবার। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য দুপুর সোয়া ১ টায় কল করা হয়। এসএমএস পাঠানো হয়। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার কোনো সাড়া মেলেনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন

পুঁজিবাজারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চান বিএমবিএ

ক্রিলিক একটি পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডারে পরিণত হবে -এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী

হাইকোর্টের আদেশ চেম্বারে স্থগিত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ

পুলিশ কোনো কিলার ফোর্স হতে পারে না : আইজিপি

হাসিনার ভয়ে যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল তারা এখন সংস্কারের তালিম দিচ্ছে : আমীর খসরু

সিএজি কার্যালয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন

পদ্মা সেতু দিয়ে কি নদীর ক্ষতি করছেন না, প্রশ্ন মৎস্য উপদেষ্টার

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের সাঁড়াশি অভিযান