মন্ত্রী-এমপিরা সুবিধা পাবে না
১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম
সংবিধান কিংবা আইনে স্পষ্ট কিছু না থাকলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চর্চা অনুযায়ী তফসিলের পর পূর্ববর্তী সরকারই বহাল থাকবে, যা নির্বাচনকালীন বা অন্তর্বতীকালীন সরকার হিসেবে বিবেচিত হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হওয়ার পর এখন থেকে জনপ্রশাসনের স্বাভাবিক কাজকর্ম আগের মতোই চলবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। আগের দুই জাতীয় নির্বাচনের মতো এবার মন্ত্রিসভা ছোট করা হয়নি।
তবে সরকারের যেসব মন্ত্রী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা কিছু কমবে। নির্বাচনী প্রচারকাজে তারা সরকারি প্রটোকল পাবেন না। তবে গতকাল বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সমন্বয় সভা থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া তফসিল ঘোষণা হওয়ায় এখন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষেত্রে ইসির অনুমোদন নিতে হবে।
তবে সরকারের যেসব মন্ত্রী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা কিছু কমবে। নির্বাচনী প্রচারকাজে তারা সরকারি প্রটোকল পাবেন না। নিজ মন্ত্রণালয় ও অন্য মন্ত্রণালয়ের সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারবেন না। কোনো প্রকল্পের উদ্বোধনী ফলকও নির্বাচনের প্রার্থী হওয়া মন্ত্রীরা উন্মোচন করতে পারবেন না। তারা সরকারি ডাকবাংলো, সার্কিট হাউস বা কোনো সরকারি কার্যালয়কে কোনো দল ও প্রার্থীর পক্ষে ব্যবহার করতে পারবেন না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিসহ সরকারি সুবিধাভোগীদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচনী আচরণবিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত ধারা ১৪-তে বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাঁর নিজের বা অন্যদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে সরকারি যানবাহন, প্রচারযন্ত্র বা অন্য কোনো সুবিধা নিতে পারবেন না।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, সংবিধানে কোথাও নির্বাচনকালীন সরকার বলে কোনো কিছু নেই। স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী সরকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত বর্তমান সরকারের অধীনে সব সরকারি কর্মকা- পরিচালিত হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের স্বাভাবিক কাজকর্ম যথারীতি চলবে। সব বিষয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ, নির্বাচনী আচরণবিধি, সরকারের রুলস অব বিজনেস, ওয়ারেন্ট প্রিসিডেন্স পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করা হবে। এগুলো নিয়ে কোনো জটিলতা নেই।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নিয়ে একটি ছোট আকারে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আগের সরকারই বহাল ছিল। কয়েক দিন আগে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছিলেন, দ্বাদশ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২’ অনুসারে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তপশিল ঘোষণার পরপরই শুরু হয়েছে ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’। নির্বাচন শেষে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত এই ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’ বহাল থাকবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৫(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো দায়িত্ব পালনে বা সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারবে। ৪৪(ঙ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল ঘোষণার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া বদলি করা যাবে না। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন বোধে যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির ব্যবস্থা নিতে পারবে। নির্বাচন কমিশন এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১’ প্রয়োগ করতে পারবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, গতকাল রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল তপশিল ঘোষণার পর থেকে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়েছে। ১৫ নভেম্বর রাত থেকে নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত এ বিধিমালা কার্যকর থাকবে। এ সময়ে ওই বিধিমালা অনুযায়ী সভা-সমাবেশ, প্রচার, কোনো প্রতিষ্ঠানে চাঁদা ও অনুদান দেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আচরণবিধিমালা লঙ্ঘনে জড়িত ব্যক্তির ছয় মাসের কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত হওয়ার বিধান রয়েছে। আর কোনো রাজনৈতিক দল এ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা অর্থদ-ে দ-িত হবে। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধান ও আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশন এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যাতে ক্ষমতাসীনরা অসন্তুষ্ট হতে পারে। কয়েকটি ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম ঘটেছে।
নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের মাধ্যমে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম বলেন, তপশিল ঘোষণার পর আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চাইলে প্রশাসনের মধ্যেও রদবদল আনতে পারে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বদলি করার প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশন লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব সে বদলি কার্যকর করতে হবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী যদি সরকার কাজ না করে, তাহলে আইনের বরখেলাপ হবে। প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা ইসির একটি বড় ক্ষমতা। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘন করেন, সে ক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা আছে, একজন রিটার্নিং অফিসারকে নির্বাচন কমিশন যেভাবে দায়িত্ব দেবে, তিনি সে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য থাকবেন। রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও বাতিল করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি বাতিল করতে পারে বলে জানান সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন।
নির্বাচনের তপশিলের পর যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার অভিযান ও পুলিশি কার্যক্রমের ওপর অনেকে রাখছেন নজর। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী, নাশকতায় কেউ জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তপশিল ঘোষণার পর আইনানুগভাবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই বলে মন্তব্য করেন তারা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত-১, আহত-৩
জকিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত
ঝিনাইদহে পুকুর থেকে মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ উদ্ধার, জড়িত সন্দেহে আটক-১
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে ক্ষমা না চাইলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার
বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান
বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল
মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ
সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন
ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত
যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা
চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা
২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম
কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক
বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য
যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের
আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল